স্কুলের মাঠেই বসেছে তামাকের হাট
পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন স্কুলে যাবার সময় বাবাকে বলেন, বাবা আমার জন্য একটি চশমা ও একটি রুমাল আনতে হবে। আমারা স্কুলে যেতে পারি না। গেলেই স্কুলে সামনে পড়ে থাকে বিভিন্ন যায়গা থেকে আসা তামাক গন্ধে ধম বন্ধ হয়ে আসে আর ছুটির সময় বাড়িতে ফিরার সময় বিকাল হতেই দেখি বিদ্যালয়ের মাঠেই বসেছে তামাকের হাট। সাবিনা ইয়াসমিন সাপ্টিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ।
জেলার আদিতমারী উপজেলার তিনটি বিদ্যালয় মাঠে ঘুরে দেখাগেছে, সাপ্টিবাড়ি বহু-মুখি উচ্চ বিদ্যালয়, সাপ্টিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লালমনিরহাট সম্বন্বিত দৃষ্ঠিপ্রতিবন্ধি বিদ্যালয় এসব মাঠে স্কুল চলাকলিন সময় মাঠে দেখা যায় স্কুল মাঠেই বসেছে তামাকের হাট ।
বৃস্পতিবার ও সোমবার ও শুক্রবার সপ্তাহের তিন দিন তামাক হাট বসে বিদ্যালয় মাঠে। শুক্রবার ছুটির দিন হলেও সোমবার ও বৃস্পতিবার তামাকের বিরক্তিকর গন্ধে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিদ্যালয় মাঠ জুড়ে তামাক হাট বসানোর কারনে খেলাধুলাই শুধু নয় শারীরিক কসরতও করতে পারছে না প্রতিষ্ঠান তিনটির কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যার ফলে এসব শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশেও চরম ভাবে বাঁধা গ্রস্থ হচ্ছে। ভয়াবহ ক্ষতির শিকার দৃষ্ঠি প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীরা। তাদের বিদ্যালয় ও আবাসিক মাঠেই বসে এ হাট।
এ ছাড়াও তামাক পাতার বিরক্তিকর গন্ধে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারনে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের সোমবার বিদ্যালয় পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
সাপ্টিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়নব খাতুন, রেজিয়া, উত্তরবাংলাকে জানান, বিদ্যালয় মাঠে তামাক হাট বসানোর কারনে শুধু খেলাধুলাই বন্ধ হয় নি, তামাকের ধুলোর কারনে চোখও জ্বালা করে। এ ছাড়াও তামাকের বিরক্তিকর গন্ধে ক্লাশে থাকতেও ইচ্ছে করে না। তাদের দাবি বিদ্যালয় মাঠ চাই খেলাধুলার জন্য সর্বদাই উন্মুক্ত আর বিদ্যালয়ের পরিবেশ চাই শিক্ষা বান্ধব।
সাপ্টিবাড়ি বহু মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিপু, সোহেল, সাব্বির, তুনা, রুমা, শাকিল উত্তরবাংলাকে জানান, এমনটা কখনই হয় নি। এ বছর সভাপতির ছেলে হাটের ইজারা নেয়ায় এমনটা হয়েছে। হাট তুলে দিতে প্রধান শিক্ষককে বারংবার বলার পরও কোন কাজ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাপ্টিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের ছেলে জুয়েল ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৪টাকায় সাপ্টিবাড়ি হাটের ইজারা নিয়েছেন। হাটের নির্ধারিত স্থানে তামাক হাট না বসিয়ে ক্ষমতার দাফটে বিদ্যালয় মাঠেই বসিয়েছেন তামাক হাট। শুধু তামাক হাটেই নয় বসে ধান,পশু-পাখি, বাঁশ, গম, ভুট্টাসহ বেশ কিছু পন্যের পসরা। সকাল ৭টা থেকে দুপুর দেড়টা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই সিফটে হাট বসে বিদ্যালয়টির মাঠে।
বিগত বছর গুলোতে সাপ্টিবাড়ি হাটের নির্ধারিত স্থানেই বসানো হতো তামাক হাট। কিন্তু সভাপতি’র ছেলেই ইজারাদার তাই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই তামাক হাট চলে যায় বিদ্যালয় মাঠে এমনটা অভিযোগ স্থানীয় অভিভাবকদের।
সাপ্টিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইচ উদ্দিন উত্তরবাংলাকে জানান, উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক মিলে বিদ্যালয় মাঠে হাট বসিয়ে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট করছেন। কোমল মতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া পরিবেশ ফিরানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সাপ্টিবাড়ি বহু মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মোঃ তায়েজ উদ্দিন তাজু তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে উত্তরবাংলাকে জানান, বিদ্যালয় মাঠে তামাক হাট না বসানোর ব্যাপারে মিটিং আহবান করা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটি মিটিংয়ে যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জহুরুল ইসলাম উত্তরবাংলাকে জানান, বিদ্যালয় মাঠে তামাক হাটের ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তারা(ম্যানেজিং কমিটি) ব্যবস্থা না নিলে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য চালু নেই