সীমান্তে শারিরীক নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যু : অভিযোগের তীর বিএসএফে’র দিকে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মনছের আলী হত্যার রেষ কাটতে না কাটতে তিন দিনের মাথায় বুধবার ভোরে ভুরুঙ্গামারী সীমান্তে নির্যাতন করে হত্যা করেছে আব্দুল বারেক (৩৫) নামে এক যুবককে। ভারত থেকে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের অমানসিক শারিরীক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি, পুলিশসহ সরকারের দায়িত্বশীল কোন পক্ষই মুখ খুলছে না।

বাংলাদেশীদের হত্যা করতে এবার নতুন কৌশল বেছেনিয়েছে বিএসএফ। সরাসরি গুলি না করে নির্যাতন করে সীমান্তের বাইরে মেরে ফেলছে অবৈধ ভাবে গরু আনতে যাওয়া বাংলাদেশীদের। নির্যাতন মৃত্যুর কথা বিজিবি ও বিএসএফ’র পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে দুপুরে বিজিবি ও বিএসএফ’র মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শেষ পর্যন্ত থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
বুধবার সকাল ৬টায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের কাইজারচর সীমান্তে এ কায়দায় আব্দুল বারেক (৩৫) নামের এক গরুর রাখালকে নির্যাতন করে বাড়ির পাশে ছেড়ে দেয়। সে স্থানীয় এক ভাইয়ের বাড়িতে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। নিহত বারেক উত্তর ধলডাঙ্গা গ্রামের এন্তাজ আলীর ছেলে।

একই কায়দায় চলতি বছরের ১৮জানুয়ারী ওই শালঝোড় কাইজারচর সীমান্তের ৯৮৮ নম্বর সীমানা পিলারের কাছে গরু ব্যবসায়ী আব্দুল গনিকে (৫০) পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। সেবারও দু’দফা পতাকা বৈঠক হলেও ঘটনা অস্বীকার করে ভারতের ৯৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ঝুলোলী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা। ওই ঘটনায় বিএসএফের নির্যাতন থেকে বেঁচে যাওয়া দুই ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন ও রইস উদ্দিন আহত অবস্থায় ফিরে এসে প্রথমে গোপনে চিকিৎসা নিলেও পরে ঘটনা জানাজানি হয়।

নিহতের পিতা এন্তাজ আলী জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের ভিতর থেকে গরু আনতে তাকে কে বা কারা ফোনে ডাকে। বিকেলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৯৯৮ এর সাব ৬নং সীমানা পিলারের কাছ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। বুধবার ভোর ৬টার দিকে গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে দৌড়ে সীমান্ত সংলগ্ন খাইরুলের বাড়িতে এসে পানি খেতে চায়। তাকে দ্রুত পানি দেয়া হলে ভয়ে নিস্তেজ হয়ে পরে। এ সময় স্থানীয় পল্লী চিকিৎসককে নিয়ে আসলে তিনি মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন,,আমার ছেলের শরীরে অনেক মারের আঘাত। তাকে রাইফেলের গোড়া দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।

সীমান্ত এলাকার জনৈক আউয়াল জানান, সে মাঝে মধ্যে ভারত থেকে গরু আনত। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর গরু কাটাতার পার করে দিলে এক জোড়া গরুতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পেতে তা দিয়ে অভাবী সংসার চালাতো। মৃত দেহের শরীরে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া গেছে।
সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থল থেকে সুরতহাল শেষে মৃত দেহ উদ্ধার করে। এ সময় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের জন্য চিঠি দেয়া হয় বলে জানিয়েছে বিজিবি। দুপুরে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে এসে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছে বিএসএফ।
শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন,বিএসএফ নির্যাতন করে মেরেছে সীমান্তবাসীরা সবাই একই সাক্ষ্য দিচ্ছে। এর আগেও বিএসএফ চলতি বছরের ১৮জানুয়ারী ওই শালঝোড় কাইজারচর সীমান্তের ৯৮৮ নম্বর সীমানা পিলারের কাছে গরু ব্যবসায়ী আব্দুল গনিকে (৫০) পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু পতাকা বৈঠকে সেবারো তা স্বীকার করল না। এবারও তারা পিটিয়ে হত্যার পর দায় অস্বীকার করছে।

ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, বিকালে আব্দুল বারেক এর লাশ কুড়িগ্রাম মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের বুকসহ শরিরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাদের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম ৪৫ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালক লে.কর্ণেল জাকির হোসেন জানান, সীমান্ত এলাকায় একজনের বাড়িতে সে মারা যায়। কি ভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের জানা নেই। তবে বিএসএফ পতাকা বৈঠকে তাদের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছে।



মন্তব্য চালু নেই