সালাউদ্দিনের সাফাই গাইলো বেদনাহত বিএনপি
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহাল রাখায় বেদনাহত হয়ে দলটি হতাশ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাকার রায় প্রসঙ্গে এ প্রতিক্রিয়া জানান। এ সময় যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিনের পক্ষেই সাফাই গান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘আজ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায় বহাল রাখায় আমরা হতাশ, বিস্মিত ও বেদনাহত হয়েছি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো বা তাদের অপরাধের বিচারের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট। আমরা সর্বদা এ বিচারের পক্ষে।’
রিপন বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম- এই বিচারের প্রক্রিয়া হতে হবে সকল রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপমুক্ত পরিবেশে, স্বচ্ছ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে। এটা কোনোভাবে যেন কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার না হন এবং অভিযুক্তদের প্রতি যেন ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত ছিল। তারপরও আমরা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের প্রতি বরাবর আস্থা রেখে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এদেশের একজন জনপ্রিয় ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাকে ৬ বার জাতীয় সংসদে তার নিবার্চনী এলাকার জনগণ প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তার কণ্ঠা ছিল সুউচ্চ।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী যেসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তিনি তার সংশ্লিষ্টতা সব সময় অস্বীকার করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি যে দেশে ছিলেন না, এর স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদিও আদালতের বিবেচনায় উপস্থাপন করেছিলেন। ওই সময়ে দেশে তার অনুপস্থিতির দাবির স্বপক্ষে তিনি দেশে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককেও স্বাক্ষী মেনেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি।’
আপিল বিভাগে ফাঁসির রায় বহাল থাকায় বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযুক্ত হওয়ায় আমরা বিস্মিত। তার আইনজীবীদের মতো আমাদের দলও মনে করে তিনি ন্যায় লাভ করেননি। অন্যায়ভাবে তাকে মৃতুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ ও সত্যিই মর্মাহত। আমাদের দল মনে করে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। আমাদের দল আরো মনে করে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচারে আইনি স্বচ্ছতার অভাব ও নানা ক্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে।’
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রিপন বলেন, ‘পৃথিবীর বহুদেশে অনেক দণ্ডাদেশের পর পযার্লোচনায় এসেছে- ভিকটিমদের প্রতি কাযর্কর করা অনেক রায় ক্রটিপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেয়া রায় যেন ভবিষ্যতে একটি ‘জুডিশিয়াল কিলিং’র ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত না হয়। সেজন্য প্রত্যাশা করবো, এই রায়ের রিভিউ চলাকালে ভবিষ্যতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ন্যায় বিচার থেকে যেন বঞ্চিত না হন। বিএনপি বরাবরই বিচার বিভাগের প্রাজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে থেকে সুবিচার প্রত্যাশা করে।’
মন্তব্য চালু নেই