সেনাবাহিনী নিয়ে মান্নার কথোপকথন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে?
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ২২ জানুয়ারি সেনাবাহিনী নিয়ে ভাইবারে অজ্ঞাত কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন তার জট খুলতে শুরু করেছে। অজ্ঞাত ওই প্রবাসী এতদিন অজ্ঞাত থাকলেও এবার তার নাম জানা গেছে। দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে আনার পর মান্না ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি সম্পর্কে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ(ডিবি)।
ডিবি’র প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন,‘মাহমুদুর রহমান মান্না জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন ২২ জানুয়ারি সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি শাহাদাত নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। শাহাদাত এখন অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ব্যবসায়ী। তবে মালয়েশিয়া তার সেকেন্ড হোম। শাহদাতের মালয়েশিয়ায় ব্যবসা এবং বাড়ি আছে।’
তবে রিমান্ডে মান্না দাবি করেছেন, ‘শাহাদাতের সঙ্গে তাঁর কখনোই দেখা হয়নি। টেলিফোনেই পরিচয়। ২২ জানুয়ারির আগেও তিনি শাহাদাতের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রথম কথা হয় তিন বছর আগে।’ জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, শাহাদাত নিজ থেকেই তাঁকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ এবং ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে তার জড়িত থাকার কথা জানায়। মান্না ডিবিকে জানিয়েছেন, শাহাদাতের বাড়ি কেরানীগঞ্জে। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ৯০ এর দশকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভাল পদ পেতে ব্যর্থ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দেয়। এরপর সে দেশের বাইরে চলে যায় এবং সেখানে ব্যবসা শুরু করে। মান্নার দাবি, কয়েকবার কথা বলার সময় তিনি শাহাদাতের কাছ থেকেই এসব তথ্য জেনেছেন।
যুগ্ম কমিশনার জানান,‘ মান্নার ভাষ্যমতে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা তাঁর সঙ্গে ২২ জানুয়ারি অষ্ট্রেলিয়া থেকে ভাইবারে কথা বলেন। তবে সে মালয়েশিয়াও আসে মাঝে মাঝে।’ মনিরুল ইসলাম জানান, ‘শাহাদাতের ব্যাপারে মান্না এখনো পরিপূর্ণ তথ্য দেয়নি। আমাদের মনে হয় সে কিছু তথ্য লুকোচ্ছে। আমরা তাঁকে নিবিঢ় জিজ্ঞাবাদ করে পুরো তথ্য জানার চেষ্টা করছি। আর সে ৯০ এর দশকের সাবেক ছাত্রলীগ নেতার যে নাম বলছে তাও আমরা যাচাই বাছাই করে দেখছি।’ তিনি জানান, ‘এই ঘটনায় সংবাদ মাধ্যমে মশিউর রহমান মামুন নামে যে একজন ব্যবসায়ীকে আটকের কথা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়। এই মামলায় এখন পর্যন্ত মাহমুদুর মান্না ছাড়া আর কেউ আটক নেই।’
এদিকে ঢাকায় মশিউর রহমান মামুনের পরিবারের সঙ্গে প্রিয়.কমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। মামুনের বড় বোন বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’ মামুন আটক হয়েছেন কী না বা তিনি এই ঘটনায় জাড়িত কীনা জানেতে চাইলে তিনি একই জবাব দেন।
তবে তাদের এক আত্মীয় জানান, ‘মামুন একজন ব্যবসায়ী এবং সপ্তাহ খানেক ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।’
আদালতে দেয়া গুলশানের থানার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টার আগে যেকোন সময় মাহমুদুর রহমান মান্না তাঁর গুলশানের বাসা থেকে ভাইবারের মাধ্যমে অজ্ঞাত এক প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। মান্না ওই কথোপকথনে সেনাবাহিনীর সাবেক এবং বর্তমান সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ দেখান। জবাবে অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনাকে জিওসি লেভেল থেকে কল করাব, না আরেকটু সিনিয়র।’ জবাবে মান্না বলেন,‘জুনিয়র-সিনিয়র তো একটা ব্যাপার আছে, তার চাইতে বড় কথা হল ইফেকটিভ যারা। এ্যান্ড হু আন্ডারস্ট্যান্ড হু নোজ, এরকম হলে ভাল। মানে যার সাথে শেয়ার করা যাবে। যিনি আমাকে এনলাইটেন করতে পারবেন। মে বি আমিও তাকে বুঝতে পারব, বুঝাতে পারব।’
অজ্ঞাতনামা প্রবাসী বিগত ওয়ান ইলেভেনের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল বলে জানায়। মাহমুদুর রহমামন মান্না সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার দেখালে , অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তার (মান্না) সঙ্গে সেনাবাহিনীর সাবেক এবং বর্তমান লে. জেনারেলসহ এমনকি সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করছেন বলে জানায়। অজ্ঞাতনামা প্রবাসী সেনাবাহিনীর ১৯ জন সিনিয়র কর্মকর্তার মধ্যে ১২ জনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সম্পর্কেও কথা জানায়। সে মান্নাকে বলে, ‘ইউ উইল রিসিভ এ কল বাই টুমরো টুয়েলভ।’
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই কথোকথনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে উস্কে দিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয়।’
মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক করা হয় ২৪ জানুয়ারি ভোররাতে। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গেও তাঁর আরেকটি ভাইবার কথোপকথন প্রকাশ পেয়েছে একই সময়ে। দুটি ঘটনায়ই আলাদা মামলা হয়েছে। মান্না এখন দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছেন।
মন্তব্য চালু নেই