সালাত কায়েম করা আল্লাহর হুকুম
প্রথমেই জানা দরকার কায়েম অর্থটি তারপর জানা দরকার কিভাবে কায়েম হবে?
কায়েম শব্দটি অভিধানিক বাংলা অর্থ হচ্ছে- অবিরত, প্রতিষ্ঠিত, খাড়া, এবং সর্বদা। আপনি আরবী হইতে বাংলা অভিধানটি খুললেই আমার সাথে দ্বিমত করার কোন সুযোগ পাবেন না। আমাদের আলেম সাহেবগন মাদ্রসার শিশুদের ছোট বেলা থেকে শিক্ষা দিয়ে আসছেন ৫ ওয়াক্ত নামায জামাতের সহিত পড়াই হলো কায়েম করা। নিজে পড়া এবং সবাইকে নিয়ে জামাতে পরার নামই কায়েম করা। হাঁয়রে কপাল! আল্লাহ পবিত্র কোরআনের একাধিক বারই বলেছেন যার যার বোঝা তাকেই বহন করতে হবে। তবে জামাতে নামায আদায় করলেই কায়েম হবে কি করে? কায়েম শব্দটি যেহেত অবিরত সেহেতু আপনার নামাযের সাথে তো আমার নামায শুরুও হয় না শেষও হয় না। যে ওয়াক্তে আমি বাড়িতে থাকি তবে তো আপনাদের নামায কায়েম হয় না যেহেতু আমাকে সামিল করতে পারেন নাই। আর যার যার কায়েমী নামায যদি তার তার হয় তবেই সেটা কায়েম করা সম্ভব। কারণ আল্লাহ বলেছেন জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সালাত(উপাশনা/স্মরণ) কায়েম করতে। আমরা একসাথে জন্মাইও না মরবোও না। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই কায়েম যার যার তার তার যেমন আল্লাহ কোরআনে বলেছেন যার যার বুঝা তার তার। কায়েম কিভাবে হয় সেটা আমি আলোচনা করবো তার আগে একটি গল্প।
আমাদের এলাকার এক মসজিদের সেক্রেটারী জুম্মার নামাজের জন্য খতিব খুজচ্ছেন এবং প্রতি জুম্মায় ইন্টার্ভিউও নিচ্ছেন এমনিতেই কয়েক মাস পার করে দিলেন। তার চোখে ভাল খতিব পরছে না, তাই খতিব নির্ধারন করতে পারছেন না। জানতে চাওয়া হল খতিবের ইন্টার্ভিউ কে নিবে। জবাবে, তিনি বললেন আমরাই নিবো। আপনি কি আরবীর ভাল জ্ঞান রাখেন? বললেন আমি আরবী জানি না, তবে শুনলেই বুঝতে পারবো! গ্রামে একটা কথা প্রচলন আছে শুটকির নৌকা বিড়াল চৌকিদার। এই হলো আমাদের দুর্ভাগ্য। আর যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তারা শুধু ফটর ফটর আরবী বলে যান তারা অর্থ কিছু বলতে পারেন না। এই জন্যই নামাজ কায়েম করার এই অবস্থা। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা মরিয়াম এর ১৯:৩১ নং আয়াতে সালাত কায়েম করতে বলেছেন জন্ম হইতে মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত অবিরতভাবে, নির্বিছিন্ন, বিরতিহীন ভাবে। কই আমরা তা করছি? মনে করেন কেউ এশার নামায আদায় করতে লাগে ১৫,২০,২৫ মিনিট বৃদ্ধ মানুষের বেশীর মধ্যে ৩০ মিনিট তাহলে কিভাবে সমতা হয়। আমি সাধারন ভাবে আলোচনার মাধ্যমে কায়েম শব্দটি ব্যাখ্যা করে বুঝাতে চাই।
১/ একটি শিশু মাতৃগর্ভে ৯ মাস ১০দিন কায়েম থাকার পর ভুমিষ্ট হয়। শিশুটি কিন্তু সব সময়ের জন্যই মায়ের পেটেই থাকে সে কিন্তু মাঝে মাঝে বের হয় না বাচ্চাটি স্থায়ী সেখানে। ২/ সরকারী অফিস টাইম সকাল ৯টা হতে ৫টা এই সময়টুকু সরকারী চাকুরীজীবিদের জন্য কায়েমী সময়। সরকারী কর্মচারীদের জন্য ঐ অফিস সময়টা অন্য কোন কাজ করা বৈধ নয় পিয়ন থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তা পর্যন্ত।
১৯:৩১ নং আয়াতে আল্লাহর কায়েমী সময়টা হচ্ছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। আল্লাহ কোরআনে যেখানেই নামায় কায়েম করার কথা বলেছেন সাথে যাকাতের কথাও বলেছেন। তবে একটি কথা আল্লাহর সালাত যারা কায়েম করে তারা সাথে সাথে যাকাতও আদায় করেন। কারণ আকিমুস সালাত আর ওয়াতুস যাকাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই সালাতের জন্য আল্লাহ কোন ওযু গোশলের কোন শর্ত দেন নাই। কিন্তু ওয়াক্তিয়া সালাতের পূর্বে আল্লাহ ওযু গোশলের কথা বলেছেন। যা কিনা সূরা মায়িদার ৫:৬ নং আয়াতটি দেখলেই আপনি পরিষ্কার হতে পারবেন। নিজ জ্ঞানে বিচার করে বুঝের জন্য কোরআনের আয়াত গুলি দেখার অনুরোধ করছি আপনাদের জন্য নিচে আয়াতগুলি উল্লেখ করছি। দুইটি আয়াত পড়ে সহজেই বুঝা যায় নামায পড়া আর কায়েম করা এক জিনিষ নয়।
১৯:৩১ # ‘আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করতে।’
৫:৬ # ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না।’
আসলে সালাত (নামাজ) পড়ার মত কোন বিষয়ই নয়। এটা কোন কিতাবও নয় জামা-কাপরও নয় যে প্রচলিত শব্দ ‘পরবে’ ব্যবহার করা যাবে। সালাত (নামাজ)আদায় করতে হবে নয়তো কায়েম (খাড়া) করতে হবে। সালাত অর্থ তো স্মরণ বা উপাসনা। সূরা নিসার এবং আল ইমরানের দুটি আয়াত
৪:১০৩# যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। ৩:১৯১# যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। এই আয়াত দুটির দিকে খেয়াল করলেও বুঝা যায় সালাতের আলাদা আলাদা প্রকার ভেদ।
কায়েম শব্দের অর্থ যেহেতু অবধারিত। আল্লাহ প্রদত্ত কায়েমী কিছু বর্জন করার সাধ্য কার আছে? আল্লাহ বৃষ্টি না দিলে কেউ কি বৃষ্টি নামাতে পারবেন? এমনকি আল্লাহ তিনদিন যাবৎ অবিরত বৃষ্টি দিলে কেউ থামাতেও পারে না! আল্লাহ প্রদত্ত কায়েমী কোন কিছু বর্জন করার উপায় নাই। তা আমরা সূরা হজ্জ এর ২২:১৮ নং ‘তুমি কি দেখনি ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায়, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং কিছু সংখ্যক মানুষ।’
এই আয়াতে স্পষ্ট আছে আল্লাহর হুকুম ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পালন না করার কোন উপায় নাই। কিন্তু উক্ত আয়াতটিতে আল্লাহ এও বলছেন কিছু সংখ্যক মানুষ সব মানুষের কথা বলেন নাই। এতে আমি বুঝতে পারছি সব সৃষ্টিই বস্যতাস্বীকার করছে। মানুষের মধ্যে যারা বুঝে করছে তারা মানুষের অন্তর্গত আর যারা না বুঝে করছে তারা মানুষের অন্তর্গত নয়। আমার কথায় রেগে আফসোস করবেন না যে কেন কষ্ট করে পড়লাম। আমি মন গড়া কথা বলছি না। সূরা আনামের ৬:৩৮# ‘আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই এক একটি উম্মত(জাতি)।’ অবলা প্রানী জগৎ থেকে যারা নিজেদের আলাদা করতে পেরেছেন। তারাই কায়েমী নামাযের সন্ধান পেয়েছেন।
মুসলমানদের মধ্যে শরিয়তের আলেমগন বলেন সকলকে নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করাই কায়েম করা। এটা যে সঠিক নয় উপরের আলোচনায় বুঝাতে চেষ্টা করেছি। আর একদল আছেন মারেফতের অনুসারী তারা বলেন যার যার ওলিল আমর অর্থাৎ পির। পিরের চেহারা ধ্যান করার নামই স্মরণ। যেটা একেবারেই কোরআন বিরোধী কাজ কুফরী শেরেকি গুনাহ। আল্লাহর সমকক্ষ দাড় করানোকারীদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
কায়েমী নামাজ সঠিক হওয়ার জন্য বায়াত হওয়াও জরুরী এটাও রাছুল সা. এর হাদীস থেকে পাওয়া যায়। হাদিসটি বুখারী শরীফের থেকে উল্লেখ করছি নিম্নে। ইসলামি ফাউন্ডেশন হইতে প্রকাশিত বুখারী শরীফ থেকে গৃহীত ৪৯৯ নং উল্লেখ আছে ‘মুহাম্মদ ইবনুল মুছান্না (র.) জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ এর নিকট সালাত আদায়, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলমানকে নসীহত করার জন্য বায়আত গ্রহন করেছি।’
আপনাদের কাছে আকুল আবেদন রইল যেভাবে সালাত কায়েম হয় সে রাস্তা খুজে বের করুন যে জানেন তার কাছে যাওয়াও আল্লাহরই হুকুম।-২১:৭ আয়াত।
মন্তব্য চালু নেই