সূর্যমুখীর সূর্যপ্রীতি ও লজ্জাবতীর লজ্জা কেন?

সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যের দিকে ঘুরে থাকে,লজ্জাবতী গাছ স্পর্শ করলে কেন নুয়ে পড়ে এক সময় এ সব প্রশ্ন শুধু মাথায় ঘুরপাক খেত। আজো অনেকের কাছে বিষয়গুলো রহস্যময়। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই এ লেখা। আশা করি দীর্ঘদিন যারা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তাদের কৌতূহল মিটবে।

সূর্যমুখী যাকে ইংরেজীতে ‘সান ফ্লাওয়ার’ বলা হয়। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলেই বাংলায় এমন নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই ফুল সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে?

গাছের বৃদ্ধি ও শারীরিক কার্যকলাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের হরমোন সাহায্য করে। এমনি একটি হরমোন অক্সিন। অক্সিন হরমোনের নানান কাজের মধ্যে রয়েছে কাণ্ড ও পাতার বৃদ্ধি। এই অক্সিন হরমোনই আবার ফটোট্রপিক ক্রিয়ার জন্য দায়ি। আলোর সঙ্গে উদ্ভিদের যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাই-ই হল ফটোট্রপিক ক্রিয়া।

অক্সিন হরমোনের যে পাশে সূর্যের আলো পড়ছে না অর্থাৎ যে পাশে ছায়া থাকে সে পাশে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি উদ্ভিদের যে অংশে থাকে সেখানে pH এর পরিমান কমিয়ে দেয়। ফলে এর সেলুলোজ কোষগুলো ফেটে যায় ও অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপই সূর্যমুখী ফুলকে সূর্যের দিকে ঘুরতে বাধ্য করে। উদ্ভিদে আলো ও অন্ধকারের এই ছন্দকে বায়োলোজিক্যাল ক্লকও বলা হয়।

লজ্জাবতী গাছের প্রজাতির নাম ‘পুডিকা’। এটি ল্যাটিন শব্দ। যার মানে হলো লজ্জা,লাজুক বা কুঁচন (কুচকানো)। এ ছাড়াও একে Touch me not, sensitive plant বা Sleepy plant বলা হয়। লজ্জাবতী লতানো বর্ষজীবি বা বহুবর্ষজীবি হার্ব। এই গাছটি Febaceae পরিবারের আওতাভুক্ত। লজ্জাবতী পাতায় স্পর্শ করলে এর পাতা কেন নুয়ে পড়ে, লজ্জা পেয়ে কেন ঘোমটা দেয়?

lazzaboti

প্রিয় পাঠক সবার মনেই এই প্রশ্ন জাগে, আসুন কী ঘটে সেটা দেখি।

লজ্জাবতী পাতার গোড়ায় যে স্ফীত অংশ থাকে সেখানে প্লাভিনার নামক টিস্যু থাকে। ফলে স্পর্শ করলেই এই টিস্যু থেকে পানি দ্রুত গতিতে(৬০km/hour)বেরিয়ে যায় এবং অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পানি বের হওয়ার ফলে প্লাভিনার টিস্যু পানিশূন্য হয়ে যায়। পানির চাপ কমে যাওয়ার ফলশ্রুতিতে পাতাগুলো দৃঢ়তার সাথে টান টান হয়ে সোজা থাকতে পারে না তাই পাতা নুয়ে পড়ে।

লেখক : আজহারুল ইসলাম খান : উদ্ভিদবিদ।



মন্তব্য চালু নেই