সুন্দর ব্যবহার ও আচরণ মানুষকে সম্মানিত করে
মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে অলোকিত করে থাকে। যে সুন্দর চরিত্রের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় নবী জীবনে। নবী জীবন কেমন ছিল- তার পরিচয় পাওয়া যায় এই হাদিসে—
হজরত আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস (রা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, তাওরাতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষণসমূহ সম্পর্কে আমাকে অবগত করুন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, (তাই হবে) নিঃসন্দেহে তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এমন কতিপয় বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে- যা দ্বারা কোরআন শরীফে তিনি বিশেষিত হয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি’’ (সূরা আল আহজাব : ৪৫) এবং নিরক্ষরদের স্মরণ স্থল, আপনি আমার বান্দা ও আমার পয়গামবাহী রাসূল, আমি আপনার নামকরণ করেছি মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহতে নির্ভরশীল)। আপনি রুক্ষ্ম মেজাজ ও হাটবাজারে শোরগোলকারী নন, দুর্ব্যবহারের দ্বারা দুর্ব্যবহারের জবাব দেন না, বরং মার্জনা ও ক্ষমা করে দেন।’ –আল আদাবুল মুফরাদ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন জ্যোতিষ্মান প্রদীপ বিশেষ। তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে জনৈক আরব কবি বলেন, ‘হে জ্যোতির্ময়! হে মানব শ্রেষ্ঠ! তোমার পূত চেহারার দীপ্তি থেকেই চাঁদ আলোক প্রাপ্ত হয়েছে।’
যার হৃদয় যত পবিত্র ও কলুষমুক্ত- তিনি তত কোমল ব্যবহারের অধিকারী হন, তিনি হন সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা অধিকারী। পৃথিবীতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র মন, আকর্ষণীয় আচরণের অধিকারী আর কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
নবী করীম (সা.) সব সময় হাসিমুখে থাকতেন। সঙ্গী-সাথীদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র হাসিমুখে অভ্যর্থনা করতেন, কিন্তু জীবনে কেউ কোনোদিন তাঁকে অট্টহাসি হাসতে দেখেনি। প্রবল হাসির উদ্রেক হলে কখনও কখনও বিদ্যুৎ চমকের মতো একফালি দাঁতের ঔজ্জ্বল্য ফুটে বের হত।
সাহাবি হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জীবনে যতবার আমি রাসূলে কারিম (সা.)-এর সাথে সাক্ষাত করেছি, প্রত্যেকবারই তিনি আমাকে হাসিমুখে সম্ভাষণ করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমার কথা শুনেছেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) বলেন, নবী (সা.) মৃদুহাসি ব্যতিত কখনও উচ্চহাস্য করতেন না।
চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান হাসিল করা যায়। গোমরামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎ চরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে- যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবার প্রধান ও সমাজ সংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
মধুর চরিত্রের অধিকারী ও মিষ্টভাষীদের জন্য জান্নাতের সুখবর রয়েছে পবিত্র হাদিসে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে কথাটি প্রকৃতই মিথ্যা এবং অসঙ্গত, যে ব্যক্তি তা বলা এবং আলোচনা করা পরিত্যাগ করে- তার জন্য জান্নাতের কিনারায় স্থাপনা নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে বাসস্থান নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি বাক সংযম, মিষ্টভাষণ এবং সত্য কথা প্রভৃতি গুণ দ্বারা নিজের চরিত্র সৌন্দর্যমন্ডিত করে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাসস্থান নির্মিত হয়।’ –মিশকাত
যে জীবনে আনন্দ রস একবারেই নেই, সাধারণ মানুষ তেমন জীবনকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু হাসি-তামাশা যেন ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে না যায় সে জন্য সূক্ষ্ম রসবোধ ও আত্ম সংযম থাকা দরকার।
নীরবতা, নির্জনতা, স্থির ও সমাজবিচ্ছিন্ন একক জীবন ইসলাম নয়। দয়া, নম্রতা, নরম মেজাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজের মানুষের সাথে হাসি মুখে, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে মিশতে হবে। তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করতে হবে। আর এসব যেন লোক দেখানোর না হয়- সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করা ঈমানের অন্যতম শিক্ষা। তাই সর্বাবস্থায় সর্ব স্তরের মানুষের সাথে ভদ্র আচরণ করা ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। সেই মানুষটি যে পর্যায়েরই হোক না কেন।
মন্তব্য চালু নেই