সেই রুবেলই নায়ক

বিশ্বকাপের আগে ধর্ষণের মামলায় আসামি। আগাম জামিন শেষে আদালতে আত্মসমর্পণের পর জেল। ফের জামিনে মুক্তি। তারপরও ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে ছিল অনিশ্চিয়তা, হাজারো সংশয়। তবে সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত ডাক পান বিশ্বকাপ দলে।

বলা হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেস বোলার রুবেল হোসেনের কথা। বিশ্বকাপে ডাক পাওয়ায় অনেকেই রুবেল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সমালোচনা মুখর হয়েছিলেন। তাদের ভাষ্য ছিল, ধর্ষণের মামলার আসামি রুবেলকে কেন বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হলো?

যে নবাগত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছিলেন, তিনি বিভিন্ন মিডিয়ায় রুবেলের সমালোচনামুখর হয়েছেন। তবে রুবেল এসব ব্যাপারে কখনো মুখ খোলেননি। সাংবাদিকরা বহু চেষ্টা করেছেন তার ভাষ্য আদায়ের। তাকে দলে নেওয়া যুক্তিযুক্ত হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কৌশলে তার মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করে করেছেন অনেক সাংবাদিক। অনেক কটাক্ষ, কটূক্তি সহ্য করেছেন। তারপরও কখনো রুবেল কখনো মুখ খোলেননি, কোনো জবাব দেননি। কেন? হয়তো জবাবটা তিনি মাঠেই দিতে চেয়েছিলেন।

সোমবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হলে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশদের ২৭৬ রানের টার্গেট দিল টাইগাররা। মনে হচ্ছিল জিতেই যাবে। তবে জয় আর হয় কোথায়! দেখতে দেখতে ৮ উইকেটে ২৬০ রান তুলে ফেললো ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ১৬ রান। হাতে ২ উইকেট। তখনো মাঠে আছেন ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া ক্রিস ওকস। খেলছেন অপ্রতিরোধ্যভাবে।

সেই সময় মনে হচ্ছিল, ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ প্রবাদটি হয়তো সত্য হতে যাচ্ছে। ম্যাচে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সত্যিই তো, সকাল থেকেই তো হেরে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে টস হারলেন টাইগারদের দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাট করতে নেমে ৮ রানেই সাজঘরে দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল। এর চেয়ে বাজে শুরু আর কী হতে পারে!

রুবেল হোসেন যখন ৪৯তম ওভার করতে আসলেন, তখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশের সমর্থকদের কপালে ভাঁজ, মনে অমানিশার অন্ধকার, শঙ্কার ঢেউয়ে দুলছে হৃদয়। কী হয়! কী হয়!

তবে ৪৯তম ওভারের প্রথম বলেই স্টুয়ার্ট ব্রডকে পরিষ্কার বোল্ড করে দিলেন রুবেল। আনন্দের হিল্লোল বয়ে যেতে লাগলো বাংলাদেশের সমর্থকদের হৃদয়ে। ওভারের তৃতীয় বলে আবারও বোল্ড। এবার অ্যান্ডারসনকে নিজের শিকারে পরিণত করলেন রুবেল হোসেন। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ল অ্যাডিলেড ওভাল স্টেডিয়াম, আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠলে গোটা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টাইগারদের সমর্থকরা। উল্লাসের প্রবল পবনে উড়ে গেল শঙ্কার মেঘ। বাংলাদেশ ১৫ রানের জয় পেল। পৌঁছে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে।

‘রুবেল, রুবেল’ রব প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরসহ সর্বত্র।

মোট ৯.৩ ওভারে ৫৪ রানের খরচায় ৪ উইকেট নিলেন রুবেল। যার বিশ্বকাপ খেলা নিয়েই ছিল সংশয়, নানা প্রশ্ন। বিশ্বকাপের আগে যিনি দেশের মাটিতে ভিলেন, সেই রুবেলই বাংলাদেশকে মহাগুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিয়ে নায়ক বনে গেলেন। যারা বিশ্বকাপে রুবেলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যারা তার সমালোচনা করেছিলেন, সেই সব প্রশ্ন, সমালোচনার জবাব রুবেল নিজের মুখে দিলেন না, দিলেন মাঠের পারফরমেন্সে।

অবশেষে যেন সেই প্রবাদটিই সত্য হলো- ‘চরিত্র দিয়ে প্রতিভার মূল্যায়ন করা চলে না’। রুবেল ধর্ষণ করেছেন কি করেননি, সেটি আদালতের বিষয়। ক্রিকেটের মাঠের না। নারী কেলেঙ্কারিতে জড়ানো রুবেল, আর ক্রিকেটার রুবেল কখনোই এক নন। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটার রুবেলকে ভালবাসে। তার সঙ্গে ছিল, আছে, থাকবে। কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট পাগল জাতি।



মন্তব্য চালু নেই