“সেই মহিলা ওর চাইতে ১২ বছরের বড়, দুবার সন্তান নষ্ট করেছে…”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
“আমি খুব বড় একটি ঝামেলায় আছি। হঠাৎ করে গত বছর আমি একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। শুরু থেকে আমি তাকে খুব বেশি পছন্দ করতাম। একসময় ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। সে একজন ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা।
সম্পর্কের আগে আমি জানতাম এর আগে তার একটি সম্পর্ক ছিল। আমি সেটা মেনে নিয়েছি। দিন দিন আমাদের সম্পর্কটা খুব ডেভেলপ হচ্ছিল। আমাদের অনেক বেশি দেখা হত। আমরা দুজন বেশির ভাগ সময় মুভি দেখতাম। প্রায়ই খেয়াল করতাম ওর ফোনে একটা নম্বর স্ক্রিন লিস্টে দেয়া। নম্বরটা থেকে খুব বেশি ফোন আর টেক্সট আসত। আমি ওকে জিগেস করলে বলত একজন আছে আমাকে খুব বিরক্ত করে। ব্লক করে রেখেছি, ঠিক হয়ে যাবে।
তবে আমি বোকা ছিলাম না। ব্যাপারটা একটু সন্দেহজনক হবার কারণে আমি নম্বরটা নিয়ে ফোন দিই। তারপর যা দেখলাম তা বলার ভাষা আমার জানা নেই। ৪ বছর ধরে সেই মহিলার সাথে তার সম্পর্ক ছিল , মহিলা স্বামী পরিত্যাক্তা এবং তার দুটা মেয়ে আছে। আর মহিলা ওর চেয়ে ১২ বছরের বড়! মহিলাটি ছিল ওর ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিয়ান। মাস্টার্সে পড়াকালীন তাদের সম্পর্ক হয়। তার বাচ্চাদের সে পড়াত। তাদের বাসায় থাকত কারণ ঢাকায় ওর কেউ ছিল না। তাদের মধ্যে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক ছিল। এমনকি ২ বার বাচ্চা নষ্ট করেছে!
মহিলা আমার সাথে কথা বলে খুব কান্নাকাটি করে। এসব জানার পর আমি খুব অসুস্থ ছিলাম , পরে জানতে পারলাম ওই মহিলাকে ছাড়ার জন্যে সে গত এক বছর ধরে চেষ্টা করছে। কিন্তু সুইসাইড , সবাইকে বলে দেবে এসব ভয় দেখিয়ে সেই মহিলা ওকে সম্পর্ক চালাতে বাধ্য করছে।
আপু, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম কী করব সেই ভেবে। আমি জানি সে বড় অপরাধ করেছে। এই ব্যাপারে ওই মহিলার চেয়ে তার দোষ বেশী। অল্প বয়সে শারীরিক সম্পর্কের টানে হয়তো সে ওটা করেছিল। আমি ওর জীবনে আসার পর অনেক বদলে গেছে মানুষটা। আমি জানি সে আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে। সে ফোন দিয়ে খুব কাঁদে, মাফ চায়, আমাকে নিয়ে একটা ভালো জীবন যাপন করতে চায়। ওর বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। আমি ওকে এখনো ভালবাসি, কিন্তু কেন যেন মন থেকে মাফ করে দিতে পারি না। যখন ওই মহিলার কথা মনে পড়ে, ঘৃণায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার ভাবি একটা ভুলের জন্যে সারাজীবন তাকে কষ্ট পেতে হবে।
আমি কী করব? আমি তো কিছুতেই ভুলতে পারছি না তার অনৈতিক সম্পর্কের কথা।”
পরামর্শ:
আপনার সমস্যাটি আমি বুঝতে পারছি আপু, খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। তাই শুরুতেই বলে নিচ্ছি, বিয়ের ব্যাপারটি নিয়ে বা সম্পর্কের ব্যাপারটি নিয়ে একেবারেই তাড়াহুড়া করবেন না। একদমই না। এই ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করার ফল খুব খারাপ হবে। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, সেটা কেবল সময়ই বলে দেবে আপনাকে।
প্রথমত, যেহেতু আপনি তাঁকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারছেন না, সেহেতু এই মুহূর্তে সম্পর্ক জোড়া দেয়া বা বিয়ের কথা চিন্তা করাটা মারাত্মক বোকামি হবে। আপনারা দুজনের কেউই সুখী হতে পারবেন না। বরং মন থেকে গ্রহণ না করে সম্পর্ক করলে সংসার ডিভোর্সের দিকে যেতে সময় লাগবে না। আপনার এখন যা করা উচিত, সেটা হচ্ছে সময় নেয়া। মানুষ আবেগের বশে অনেক কিছুই করে। আপনিও করবেন, ছেলেটিও করবে। কিন্তু আবেগ বড় ক্ষণ স্থায়ী জিনিস আর বাস্তবতা বড় কঠোর। মন থেকে মেনে নিতে পারলে ক্ষণিকের আবেগ মুছে গিয়ে এক সময় কেবল বাস্তবতাই অবশিষ্ট থাকে। তাই আপু, আপনি অপেক্ষা করুন, নিজেকে সময় দিন। এখনোই হ্যাঁ বা না কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না। আপনি অপেক্ষা করুন, নিজের মনকে সময় দিন বুঝতে। অন্যদিকে এটাও দেখুন যে ছেলেটি আসলেই আপনার ব্যাপারে সিরিয়াস কিনা। ছেলেটি যদি আসলেই শুধরে গিয়ে থাকে, কিংবা আপনার ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে থাকে, তাহলে আপনার জন্য ৫/৭ বছর অপেক্ষা করতেও সে বিন্দু মাত্র দ্বিধা করবে না। আর যদি ক্ষণিকের আবেগ হয়ে থাকে, কিছু মাস অপেক্ষা করেই সে ক্লান্ত হয়ে যাবে, মুখ ফিরিয়ে নেবে আর অন্য দিকে সম্পর্ক করবে।
এখানে একটি কথা বলে রাখি, আপনি যে আপনার প্রেমিককে নির্দোষ ভাবছেন, ব্যাপারটি কিন্তু মোটেও সেটা হয়। যে সম্পর্কে তিনি জড়িয়েছিলেন, সেই সম্পর্কে তিনি প্রতারণা করেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে একটি ব্যাপার ভাবুন। একজন স্বামী পরিত্যাক্তা নারী, নিঃসঙ্গ, দুটি সন্তানের মা। জীবনে নিশ্চয়ই তাঁকে অনেক সংঘর্ষ করতে হয়? এমন সময়ে তাঁর জীবনে আসে একটি তরুণ ছেলে, ভালোবাসার আহবান জানায়, শারীরিক সম্পর্কের লোভে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে মহিলাটির সাথে সে সম্পর্ক করে। শুধু তাই নয়, মহিলার কাছ থেকে আপনার প্রেমিক কিন্তু নানা রকমের আর্থিক সুবিধাও গ্রহণ করতো। মহিলার বাচ্চাদের পড়িয়ে টাকা নিত বুঝলাম। কিন্তু মহিলার বাসায় তাঁর থাকা খাওয়া হতো, এটা তো সুবিধাই নেয়া, তাই না?
আপনি যেহেতু লোকটাকে ভালোবাসেন, আপনার কাছে তাঁকে নির্দোষ মনে হবে আর আপনি সেই মহিলাকে খারাপ বলবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আমি সেই মহিলাকে ভালো বলছি না বা তাঁর পক্ষ নিচ্ছি না।ল কিন্তু একবার ভাবুন আপু, মহিলা কিন্তু কারো সাথে প্রতারণা করেন নি। তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা, আরেকটি সম্পর্কে জড়াতেই পারেন। স্বামী থাকলে না হয় সেটা দোষের হতো। বয়সে ছোট বরের সাথে বিয়ে আজকাল অহরহ হচ্ছে, এমনও তো হতে পারে যে ভদ্রমহিলাও বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আপনার প্রেমিক কী করেছেন? নিজের প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতেই ভদ্রমহিলার সাথে প্রতারণা করে, তাঁর সমস্ত ভেঙে দিয়ে আপনার সাথে সম্পর্ক করেছেন। আপনার কাছ থেকেও সব গোপন করেছেন। প্রতারক কিন্তু আপনার প্রেমিকই আপু!
এখন আপনি আমাকে বলুন, যে মানুষ অন্য একটা মানুষের সাথে এমন ভয়ানক প্রতারণা করতে পারে, তাঁকে বিশ্বাস করা কতটা নিরাপদ? কিংবা, আপনি কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে এই লোকটি আপনার চাইতে ভালো কাউকে পেলে আপনাকে ছেড়ে যাবেন না, যেভাবে তিনি ছেড়ে এসেছেন সেই ভদ্রমহিলাকে? একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন আপু, ভালোবাসার পর্দা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ভাবুন। আমার মনে হয় নিজের প্রশ্নের জবাব আপনি নিজেই পেয়ে যাবেন। তবে আমি আপনার স্থানে হলে এই লোককে বিশ্বাস করার আগে অন্তত ১০ বার অবশ্যই ভাবতাম।
আপনি বুদ্ধিমতী নারী আপু, নিশ্চয়ই জানেন যে মনের মাঝে ঘৃণা নিয়ে আর যাই হোক জীবন কাটানো যায় না। সাড়া জীবন সন্দেহে ভুগে ভুগেও সংসার করা যায় না।প্রিয়.কম
মন্তব্য চালু নেই