সালাহ উদ্দিন ইস্যুতে বিএনপি নীরব কেন?
দুই মাস পর সালাহ উদ্দিন আহমদের সন্ধান মেলায় পরিবারের সঙ্গে বিএনপিতেও স্বস্তি ফিরেছে।
কিন্তু তরতাজা এই ইস্যু নিয়ে বিএনপির অস্বাভাবিক নীরব ভূমিকায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।চলছে নানা কানাঘুষাও। বলাবলি হচ্ছে-এত কিছু নিয়ে বিএনপি এতো কথা বলে, অথচ দলের এই প্রভাবশালী নেতার ভারতের মেঘালয়ে খোঁজ মেলা নিয়ে কোনো কথা বলছে না কেন? এমনকি দলের চেয়ারপারসনও যেন মুখে কুলুপ এটেছেন।
নিশ্চুপ দলটির শীর্ষ নেতারাও। সাংবাদিকরা এই ইস্যুতে জানতে চাইলেও দলের নেতারা কথা বলতে চান না। বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারলে যেন তারা বেঁচে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কেউ কেউ বলছেন কৌশলগত কারণেই এই চুপ থাকা।
আবার অনেকে বলছেন, সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের পর সার্বিক বিষয়ে আগে দল অবহিত হবে এবং এর পরই দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়া যেতে পারে।
দলীয় আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠুভাবে সালাহ উদ্দিনের দেশে ফিরতে নতুন করে যাতে করে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয় সে জন্যই বিএনপি অনেকটা চুপ থাকার এই কৌশল নিয়েছেন।আর এ কারণেই তারা এ ইস্যুতে কোনো বিরুপ মন্তব্য করতে চাইছেন না।
গত সোমবার ভারতের মেঘালয়ে সালাহ উদ্দিনের সন্ধান মেলে। প্রথমে মানসিক হাসপাতালে নেয়া হলেও বর্তমানে অন্য একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।ধীরে ধীরে তিনি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে উদ্ধারের পর অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।মামলা নিষ্পত্তি না হলে তার দেশে ফেরা নিয়েও একটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
সালাহ উদ্দিনের সন্ধান পাওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বেশ তৎপর দেখা গেলেও তাঁর সন্ধান পাওয়ার পর তিনি এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এর পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেও ছিলেন অস্বাভাবিক নীরব।সন্ধান পাওয়ার তিনদিন আগেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন সালাহ উদ্দিন র্যাবের কাছে আছে এবং এর প্রমাণ আামাদের কাছে রয়েছে।
বিএনপির এই অস্বাভাবিক নীরবতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।অনেকে পত্রিকা অফিসে ফোন করেও বিএনপির রহস্যময় নীরবতা নিয়ে জানতে চেয়েছেন।
গত বুধবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে দলের মূখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনও সালাহ উদ্দিনের বিষয় কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
সবশেষ, বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সালাহ উদ্দিন ইস্যূতে বিএনপি চুপ কেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “বিএনপি নিশ্চুপ নয়। কৌশলগত কিছু দিক রয়েছে। সালাহ উদ্দিন নিজেও এখনো অনেক বেশি আতঙ্কগ্রস্ত।”
পরে অবশ্য মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “মোহাম্মদ শাহজাহান কৌশলগত শব্দটি বলতে চাননি। কোনো কৌশল নয়, তারা চান আগে সালাহ উদ্দিন ফিরে আসুন। সালাহ উদ্দিনের প্রকৃত অবস্থা জানা দরকার। তার পরিবারের সদস্যরা দ্রুত মেঘালয়ে যাবেন। তখন তার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। এরপর বিএনপি বক্তব্য দেবে।”
তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এটা এখন বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।তাই সালাহ উদ্দিনকে ফিরে পেতে কোনো ধরণের জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
অন্যদিকে সোমবার থেকে ভিসা পেতে ভারতীয় হাইকমিশনে দৌড়ঝাঁপ করলেও এখনো তা পায়নি সালাহ উদ্দিনের পরিবার। ভিসা পেতে তারা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলে তা সহজ হবে বলে মনে করলেও বিলম্বের কারণে নেতাদের এ নিয়ে তাদের সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির মধ্যম সারির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এতবড় একটি ঘটনায় ভিসার আবেদনের পর কেন সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বুঝতেছি না। সরকার একটু আন্তরিক হলে ভিসা পেতে এতো সময় লাগতো না।”
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ি করলেও ভারত থেকে সালাহ উদ্দিনের সন্ধান মেলায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলায় এই চাপ আরো বেড়ে গেছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, দেশে সহিংসতার মামলায় সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তাই ফেরার পর তাকে কারাগারে যেতে হবে এমনটা প্রায় নিশ্চিত।বিএনপির মূল ভাবনা হলো-সুস্থভাবে সালাহ উদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনা।
তবে কোনো ধরণের উসকানীমূলক বক্তব্য এক্ষেত্রে সমস্যার তৈরি না করে এজন্যই কেউ মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে: জেনারেল (অব.)মাহবুব হোসেন বলেন, “একটু সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে সেটা যেমন ঠিক, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক এটাও কিন্তু ঠিক।আমরা চাই সরকার ভিসা পেতে এবং সালাহ উদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।”
একইসঙ্গে তিনি পুরো ঘটনার সঠিক তদন্ত করে একটি স্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।
মন্তব্য চালু নেই