সেদিন গৌরীকে খুঁজে পেয়ে খুব কেঁদেছিল শাহরুখ

ছেলেটি তখন ১৯, মেয়ে পেরিয়েছে ১৪টি বসন্ত। গল্পটা ১৯৮৪ সালের। স্কুলজীবনে এক প্রতিষ্ঠানে ওরা পড়ত। তবে পরিচয়টা তখনো হয়নি। হেসেখেলে দুই ভুবনের দুই বাসিন্দার সময়টা কাটছিল বেশ।

এক অনুষ্ঠানে দেখা আবার। বয়সটা তখন প্রথম দেখায় ভালো লাগার—হলোও তাই। গৌরীকে দেখে মনে ধরল শাহরুখের। কিন্তু সরাসরি প্রস্তাব দেওয়া কি সাহসে কুলায়! এক বন্ধুর মারফত প্রস্তাব পাঠালেন শাহরুখ—তোমার সঙ্গে একটু নাচব! অভিনেতা অনুপম খের সঞ্চালিত একটি অনুষ্ঠানে শাহরুখ বলেন, ‘গৌরী হচ্ছেন প্রথম নারী, যার সঙ্গে আমি নাচের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ফোন নম্বর চেয়েছিলাম।’

নাহ, হতাশ করেছিলেন গৌরী। শাহরুখের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। শুধু তা–ই নয়, বানিয়ে বানিয়ে সেদিন গৌরী বলেছিলেন, তিনি তার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, গৌরীর অপেক্ষাটি ভাইয়ের জন্য। কম যান না শাহরুখও, গৌরীকে জানান, তিনিও তাঁর ভাই হতে চান। এতে কাজ হয়। এগিয়ে আসেন গৌরী।

কন্যা রাজি হলেই তো আর সব সমস্যার সমাধান হয় না। নামের পাশে ‘খান’ আছে শাহরুখের। বেচারি গৌরীর বাবা ব্রাহ্মণ। দুই মেরুতে অবস্থান। নাটক–সিনেমায় যেমন হয় আর কি। গৌরীর বাবা, ভাই রীতিমতো ভিলেনের ভূমিকায়।

তাই বলে থেমে থাকেনি প্রেম। লুকিয়ে দেখা করা, ঘোরাফেরা, পানি পুরি (ফুচকা) খাওয়া—সবই চলতে থাকে। একদিন তো পরিচয় গোপন করে গৌরীদের বাড়ির এক অনুষ্ঠানেও হাজির হয়েছিলেন শাহরুখ! এই করে কেটে যায় পাঁচটি বছর।

একটু বেশিই ভালোবাসতেন শাহরুখ। হয়তো এ কারণেই বাড়তি হুকুমদারি চালাতেন। এটা করা যাবে না, ওখানে যাওয়া যাবে না, ওর সঙ্গে কিসের এত কথা—এমন চোখরাঙানো চলত নিয়মিত। এ কারণে সব সময় খুনসুটি চলত। একদিন ভারি চটে যান গৌরী। কোনো কিছু না বলে বন্ধুদের সঙ্গে মুম্বাই চলে যান। তখন তো আর এমন মোবাইলের যুগ ছিল না। উপায় না দেখে শেষমেশ গৌরীর মাকে সব খুলে বলেন।

প্রথমে একটু খেপে গেলেও একটা সময় মন গলে। বরং শাহরুখের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলেন, খুঁজে নিয়ে আসো গৌরীকে কিন্তু মুম্বাই কি আর চাট্টিখানি কথা? এত বড় শহর! গৌরীর কোনো বান্ধবীর ঠিকানাও জানা নেই। এমন সময় হঠাৎ মাথায় এল, গৌরী সমুদ্র ভালোবাসে। দেখা যাক, সমুদ্রের পাড়ে কোথাও পাওয়া যায় কি না। যেই ভাবনা, সেই কাজ। এক বিকেলে সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে হাঁটতে ঠিকই মিলে গেল গৌরী। গৌরীকে দেখে শাহরুখের কান্নায় মন গলে গৌরীর।

সব রাষ্ট্র হলো, ব্রাহ্মণের মেয়ে গৌরীর প্রেম চলছে খান সাহেবের ছেলের সঙ্গে। মা–বাবা মানলেও আত্মীয়স্বজন তো আর মানেন না। ভাই তো রীতিমতো শাসাল, আমার বোনের সঙ্গে কোনো হাঙ্কি-পাঙ্কি-পানি না! শুরু হলো নয়া যুদ্ধ।

শেষমেশ জাত–কুল হার মানল, জয় হলো প্রেমের। এত দিনে অবশ্য শাহরুখের বলিউডে কাজ শুরু হয়ে গেছে। শাহরুখ জানান, জুনে শুটিং শুরু হয়েছিল তার। অক্টোবরে বিয়ের পিঁড়িতে বসা। হেমা মালিনি পরিচালিত ও প্রযোজিত ছবি ‘দিল আসন্যা হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের সময় তারা মধুচন্দ্রিমা সারেন।

যা হোক, ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর হিন্দু রীতি অনুযায়ী শাহরুখের হাতে মেয়েকে তুলে দেন গৌরীর মা-বাবা। শাহরুখকে নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্রে শাহরুখ নিজেই বলেন, দুজনের ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন হলেও, কারও ধর্মকেই কেউ অবহেলা করেন না। দুজনেই যেমন ঘটা করে পূজা পালন করেন, তেমনি ঘটা করে ঈদও পালন করেন।

এখন তিন সন্তানের জনক ও জননী শাহরুখ–গৌরী। প্রথম ছেলে আরিয়ান খান (১৯৯৭) ও মেয়ে সুহানা খান (২০০০)। ২০১২ সালে শাহরুখের তৃতীয় সন্তান আবরাম পৃথিবীতে আসে।

সম্প্রতি, একটি শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় ফিল্ম ম্যাগাজিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের সংসারজীবন প্রসঙ্গে বেশ খোলাখুলি বক্তব্য দিয়েছেন। এত দিনে তো সম্পর্ক ভাইবোনে পরিণত হয়—প্রতিবেদকের এমন সরস মন্তব্যে শাহরুখ বলেন, ‘মোটেও এমন নয়। আর যা–ই হোক গৌরী আমার বোনে পরিণত হয়নি। ফেলে আসা বছরগুলোতে আমি আর গৌরী যথেষ্ট ভালো সময় কাটিয়েছি, পরস্পরের বোঝাপড়াও ভালো ছিল। ছবির কাজের বাইরে সময় পেলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই।’

আজ ২৫ অক্টোবর তাদের বিয়ের ২৫ বছর পূর্ণ হলো। সংসারজীবনে সময়–অসময়ে শাহরুখ-গৌরীর সংসারে অশান্তির ঝড় উঠলেও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সমস্যা মিটিয়ে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করেছেন শাহরুখ-গৌরী। দীর্ঘদিন এক ছাদের নিচে বসবাস করে ভালোবাসা, পারস্পরিক সমঝোতা ও বিশ্বস্ততার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সফল এ দম্পতি। শুভেচ্ছা এ দম্পতিকে।

সূত্র : উইকিপিডিয়া, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বলিউড সাদি। – প্রথম আলো



মন্তব্য চালু নেই