সেমির আগে ‘অনেক চিন্তা’

ইতিহাসের মুখে দাঁড়িয়ে স্বস্তির ছোঁয়া মনে লাগতেই পারে। বাংলাদেশ যুব দলের সেই স্বস্তি বাড়িয়ে দেয়ার কথা বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলো। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল মিরাজরা। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ তারাই। আগামীকাল সকাল নয়টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। তার আগে বাংলাদেশের চিন্তার জায়গা কিন্তু অনেক। তার কারণ বিশ্বকাপের আগের বাংলাদেশ আর বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পরের বাংলাদেশে বেশ পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। সেই সব পার্থক্যের বিশ্লেষণ করেছেন অমৃত মলঙ্গী:

যে কারণে হারতে পারে বাংলাদেশ: শুরুতে নেতিবাচক কথা! অমঙ্গল হবে না তো? প্রশ্নই ওঠে না। যুদ্ধের আগে ভুলগুলো চোখে চোখে রাখলে, জয়ের পথ খুঁজে পাওয়াটা সহজ হয়। এটা নীতিকথা নয়। প্রকৃতির নিয়ম। জীবনের প্রত্যেক দৃষ্টিকোণেও এই নিয়ম বলবত থাকে। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং লাইনআপ শতভাগ ছন্দে নেই। বিশেষ করে টপঅর্ডাররা। সেমি পর্যন্ত আসতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে মিডল অর্ডার এবং লোয়ার অর্ডার। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুবাদের ব্যাটিং কিন্তু এতটা ‘একক নির্ভর’ নয়। টপ-মিডল-লোয়ার সবাই মোটামুটি পারফর্ম করছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক নাজমুল হোসেন শান্ত, ২০৮। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান স্প্রিঙ্গারের, ২২০। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানেও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান জয়রাজ শেখের, ১৩১। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯১, গিডরন পোপির। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যারা সফল এমন ৫ ব্যাটসম্যানের মোট রান ৫৮২। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঢের এগিয়ে, ৭৮৫! ব্যাটিংয়ের এমন পার্থক্যই কিন্তু ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকতেই হবে। টপ অর্ডারকে যে কোনো মূল্যে ছন্দে ফিরতে হবে।

চিন্তার নাম বোলিংও: বাংলাদেশের বড় শক্তির জায়গা স্পিন। কিন্তু সেই স্পিনাররাও শতভাগ ছন্দে নেই। ব্যাটিংয়ের মতো এখানেও ক্যারিবিয় যুবারা এগিয়ে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেট শিকারি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, নয়টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোসেফও নয়টি উইকেট দখল করেছেন কিন্তু তার ইকোনমি রেট সাইফুদ্দিনের চেয়ে অনেক ভাল। বাংলাদেশের ৬ জন বোলার এখন পর্যন্ত উইকেটের দেখা পেয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে এক্ষেত্রে বেশি অপশন আছে। তাদের মোট আট বোলার উইকেট পেয়েছেন।

যে কারণে জিততে পারে বাংলাদেশ: বাংলাদেশ যে সব জায়গায় পিছিয়ে তা কিন্তু নয়। এবার আলোচনা করা যাক মিরাজদের স্বস্তির জায়গা নিয়ে।

ফিল্ডিং দিয়ে প্রতিটি ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে ছেলেরা। শেষ ম্যাচে নেপালের চার ব্যাটসম্যানকে রানআউট করা তারই প্রমাণ। এছাড়া ক্যাচ মিসের সংখ্যা নেই বললেই চলে। সিঙ্গেলও আটকানো যাচ্ছে ভালোভাবে। এই ছন্দ কালকেও ধরে রাখতে পারলে লারার দেশের ছেলেরা বিপাকে পড়বে, তা কিন্তু বলাই যায়।

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সার্বিক চিত্র খারাপ হলেও যারা ছন্দে আছেন, তারা স্বস্তি এনে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের গড় অনেক ভাল। কেননা শান্ত, মিরাজ কয়েকটি ম্যাচে অপরাজিত থেকেছেন। বাংলাদেশর শীর্ষ রান সংগ্রহকারী শান্তর গড় ১০৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্প্রিঙ্গারের ৫৫।

বাংলাদেশের জাকির হাসানের গড়ও চোখ কপালে তোলার মতো, ৯৪। পঞ্চাশের উপরে গড় অধিনায়ক মিরাজেরও, ৬৪.৫০। ক্যারিবিয়দের মধ্যে এক স্প্রিঙ্গারের ছাড়া আর কারো গড় পঞ্চাশে পৌঁছায়নি।

বোলিংয়ের একটি জায়গায়ও এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সফল ছয় বোলার উইকেট শিকার করেছেন, ৩৩টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আটজন মিলে নিয়েছেন ৩০টি।

দুই দলের এইসব পরিসংখ্যান কিন্তু নির্দিষ্ট একটি বার্তা দিচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকজনের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলগতভাবে এই পর্যন্ত এসেছে।

দিনশেষে খেলা মানে জয়ের হিসাব। সেই জয়টা কয়জন মিলে আনলেন, সেটা কোনো আলোচনায় ঠাঁই পায় না। তোলা থাকে পরিসংখ্যানের খেরোখাতায়। ম্যাচের আগের এই হিসাবটা হোক তেমনই এক খেরোখাতা। আপনি নিশ্চয়ই চাইছেন-তবে তাই হোক!



মন্তব্য চালু নেই