সেখানে প্রতি রাতে জমত বউ পাল্টাপাল্টির খেলা!

জয় সিং ছিলেন ভারতের আলোয়ারের মহারাজা। ১৮৯২ সালে‚ মাত্র দশ বছর বয়সে সিংহাসনে অভিষেক। রাজত্ব করেছিলেন ১৯৩৭ সাল অবধি‚ আমৃত্যু। তাঁর উপাধি ছিল ভারত ধর্ম প্রভাকর রাই। প্রকাশ্যে এমন এক ভাবমূর্তি ধরে রাখতেন‚ যেন‚ তিনি যৌনতা থেকে শতহস্ত দূরে থাকেন। অথচ আড়ালে ছিলেন ততটাই বিকৃত।

জয় সিং বিয়ে করেছিলেন। ছিল রক্ষিতাও। অথচ নিজেকে দাবি করতেন নারী-বিদ্বেষী বলে। তাঁর প্রাসাদে কুখ্যাত ছিল এক নৈশ ভোজসভা। অত্যন্ত গোপন সেই নৈশভোজে ডাক পেতেন রাজার ঘনিষ্ঠ সভাসদরা।

দুটো শর্ত মানতে হতো সেই সভায়। প্রথমত সেই সভায় সঙ্গে আনতে হবে স্ত্রী‚ এবং কন্যা থাকলে সেই তরুণী অবিবাহিত কন্যাকে। দ্বিতীয় শর্ত ছিল‚ শুধু নৈশ ভোজ এবং তার পরে রাতের জন্য সবাই পদমর্যাদা ভুলে যাবেন। অর্থাৎ মহারাজা বিনা সঙ্কোচে রাত কাটাতে পারবেন সভাসদের স্ত্রী বা মেয়ের সঙ্গে। আবার এক অধস্তন সভাসদ মহারানির সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে পারবেন ! সূর্যোদয় অবধি সাত খুন মাফ।

প্রতি রাতে জমত সেই বৌ পাল্টাপাল্টির খেলা। সবাই নিত্যনতুন নারীসঙ্গের স্বাদ পেতেন। কেবল শর্ত মানতেন না একজন।

তিনি গজনফর আলি খান। আলোয়ারের রাজার রাজস্ব মন্ত্রী। পরবর্তী কালে হয়েছিলেন ভারতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত। তিনি নৈশ ভোজের পরে অন্য নারী সঙ্গ করতেন পছন্দমতো। কিন্তু কোনওদিন নিজের স্ত্রী বা মেয়েকে আনতেন না। বলতেন তিনি মুসলিম। তাই ঘরের মেয়েদের বেআব্রু করে আনতে পারবেন না।

কিন্তু এই বৈষম্য মানলেন না অন্য সভাসদরা। তাঁরা আপত্তি তুললেন। রাজার কাছে দাবি করলেন‚ গজনফরকেও তাঁর স্ত্রীকে আনতেই হবে। শেষে গরিষ্ঠ মতকে গ্রাহ্য করতেই হল রাজা জয় সিংকে। তিনি রাজস্বমন্ত্রীকে বললেন‚ তাঁকেও সঙ্গে আনতে হবে স্ত্রীকে।

মহা আতান্তরে পড়লেন মন্ত্রীমশাই। নতুন নারীদেহের স্বাদ যে হাতছাড়া হতে বসেছে ! তাঁর সমস্যা দূর করতে মুশকিল হাসান করলেন বন্ধু জে এন সাহনি।

তাঁর কথামতো রাজার কাছে ছুটি চাইলেন মন্ত্রী। বললেন লাহোরে যাবেন স্ত্রীকে আনতে। মঞ্জুর হল ছুটি। কিন্তু খান সাহেব গেলেন দিল্লিতে। ভাড়া করলেন এক দেহ পসারিণীকে।

সুন্দরী সেই মহিলাকে সাজানো হল বহুমূল্য অলঙ্কার বস্ত্রে। অনেকদিন ধরে তালিম দেওয়া হল। কীভাবে অভিজাত ঘরের মেয়ে বৌরা আচরণ করে‚ শেখানো হল তাঁকে।

আদবকায়দা রপ্ত হয়েছে দেখে যৌন কর্মীকে নিয়ে খান সাহেব এলেন রাজার নৈশ ভোজের আসরে। বললেন‚ এই জেনানাই তাঁর বেগম সাহিবা।

তাঁর রূপ-ছলাকলার ছটায় কুপোকাত বাকি রমণীরা। কে বেগমসাহিবার সঙ্গে নিশিযাপন করবেন‚ পুরুষদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। খান সাহেব মুচকি মুচকি হাসেন আর উপভোগ করেন।

‘বেগমজানের‘ সঙ্গলাভে এত খুশি হলেন মহারাজ ও তাঁর সভাসদরা‚ মূল্যবান উপহার-উপঢৌকনে ঢেকে দিলেন তাঁকে। তখনকার দিনে কয়েক লক্ষ টাকা নজরানা পেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু বেগমের তো আরও নতুন পোশাক-গয়না চাই। খানসাহেবকে বলা হল‚ স্ত্রীকে কলকাতা বা বম্বে নিয়ে গিয়ে নতুন পোশাক কিনে দিতে। হাঁফ ছাড়লেন খানসাহেব।

তিনি বেগমকে নিয়ে আলোয়ার থেকে এলেন কলকাতা। এ বার রাজার কাছে পাঠালেন টেলিগ্রাম। জানালেন‚ হঠাৎ অ্যাপেণ্ডিসাইটিস ফেটে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বেগমের।

জেনে তো বজ্রাহত আলোয়ারের মহারাজা জয় সিং। তাঁর সভাসদরা। অন্যদিকে খানসাহেব পেলেন অসংখ্য সান্ত্বনাবার্তা। সেইসঙ্গে লম্বা ছুটি। বেগমবিয়োগের শোক সামলাতে।



মন্তব্য চালু নেই