সামাজিকতা আর বন্ধু বাৎসল্য কমিয়ে দেয় ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা

বুদ্ধিমান মানুষেরা কি একা থাকতে ভালবাসে? অথবা বন্ধুদের সাথে ভালো যোগাযোগ বা বেশি মানুষের মাঝে থাকা কি প্রভাবিত করে তাদের বুদ্ধিমত্তাকে? শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এমন বিতর্ক নিয়েই গবেষণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দুইজন প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী “সামাজিক যোগাযোগ মানুষের জীবনের সন্তুষ্টি বাড়ায়”- এমন আধুনিক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এর সন্তোশী কানাযাওয়া এবং সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নরমান লি তাদের প্রস্তাবনায় বলেন, প্রাচীনকাল থেকে যে মৌলিক সামাজিক দক্ষতা তৈরি হয়েছে তা আজকের যুগে ভালো থাকাকে প্রভাবিত করে চলেছে।

কানাযাওয়া ২০০৪ সালে ‘সাভানা প্রিন্সিপাল’ নামে একটি থিওরি দেন। সেখানে তিনি বলেন, অতীতের অনেক কিছুই আছে যা সে সময় ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল বটে কিন্তু আজ আর নেই। যেমন, এক সময় চিনি আর চর্বি জাতীয় খাবার মানুষের সৌন্দর্য্য বাড়ায় বলে বেশি খেতে বলা হত। কিন্তু আজ আমরা জানি, এধরণের খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে স্থূলতাসহ নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়। একইভাবে যৌনতা, ঈর্ষা সবকিছু সম্পর্কেই আমাদের ধারণা বদলেছে সময়ের সাথে সাথে।

একটি দীর্ঘমেয়াদি জরিপের তথ্য গ্রহণ করা হয়। ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সীদের মাঝে করা হয়েছিল এই জরিপ। তাদেরকে বলা হয়েছিল জীবন সম্পর্কে তারা কেমন সন্তুষ্ট সে বিষয়ে নিজেই মতামত দিতে।

২টি বিষয়কে এখানে প্রধাণ বিবেচ্য ধরে নেওয়া হয়। একটি হল, পূর্বের সময় থেকে যা এখন বেশ ভালভাবেই আলাদা অর্থাৎ জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের পৌনঃপুনিকতা।

ফলাফল যেমন ভাবা হয়েছিল, ঘটল তেমনই। দেখা গেল, অধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের জীবন সম্পর্কিত তৃপ্তি তুলনামূলক কম। তবে বন্ধুদের সাথে নিয়মিত সাক্ষাত মানুষের ইতিবাচক স্পৃহা বাড়ায়, প্রেরণা তৈরি করে।

এই দু’টি বিষয়ই জড়িত বুদ্ধিমত্তার সাথে। ওয়াশিংটন পোস্ট এর ওনকব্লগ অনুসারে, সুখী মানুষের সংখ্যা শহরের তুলনায় বেশি ছোট এলাকাগুলোতে। গবেষণায় যাকে বলা হয়েছে ‘আর্বান রুরাল হ্যাপিনেস গ্রেডিয়েন্ট’।

কানাযাওয়া এবং লি মনে করেন, সামাজিক দৃঢ় বন্ধন প্রয়োজন ব্যক্তির টিকে থাকার স্বার্থে, সঙ্গী পাওয়ার জন্যে। কিন্তু বুদ্ধির বিকাশের জন্য চাই একান্ত কিছু সময়। এই দুই মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগ আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্ককে সামাজিকতা রক্ষা সহ নানান গুরুত্বহীন কাজে ব্যস্ত করে রাখে। এতে মানুষ প্রকৃত স্মার্ট হওয়ার পরিবর্তে মানিয়ে নেওয়া, অপরকে খুশী করা, অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা, অন্যের মত হতে চাওয়ার পেছনে সময় ব্যয় করে।

যারা প্রকৃতই বুদ্ধিমান তাদের বন্ধু কমই থাকে। কারণ অপ্রয়োজনীয় সামাজিকতার পরিবর্তে তারা বেছে নেয় নিজেকে বিকশিত করার পথ। তারা শ্রম দেয় দক্ষতার তৈরির দিকে। নিজের সাথে তারা অনেক বেশি সময় কাটায় যাতে তারা বুঝতে পারে কোথায় আরও শাণিত হওয়া প্রয়োজন।



মন্তব্য চালু নেই