সাবধান! রং–তারপিন দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল পেট্রল ও ডিজেল
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সোনার বাংলা বাজারে অবৈধ তেলের ডিপো এবং ভেজাল পেট্রল, ডিজেল ও লুব্রিকেন্টস তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ওই কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল জ্বালানি তেল তৈরি হয়ে বাজারজাত হয়ে আসছিল। পুলিশ কারখানার মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শনিবার রাতে এ অভিযান চালানো হয়।
গ্রেপ্তার তিনজনসহ পাঁচজনকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে বরিশাল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এই তিনজনকে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন কারখানার মালিক মো. সাইফুল ইসলাম (৪৫), প্রধান ব্যবস্থাপক মানিক হোসেন (৩৫) ও হিসাবরক্ষক গোপাল বিশ্বাস (৩২)। তাঁদের কাছে ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অভিযান টের পেয়ে বিপণন ব্যবস্থাপক মো. রুবেল (৩০) ও অপারেটর জুয়েল (২৬) পালিয়ে যান। ডিপো ও কারখানাটি তাৎক্ষণিক সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, কারখানার কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের গাববাড়ি গ্রামের সাইফুল ২০১১ সালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সোনার বাংলা বাজারে মেসার্স সালমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করে খুচরা জ্বালানি তেল বিক্রি শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানের সামনে ছোট একটি শো-রুম দিলেও পেছনে বিশাল একটি বদ্ধ টিনশেড ঘরে স্থাপন করেন অবৈধ তেলের ট্যাংক। ওই ঘরে উৎপাদন করতেন ভেজাল পেট্রল, ডিজেল ও লুব্রিকেন্টস। ভেজাল এসব তেল গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, হিজলা, মুলাদি, উজিরপুর ও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পরিবেশক হিসেবে সরবরাহ ও বাজারজাত করে আসছিলেন সাইফুল।
অভিযানে অংশ নেন উজিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গাজী শামছুর রহমান, মো. হাবিবুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলাম। তাঁরা বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জানার পর শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝুমুর বালাকে নিয়ে ওই কারখানায় অভিযান চালান। এ সময় টিনশেড ঘরের মধ্যে স্থাপন করা ২২ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংক আবিষ্কার করা হয়। এটি ভেজাল তেলে ভর্তি ছিল। এ ছাড়া সেখানে ভেজাল তেল তৈরির রং, তারপিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত গোপাল বিশ্বাস উজিরপুর মডেল থানায় বসে সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ বছর আগে সাইফুল মহাসড়কের পাশে সোনার বাংলা বাজারে সেলিম হাওলাদারের দোকান ভাড়া নিয়ে খুচরা জ্বালানি তেল বিক্রি শুরু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতে তিনি ভেজাল পেট্রল, ডিজেল ও লুব্রিকেন্টস বিক্রি শুরু করেন। এক বছরের মাথায় তিনি ভেজাল তেল মজুত ও বাজারজাত করার জন্য গোপনে ২২ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংক স্থাপন করেন। এই তেল যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পরিবেশক পরিচয়ে বিভিন্ন উপজেলায় বাজারজাত করতেন সাইফুল।
ভেজাল জ্বালানি তেল তৈরি ও বিক্রির কথা স্বীকার করে কারখানার মালিক সাইফুল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বেশি মুনাফার জন্য এ কাজ করেছেন।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, অবৈধ ডিপো স্থাপন, ভেজাল তেল তৈরি ও বিক্রির অপরাধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেছেন এসআই মো. হাবিবুর রহমান।
মন্তব্য চালু নেই