সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিলেন তারেক
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ঘোষণা দেন।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৪৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারেক এ ঘোষণা দেন। লন্ডনের অট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ।
তারেক রহমান বলেন, ‘চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ ও কৌশল হিসেবেই আসন্ন সিটি নির্বাচনে লড়াইয়ে থাকবে বিএনপি। সারাদেশে বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মী রয়েছে। গত কয়েক মাসে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মতামত নিয়েছি। তারা বলেছেন- শত জুলুম-নির্যাতন-কষ্ট সহ্য করে হলেও গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। তাদের মতামত, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এই ভোট ডাকাত সরকার এবং দলীয় নির্বাচন কমিশনের মুখোশ উন্মোচন করতেই নির্বাচনে যাওয়া প্রয়োজন।’
তারেক বলেন, ‘তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেক কর্মী বলেছেন- আওয়ামী লীগ ছলে-বলে-কৌশলে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের সেই অপকৌশল সফল হতে দেয়া যাবে না। কৌশলী হয়েই আমাদেরকে এগুতে হবে। আন্দোলনকে পৌঁছাতে হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।’
তিনি বলেন, ‘দূরে থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কথা দিচ্ছি, শিগগিরই নেতাকর্মীদের সামনে হাজির হবো। তখন দেশের জনগণের সঙ্গে, দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে দেখা হবে, মুখোমুখি কথা হবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘তফসিল ঘোষিত এলাকায় আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনী কাজ চলবে, সেই সাথে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’ একইসঙ্গে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সকল অপকৌশল প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন- আন্দোলনের গতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন দিয়ে তারা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। অংশগ্রহণ করে আমরা প্রমাণ করতে চাই, তাদের অধীনে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।’
বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি কারো নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করেননি। রেডিও কিংবা টেলিভিশনের ক্যামেরার জন্য অপেক্ষা করেননি। স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর নির্ভর করেই মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছেন। বর্তমানে যারা দেশের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করছেন, আপনারা সবাই শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। তাই কারো নির্দেশের জন্য অপেক্ষা নয়, আন্দোলনকে সফল গন্তব্যে নেয়ার জন্য নিজ নিজ এলাকায় প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিন, নিজেরাই নেতৃত্ব গ্রহণ করুন।’
তারেক বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, দিনের পর দিন মাসের পর মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের এই ত্যাগের পথ ধরেই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণের বিজয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবের শাসনামলের মতোই এখনো মানুষকে বেপরোয়া হত্যা ও গুম করা হচ্ছে। আমাদের দলের নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, আনিসুর রহমান খোকন, হুমায়ুন কবির পারভেজসহ অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুন হয়েছেন। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নয়, দেশে এখন কোনো পেশার মানুষের নিরাপত্তা নেই। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, দেশের সম্মানিত মানুষ সবাইকেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হচ্ছে। কথায় বলে- কাক কাকের মাংস খায় না। আওয়ামী লীগ সেটিও মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। ইতিহাসের সত্য তথ্য তুলে ধরার অপরাধে মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার মাসে সমন জারি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের জন্য প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর অবদানের কথা সবাই জানে। তার সাথেও কী আচরণ করা হচ্ছে, সেটি জনগণ দেখেছে। কিছু সত্য উচ্চারণের কারণে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনির পেছনেও লেগেছে তার দল।’
লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বলেন, ‘যারাই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইতিহাস বিকৃত করুক, আসল সত্য হচ্ছে জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের লেখা স্বাধীনতার ঘোষণা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দিয়েছেন। এটাই সত্য ইতিহাস। এটাই বাস্তব। ৭ মার্চ শেখ মুজিব রেসকোর্স ময়দানে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে তিনি চারটি শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তগুলো পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকেও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যদি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের চার শর্ত মেনে নিতো, তাহলে তিনি হতেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তাহলে কী একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসতো? জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শেখ মুজিবের সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হতে দেয়নি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি খুনের রাজনীতি, টেন্ডারবাজির রাজনীতি, দমনের রাজনীতি, ভোট চুরির রাজনীতি। আওয়ামী লীগ মানেই ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট। হিন্দুদের জমি-সম্পত্তি জবরদখল। স্বাধীনতার পর কিংবা বর্তমানে যখনই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে, তখনই গণতন্ত্র হরণ হয়। বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়। মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা থাকে না। নিষিদ্ধ করা হয় ভিন্ন মতের পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন। এর কারণ এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতবার নিরপেক্ষ এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, ততোবারই পরাজিত হয়েছে গণতন্ত্র বিরোধী আওয়ামী অপশক্তি। আর নির্বাচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধার দল বিএনপি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এখন জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান কমিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশে-বিদেশে সবাই জানতে চায় বাংলাদেশে কেন মানবাধিকার নেই। গণতন্ত্র নেই। ভোটাধিকার নেই। জনগণের স্বাধীনতা নেই। শেখ হাসিনা নাকি ওয়েস্ট মিন্সটার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। অথচ খোদ ওয়েস্ট মিন্সটারের কর্তা ব্যক্তিরাই হাসিনার গণতন্ত্র দেখে হাসাহাসি করেন। তারা জানতে চান, বিরোধী দলের সদস্যরা কিভাবে সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকেন?’
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপিয়ান কমিশনে একটি বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রদূতের থাকার কথা থাকলেও তিনি থাকেননি। কারণ হত্যা-গুম, গণতন্ত্র হত্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে তার কাছে জবাব দেয়ার কিছু নেই।’
তারেক বলেন, ‘দেশের চলমান আন্দোলন কেবল বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন নয়। এ আন্দোলন দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের। সমাজের সর্বস্তরের জনগণের। এ আন্দোলন দেশের ১৬ কোটি মানুষের। এ আন্দোলনের বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালিক, ব্যারিস্টার এম এ সালাম, উপদেষ্টা মুজিবুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুস সামাদ মামুন, আকতার হোসেন, প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক নাসিম আহমদ চৌধুরী, যুগ্ম-সম্পাদক হেলাল নাসিমুজ্জামান, ফেরদৌস আলম প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই