সিনেমা দেখতে বসে আবেগে চোখে জল আসে? জানেন, আপনি কেমন মানুষ?
এমন ক্ষেত্রেও মনে রাখতে হবে, আপনি এক বিরল গুণের অধিকারী। আপনার ভিতরে রয়েছে গভীর শিল্পবোধ।
দেখতে বসেছেন ‘লগান’ অথবা ‘কাল হো না হো’। তীব্র আবেগের মুহূর্তে নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়ে কি? স্থান-কাল-পাত্র না মেনেই বাঁধ ভেঙে নেমে আসে চোখের জল? পাশে বসে থাকা গিন্নি অথবা বান্ধবী কি তাই নিয়ে প্যাঁক দেন আপনাকে? আর পরে এই অসুবিধের কথা ভেবে লজ্জায় মাথা নুয়ে আসে?
না, ঘাবড়ানোর কিছুই নেই। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, শুধু সিনেমা নয়, বই পড়তে পড়তে, গান শুনতে শুনতে, এমনকী কোনও পেন্টিং দেখতে দেখতেও যাঁদের অশ্রুপাত ঘটে, তাঁরা বিরল সৌভাগ্যবান। তাঁদের মতে, যাঁরা এই ‘সমস্যা’-য় ভোগেন, তাঁরা বিপুল নিঃস্বার্থপরতা থেকে এটা করে ফেলেন। তাঁরা অন্যের আবেগ বা অনুভূতিকে যতটা দ্রুত নিজের ভিতরে নিতে পারেন, ততটা অন্যরা পারেন না। এটাও ঠিক, যাঁরা এই অশ্রুপাত-সমস্যায়
ভোগেন, তাঁরা আবার দ্রুত নিজস্ব জীবনছন্দে ফিরেও আসতে পারেন।
ব্যাপারটা ততটা হালকা নয়। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, কোনও সিনেমা দেখতে গিয়ে অথবা বই পড়তে পড়তে আপনি তখনই চোখের জল ফেলবেন, যখন আপনি সেই সিনেমা বা বইয়ের ভিতরে নিজেকে খুঁজে পাবেন। অর্থাৎ, আপনার কোনও স্মৃতি সেই সিনেমা বা বইটি জাগিয়ে তুললেই আপনি তার সঙ্গে একাত্ম বোধ করতে পারেন। কিন্তু মুশকিল, ‘লগান’ বা ‘কাল হো না হো’-র সঙ্গে আপনার জীবনের মিলটা কোথায়? না, আপাতভাবে কোনো
মিল নেই। থাকার কথাও নয়। কিন্তু অবচেতনে সেই ছবি বা গ্রন্থের কোনও বিশেষ সিকোয়েন্সকে খুঁজে নেয় আপনার স্মৃতি। তার পরে তাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নেয় সংলাপের জন্য। সেই সংলাপই আপনাকে আবেগস্পৃষ্ট করে।
এমন ক্ষেত্রেও মনে রাখতে হবে, আপনি এক বিরল গুণের অধিকারী। আপনার ভিতরে রয়েছে গভীর শিল্পবোধ। চোখের জল এখানে আপনার দুর্বলতার পরিচায়ক নয়। বরং তা আপনার অন্তর্নিহিত শক্তিকেই ব্যক্ত করে। আর শিল্পের প্রতি আপনার সংবেদ যে সত্যিই জেনুইন, তার প্রমাণ ওই চোখের জলই। মনোবিদরা এই বিষয়টিকে ‘স্তাঁধাল সিনড্রোম’ বলে চিহ্নিত করেছেন। ১৯শতকের ফরাসি সাহিত্যিক স্তাঁধালের নামানুসারে এই ‘অসুখ’-এর নাম রাখা হয়। ১৮১৭ সালে স্তাঁধাল তাঁর ‘ফ্লোরেন্স: আ জার্নি ফ্রম মিলান টু রেজ্জিও’ গ্রন্থে তিনি এই সমস্যার কথা লিখেছিলেন। ১৯৭৯ সালে ইতালির মনোবিজ্ঞানী গ্রাজিয়েলা মাঘেরিনি প্রায় ১০০ জন মানুষকে সমীক্ষা করে এই সমস্যাকে চিহ্নিত করেন এবং তার নামকরণও করেন। তবে এটা কোনও ‘অসুখ’, না কি এটা এক অতি উচ্চ পর্যায়ের সুখেরই নামান্তর, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে মনোবিদদের মধ্যে। তবে এটা যে একটা বিরল গুণ, তা স্বীকার করেন সকলেই।-এবেলা
মন্তব্য চালু নেই