স্ত্রীকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিলেন স্বামী

প্রথমে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, আর তার জেরেই গ্যালোপিং ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলেন স্ত্রী। আর সম্ভবত স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়েই প্রাণ গেল স্বামীরও। মর্মান্তিক এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল হাওড়ার বেলুড় স্টেশন।

মৃত ওই দম্পতির নাম বিশ্বজিৎ সাহা (৪২) এবং সুষমা সাহা (৩৬)। তাঁরা হুগলির শ্যাওড়াফুলির বাসিন্দা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেলুড় স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে মোবাইলে উত্তেজিতভাবে কথা বলতে বলতে পায়চারি করছিলেন বিশ্বজিৎ। এমন সময়ে তাঁর স্ত্রী সুষমা

সেখানে আসেন। স্ত্রীকে দেখা মাত্রই বিশ্বজিৎ ফোনে কথা বলা বন্ধ করে দেন। সুষমা এসে স্বামীর হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেন। এর পরে দু’জনের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ঝগড়া চরমে পৌঁছয়। ঝগড়া চলার মাঝে দু’জনে গিয়ে একটি বেঞ্চে বসে পড়েন। তখন বিশ্বজিৎবাবু তাঁর স্ত্রীকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেন।

এর মধ্যেই হাওড়া বর্ধমান গ্যালোপিং লোকাল ২ নম্বর লাইন দিয়ে আসার ঘোষণা হয়। যাত্রীরা স্টেশনের পাশ থেকে সরেও দাঁড়ান। আচমকাই প্ল্যাটফর্মের ধারে ছুটে আসেন সুষমা। পিছন পিছন চলে আসেন বিশ্বজিৎবাবুও। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন ওই গৃহবধূ।

প্রত্যাক্ষদর্শীদের কয়েকজনের দাবি, শেষ মুহূর্তে স্ত্রীর হাত ধরে সরাতে গিয়ে লাইনে পড়ে যান বিশ্বজিৎবাবুও। মুহূর্তের মধ্যে ট্রেনের চাকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দম্পতির দেহ। প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে দেহ দু’টি। স্ত্রীকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিলেন স্বামীও।

আচমকা এই ঘটনায় হকচকিয়ে যান স্টেশনে থাকা যাত্রীরা। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া দেহ চোখের সামনে দেখে অসুস্থ বোধ করেন অনেকেই। এমনকী চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে থাকা এক যুবক সংজ্ঞাও হারান।

কিন্তু কেন এইভাবে প্রাণ দিলেন দম্পতি? রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বজিৎবাবু লিলুয়ার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। সুষমাদেবী উত্তরপাড়ার একটি নার্সিংহোমে চাকরি করতেন। কয়েকদিন ধরেই দু’জনের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। বুধবার যা চরমে পৌঁছয়। যদিও সুষমাদেবীর ভাই দু’জনের মধ্যে মিটমাট করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

কিন্তু তার আগেই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সুষমাদেবী, যার জেরেই সম্ভবত প্রাণ গেল বিশ্বজিৎবাবুরও। যদিও স্ত্রীর সঙ্গে তিনিও আত্মহত্যাই করতে গিয়েছিলেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সুষমাদেবীর ভাই এবং বিশ্বজিৎবাবুর সহকর্মীরাও ঘটনাস্থলে আসেন।

জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির এক ছেলে রয়েছে। সে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বর্তমানে তার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও চলছে। বাবা-মা’র মৃত্যুর খবর প্রথমে তাকে জানানো হয়নি। বাবা-মা’র কলহের জেরে শৈশবেই অনাথ হয়ে গেল এই কিশোর।-এবেলা



মন্তব্য চালু নেই