সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি থেকে উত্তরাঞ্চলে সার ডিজেল সরবরাহে বিঘ্ন

টানা অবরোধ হরতালের কারণে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নৌবন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে সার ও ডিজেল সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। এতে অসখ্য ইরি বোরো মৌসুমে সার ডিজেলে কৃত্রিম সংকটের আশংকা করা হচ্ছে।

একটি দায়িত্বেশীল সূত্রে জানা গেছে, টানা অবরোধ ও হরতাল শুরু থেকে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বিভিন্ন স্থানে এই ডিজেল ও ইউরিয়া সার সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। কারণ সম্পার্কে অনেকেই বলছেন, অবরোধ হরতালে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের আশংকায় সড়ক পথে বিশেষ করে ট্রাক লরী চলাচলের সংকটের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে আর কিছুদিন থাকলে সড়ক পথে সার ডিজেল সরবরাহে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে ভরা রবি মৌশুমে সরকারের যথেষ্ট মজুদ থাকা সতেও¡ এক শ্রেনীর প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে ইউরিয়া সার সময়মত পাবে কিনা এ নিয়ে হাহাকার বা কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে থাকে। আর সেই সাথে অবরোধ হরতালের মত অর্থনৈতি ধ্বংসের কর্মসূচি দেয়ার পর অসৎ ব্যবসায়ীরা সার ডিজেল সংকট ও তার মূল্য বৃদ্ধি ঘটায়। বর্তমানে কৃষি বিভাগ এবং সার-বীজ মনিটরিং কমিটির নিয়মিত নজরদারি না থাকায় বাঘাবাড়ির একটি প্রভাবশালী চক্র নড়াচড়া শুরু করেছে এই সুযোগে।

বাঘাবাড়ি বিসিআইসি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত বাফার গোডাউনের ইনচার্জ সুদেব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামের চাহিদা অনুয়ায়ী আমদানীকারকরা চট্রগ্রাম থেকে জাহাজে সার এনে বন্দর থেকে সরবরাহ করে। চলতি বছরের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসে সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মে.টন ইউরিয়াসহ উত্তরাঞ্চলের ১৪ জেলায় ৩ লাখ মে.টনেরও বেশী প্রয়োজন হতে পারে। হরতাল-অবরোধের কারণে উত্তরের ১৬ জেলায় সার সময়মত পৌঁছতে না পারলে এমন সংকট সৃষ্টি হতে পারে। হরতাল-অবরোধ হলেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কদর বেড়ে যায়।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ওমর আলী শেখ জানান, গত ক’বছর থেকে ইউরিয়া সারের বরাদ্দ নিয়ে কোন ধরনের সমস্যা হয় নি। কতিপয় অসাধু আমদানীকারক ও ডিলার অধিকতর লাভের আশায় সাধারণত এ ধরনের তৎপরতা শুরু করে। এবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ কৃষি বিভাগ অনেকটাই তৎপর রয়েছে।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের মেঘনা তেল কোম্পানীর ডিপো ইনচার্জ শাহিদ হোসেন বলেন, সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত অন্যান্য সকল দিনেই ডিপো খোলা রেখে তেল সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ী বা ডিলারদের নিজ উদ্যোগে স্ব-স্ব স্থানে নিতে হবে। গতবছর রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে স্কট দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তেল সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসেসিয়েশন, সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, চলমান অস্থিরতা নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা চলছে। সিরাজগঞ্জ জেলা পেট্রোল পাম্প ও জ্বালানী তেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, হরতাল-অবরোধ বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় তেলের দাম বেড়ে যায়। বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে প্রচুর তেলের মজুদ আছে। আমাদেরও নিজস্ব পরিবহন ও জনবল আছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে উত্তরাঞ্চলে তেল ঠিকমত সরবরাহ করতে পারলে সঙ্কটের সম্ভবনা নাই। সিরাজগঞ্জ জেলা জালানী তেল, বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, হরতাল-অবরোধ শুরু হলেও এখনও সে ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়নি। ইরি-বোরো মৌশুমে হরতাল-অবরোধের সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের সাহায্য নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সার ডিজেল পৌঁছানো হয়। সার ও জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী ও ডিলাররা প্রয়োজন মনে করলে এবারও তাদের অনুরূপভাবে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।



মন্তব্য চালু নেই