“সেই মেয়েটি আমার জন্য সব করতে পারতো, কিন্তু আমি হিন্দু আর সে মুসলিম ছিল…”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমি আমার স্ত্রীকে অনেক ভালবাসি। কিন্তু তাকে বিয়ে করার আগে ২টি মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। একজনের সাথে ৪ বছর এবং তার কাছে ঠকে আরও একজন মেয়ের সাথে ৩ বছর। কিন্তু আমি হিন্দু আর সে মুসলিম ছিল। প্রথম সম্পর্ক থেকে ছিটকে পড়ে পরবর্তীতে যে সম্পর্ক হয়েছিল সেই মেয়েটি আমাকে পাগলের মত ভালবাসে, কিন্তু আমি তাকে কখনও দেখিনি। সে আমার জন্য সব কিছু করতে রাজী ছিল। কিন্তু সমস্যা ছিল ধর্ম ,তাই ৩ বছর সম্পর্ক থাকলেও আমি তার সাথে ইচ্ছা করে দেখা করিনি। আমি যখন নিজের ভুল বুঝতে পারলাম তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম।

তাকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু কোন কিছুতেই বুঝ মানতো না। আমি চাই সে সুখে থাক। তাই আমি আমার ফোন নম্বর বন্ধ করে রাখি। কিন্তু আমার মা-বাবার আত্মীয় সবাই আমার ফোন নম্বর বন্ধ থাকাতে বকাবকি করে তাই আবার ফোন নম্বর চালু করি। এবং সে আবার আমাকে ফোন দেয়। আমি তাকে বকা দেই বার বার ফোন দেবার সাথে সাথে। আমি গত ৪ মাস আগে বিয়ে করেছি আমার সম ধর্মের একজনকে। পছন্দ প্রেম সব হয় মন্দির থেকেই, তাই আমি তাকেই বিয়ে করেছি পরিচয় হবার ৬ মাসের মধ্যে। কিন্তু আগের প্রেমিকা আমাদের বিয়ের খবর জানতে পারে আমার বন্ধুর মাধ্যমে। তাকে আমি অনেক বোঝাই। অবশেষে সে বুঝতে পারে এবং আমাকে ফোন দেওয়া বন্ধ করে।

বর্তমানে আমি সব কিছু ভুলে আমার স্ত্রীকেই সব থেকে বেশি ভালবাসি। সেও আমাকে ভালবাসে। কিন্তু আগের প্রেম গুলোর কথা আমি তাকে সব বিয়ের আগে এবং পরে বারবার সবকিছু বলেছি যাতে সে আমাকে কখনও ভুল না বুঝে। কিন্তু সমস্যা হল, একদিন আমার স্ত্রী আমার পাশে বসে ছিলাম। এমন সময়ে হঠাৎ সেই আগের মেয়েটি ফোন দেয়কি এক প্রয়োজনে (আমি কথা বলিনি), কিন্তু আমার স্ত্রী আমাকে ঐ ফোন দেবার জন্য সন্দেহ করা শুরু করেছে। আমি নাকি ঐ মেয়ের সাথে এখনও কথা বলি তাকে লুকিয়ে। আমার স্ত্রীর জন্য তো আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। তাকে ছাড়া আমি কিছু বুঝিনা, পাগলের মত ভালবাসি আমি ওকে। কারণ বাস্তব জীবনে সেই তো আমার ভালবাসা।

সমস্যা গুলো ক্রমান্বয়ে লিখছি –

১) আমার স্ত্রী আমাকে এখন সেই মেয়েটিকে নিয়ে সন্দেহ করে।

২) আমি কোন কথা বোঝাতে পারিনা, বোঝাতে গেলেই সে কান্না শুরু করে।

৩) মাঝে মাঝে মোবাইল অথবা ঘরের অন্য কিছু ধরে আছাড় মারে আমার উপর রাগ করে। (অবশ্য আমার গায়ে যদি আঘাত লাগে তবে সে নিজেকে আঘাত করে)

৪) অনেক রাগ তার এবং আমারও তাই অনেক সময় সমস্যা হয়।

৫) আমাকে অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলা তার পছন্দ হয় না।

৬) আমার কাজ শেষ হওয়া মাত্রই আমাকে ঘরে চায় সে, কোন প্রকার বন্ধুদের সাথে আড্ডা-খেলাধুলা করা তার চোখের বিষ।

আমাকে সমাধান দিন আমি কীভাবে আমার স্ত্রীকে বোঝাতে পারবো যে আমি শুধুই তাঁর। তাঁকে আমি যেমন বিশ্বাস করি, সে কী করলে আমাকে তেমন বিশ্বাস করবে?”

পরামর্শ:

অতীতে কী হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে আর যাব না, কারণ সেই অধ্যায় পার করে আপনি নতুন জীবন শুরু করেছেন। কিন্তু ভাই, আপনার যেসব সমস্যার কথা লিখেছেন, সেগুলোর আসলে চট করে কোন সমাধান নেই। সংসার জীবনে এইসব বিষয়ে অনেকদিন আপনাকে ভুগতে হবে বলেই মনে হয়। আপনার স্ত্রীর যেসব আচরণের কথা লিখেছেন, আমার কাছে সেগুলো মোটেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। যদিও আজকাল এমন আচরণ অনেকের মাঝেই দেখা যায় বা আপনি হয়তো বলতে পারেন যে মেয়েটি আপনাকে ভালোবাসে বলে এমন করে, কিন্তু সেই ধারণা আসলে ভুল এবং কাজগুলো মোটেও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের মত আচরণ না। ভালোবাসার প্রকাশ আর যাই হোক, এমন হওয়ার কথা না। স্ত্রী হয়তো আপনাকে ভালোবাসেন, কিন্তু সেই ভালোবাসাটা কেবলই নিজের করে পাওয়ার জন্য। ভালোবাসার ওপর নাম যে গ্রহণ করা ও মেনে নেয়া, সেটা হয়তো স্ত্রী বুঝতে পারছেন না। তাছাড়া নিজের আবেগ ও ক্রোধের ওপরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ খুবই কম দেখতে পাচ্ছি। এই অবস্থাটা বিপদজনক, কারণ রাগের মাথায় অনেক কিছুই তিনি করে বসতে পারেন।

সত্যি কথা বলতে কি ভাই,। আপনি একজন মানুষ। আপনার নিজের আলাদা একটা জীবন আছে, কেবল স্ত্রীর পাশে বশে থাকাটাই তো জীবন না। বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ইত্যাদি সকলেই কিন্তু সময় পাওয়ার দাবী রাখে। আর দিনরাত যদি একটি মানুষের সাথেই বাধ্য হয়ে সময় কাটান, আজকের এই তীব্র ভালোবাসা কাল অতীত হয়ে যেতে সময় লাগবে না। আপনি নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন। এবং এমন অবস্থায়, আমার মনে হয় একজন পেশাদার কাউন্সিলারের সহায়তা নেয়াটাই আপনাদের জন্য সবচাইতে ভালো। কারণ আপনি কিছু করতে বা বলতে গেলেই তোঁ স্ত্রী কান্না করে। তাই আমি যে পরামর্শই দিই না কেন, আপনি তোঁ সেটার প্রয়োগ করতে পারবেন না।

একজন পেশাদার কাউন্সিলারের কাছে স্বামী-স্ত্রী দুজনে একত্রে যান, একসাথে কাউন্সিলিং করারন। আপনার স্ত্রী অতি আবেগ ও অতি রাগের বিষয়টিও হয়তো এতে নিয়ন্ত্রনে আসবে। প্লাস, আপনাদের সম্পর্ক সমঝোতাও বাড়বে। আরেকটি কথা ভাই, ভালোবাসেন খুব ভালো কথা। তবে সম্পর্কে অধিক প্রশ্রয় দিতে নেই কাউকে। মাঝে মাঝে একটু কঠোর ভাবেই সঙ্গী বা সঙ্গীনির অন্যায় আচরণের লাগাম টেনে ধরতে হয়। তাতে অপর মানুষটি বুঝতে পারবেন যে এই কাজটি করা চলবে না বা চললে স্বামী/স্ত্রী রাগ হন। আরে আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য।প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই