সিলেটে মুখোমুখি শমসের-ইলিয়াস বলয়
সিলেট মহানগর ছাত্রদল নেতা ও গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিল্লুল হক জিলু হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিবৃতিযুদ্ধ শুরু করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলী গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
মূলত এ হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই পক্ষের মাঝে। ইলিয়াস আলীর অনুসারীদের অভিযোগ, জিলু হত্যা মামলার প্রধান আসামিদের রক্ষার চেষ্টা করছেন শমসের মবিনের অনুসারী নেতাকর্মীরা।
এসব নিয়ে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের চাপা ক্ষোভ এখন প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার কারণে দুই পক্ষের মধ্যে যে কোনো সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে- এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
জানা যায়, গত সোমবার জিল্লুল হক জিলুর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে প্রথমে বিবৃতি দেয় সিলেট বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরীর অনুসারী গ্রুপ। মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালী বিবৃতিতে জিলু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাহবুব কাদির শাহীর পক্ষ নেন। তারা শাহীকে মামলার আসামি করার নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, দলীয় কোনো কোন্দলে নয়, বরং স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই জিলু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন- একটি কুচক্রি মহল বিএনপির মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
একই দিন মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে শমসের মবিন চৌধুরী জিলু হত্যাকাণ্ডে মাহবুব কাদির শাহীকে আসামি করার নিন্দা জানান। তাছাড়া শাহীর বাড়ি-গাড়িতে হামলার নিন্দাও জানান তিনি। তবে পরবর্তীতে এম এ হক স্বাক্ষরিত এই বিবৃতির ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান শমসের মবিন চৌধুরী।
এদিকে শমসের অনুসারীদের ওই বিবৃতির একদিন পর, গত মঙ্গলবার সিলেট বিএনপির ইলিয়াস অনুসারীরাও পাল্টা বিবৃতি দেন। সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মকসুদ আলী, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াছেহ্ চৌধুরী জুবের, কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিনার খাঁন হাসু এক যুক্ত বিবৃতিতে জিলুর হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জিলু হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত খুনি চক্র আইনের আওতায় এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক এটা আজ সিলেট বিএনপির প্রতিটি সদস্যের দাবি। কিন্তু অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি জিলু হত্যাকাণ্ডের পর দায়েরকৃত মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পত্রপত্রিকায় কোনো এক আসামির পক্ষে যেভাবে সাফাই গেয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে তারা শুধু বিএনপি নেতা হিসেবে নিরপেক্ষতাই হারাননি, বরং মামলার তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে জিলু হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জিলু হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে কোনো নিরপরাধ লোক নিগৃহীত হোক কিংবা কোনো অপরাধী লোক পার পেয়ে যাক- এ দুটির কোনোটাই আমাদের কাম্য নয়। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যার সাফাই গেয়েছেন সেই সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মাহবুব কাদীর শাহী-ই যে জিলুর হত্যাকারী আমরা সেটাও বলছি না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা জিলু হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। মাহবুব কাদীর শাহী বা অন্য কেউ জিলু হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলে তারা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবে, আর জড়িত থাকলে আইনের আওতায় আসবে এটাই স্বাভাবিক।
সিলেট বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরী ও ইলিয়াস আলীর অনুসারীদের এমন বিবৃতিযুদ্ধে ক্ষুব্দ দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে শমসের মবিন চৌধুরীর অনুসারীরা যেভাবে রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ডকে স্থানীয় আধিপত্যের বিরোধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তাতে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপর ক্ষেপেছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। এতে করে সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রকটতা আবারও নতুন করে প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই দ্বন্দ্ব থেকে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নাম প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে মহানগর বিএনপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বিবৃতির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন তারা জিলুর খুনীদের মদদদাতা। তারা জিলুর হত্যাকারীদের বাঁচানোর মিশনে নেমেছেন। এর আগেও ওইসব নেতারা দালালীর জন্য দলের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। খুনীদের রক্ষার চেষ্টা ও দালালী বন্ধ না করলে শিগগিরই ওইসব নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে রাজপথে নামবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন, শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঠানটুলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় সিলেট মহানগর ছাত্রদল নেতা ও গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিল্লুল হক জিলুকে।
মন্তব্য চালু নেই