সীমান্ত নিয়ে দেশে দেশে যত বিড়ম্বনা

পৃথিবীতে প্রত্যেকটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব সীমারেখা। সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে এসব সীমারেখাগুলোকে অবশ্যম্ভাবী আর নির্দিষ্ট ব্যাপার বলে ধরে নিই আমরা। কিন্তু বাস্তবে কি সত্যিই এগুলো তাই? একেবারেই না। এদেরকে তৈরি করেছে মানুষ। আর বছরের পর বছর ধরে ধরে তাই মানুষ বা প্রকৃতির হাত ধরে বদলও হয়ে এসেছে দেশের সীমারেখাগুলোর। কখনো কখনো এই হঠাত্ বদলে যাওয়া সীমারেখা তৈরি করেছে দুই দেশের ভেতরে প্রচন্ড আর বিশাল ঝামেলার। কখনো সেটা রূপ নিয়েছে অদ্ভূত পরিস্থিটিরও। চলুন আজ দেখে আসি এমনই কিছু দেশগুলোর ভেতরে মজার আর অদ্ভূত ঝামেলা বাধিয়ে দেওয়া সীমারেখাকে।

১. সবচাইতে ছোট দ্বীপের মালিকানা

১৯৭৩ সালে প্রথম শুরু হয় ঝামেলাটি। কানাডা আর ডেনমার্কের ভেতরে বছরের পর বছর ধরে সেই থেকেই বিবাদ বজিয়ে রেখেছে কেনেডি চ্যানেলের কাছেই আবস্থিত একটুকরো পাথর। যাকে কিনা খানিকটা সম্মানের সাথে সম্বোধন করা হয় দ্বীপ হিসেবে। প্রতিদিন নিয়ম করে নিজেদের দখল এই মাত্র ০.৫ মাইলের হ্যানস দ্বীপে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সৈন্য পাঠায় দুই দেশ ( লিস্টভার্স )। শত্রুতা নয়, একরকম বন্ধুত্বই লক্ষ্য করা যায় এই সেনাদের ভেতরে। তবে সৈন্যদের ভেতরে সম্পর্ক যাই থাকুক না কেন, কোনরকম লাভের আশা ছাড়াই সেই ১৯৭৩ সাল থেকে এখন অব্দি নিজেদের সীমানা থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত এই দ্বীপটিকে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছে কানাডা আর ডেনমার্ক।

২. নামের মিলে মালিকানা দাবি

১৯৯১ সালে আরো অনেক দেশের মতন যুগোস্লাভিয়ার কাছ থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষনা করে মেসিডোনিয়া। না, এতে যুগোস্লাভিয়ার কোন আপত্তি ছিলনা। তবে মেসিডোনিয়ার এই স্বাধীনতা নিয়ে প্রচন্ড ক্ষেপে যায় গ্রীস। তবে তাদের ক্ষিপ্ত হবার কারণ কিন্তু স্বাধীনতা ছিল না। ছিল মেসিডোনিয়ার নাম। গ্রীসের দাবী তাদের প্রদেশ মেসিডোনিয়ার নামকে চুরি করেছে যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্ত মেসিডোনিয়া দেশটি। এবং সেই থেকে এই ঝামেলার শুরু। নিজেদের মেসিডোনিয়ার সাথে সাথে মেসিডোনিয়া দেশটিরও মালিকানা নিজেদের বলে মনে করে গ্রীস ( ডব্লিউএন.কম )। তাদের সীমারেখা নিয়ে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে গ্রীসের। ফলে সীমারেখা সংক্রান্ত বিবাদ সঙ্গত কারণেই মেটেনি কখনো এই দুই দেশের ভেতরে।

৩. মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার গল্প

নেদারল্যান্ড আর বেলজিয়ামের ভেতরকার সীমারেখা আঁকা হয়েছিল অনেক আগেই। সেই অনুসারে সবধরনের কাজ কর্মও চলছিল এই দুই দেশের। কিন্তু প্রকৃতির কি খেয়াল হল মেউসে নদীর মাধ্যমে ধীরে ধীরে সীমারেখার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে বেলজিয়ামের একটুকরো ছোট্ট জমিকে নেদারল্যান্ডের সাথে জুড়ে দিল সে। মালিকানা কিন্তু থাকলো বেলজিয়ামেরই। ঝামেলাটা আরো ভালো করে বাঁধলো যখন কয়েক বছর আগে একজন মানুষের মৃতদেহ পাওয়া গেল ঐ এটুকরো জমিতে। এখন নেদারল্যান্ডের কাছের লাগোয়া জমি। কিন্তু সেখানকার পুলিশ কিছু করতে পারছেনা বেলজিয়ামের জায়গা বিধায়। আবার বেলজিয়াম কিছু করতে পারছেনা কারণ ঐ জমিতে যেতে হলে নেদারল্যান্ডের কিছু জায়গা পেরিয়ে যেতে হয়। শেষমেশ অবশ্য ২০১৫তে এসে নিজেদের ঐ জায়গার মালিকানা একেবারের মতন নেদারল্যান্ডকেই দিয়ে দিয়েছে বেলজিয়াম ( লিস্টভার্স )!

৪. ডাকটিকিট নিয়ে যুদ্ধ

মানুষ তো কতকারণেই যুদ্ধ করে। কিন্তু তাই বলে ডাকটিকিট নিয়ে! এমনটাও কি সম্ভব? বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও সত্যি যে সত্যিই এমন যুদ্ধ হয়েছে ইতিহাসে। আর সেটাও ডাকটিকিটে আঁকা সীমারেখা নিয়ে। সে বছর নিকারাগুয়ার করা ঐ ডাকটিকিটে দেখাচ্ছিল হন্ডুরাসের কিছু স্থানকে। যেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছিল নিকারাগুয়ার স্থান হিসেবে। একটুও দেরী হয়নি এরপর দুই দেশের। ১৯৩৭ সালেই বেধে যায় প্রচন্ড যুদ্ধ এদের ভেতরে ( এসনিউসি )। আর সেটা শেষ হয় সে বছরেই ছাপানো আরেকটি ঠিকঠাক ডাকটিকিটের মাধ্যমে।



মন্তব্য চালু নেই