সাবধান! ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চুরি করে প্রতারণার নতুন কৌশল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নুসরাত জাহানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর ফেসবুকের বন্ধুদের ইনবক্সে একটা মেসেজ যায়। মেসেজে লেখা, ‘একটা হেল্প (সাহায্য) করতে পারবি? ’ কী সাহায্য জানতে চেয়ে বন্ধুরা ফিরতি মেসেজ দিলে উত্তরে বিকাশের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা পাঠানোর কথা বলা হয়।
শুধু একজন বন্ধু নয়, কয়েকজনের কাছে এ মেসেজ যায়। মানুষ ভেদে টাকার পরিমাণ এক হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। অথচ এর কিছুই জানতেন না নুসরাত জাহান। এমন মেসেজ পেয়ে বন্ধুরা নুসরাতের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে নুসরাত বুঝতে পারেন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য কেউ এই কাজটি করছে।
শুধু নুসরাত জাহান নয়, সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা আরও অনেকের সঙ্গে ঘটেছে বলে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়। সবক্ষেত্রেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচিতজনদের কাছে টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
.
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক সুকর্ণ বড়ুয়া বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলোকে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা বলে না। পাসওয়ার্ড চুরির মাধ্যমে এগুলো করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সচিব ও মুখপাত্র সারওয়ার আলম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় আমরা সরাসরি কিছু করতে পারি না। ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি যেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হয়। যদি সে ক্ষমতা পাওয়া যায় তখন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এর আগে পর্যন্ত আমাদের কাছে যারা আসেন তাঁদের বিভিন্ন পরামর্শ আমরা দিই।’
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেন। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার দায়িত্বটা নিজেদের। বন্ধু হোক বা পরিচিত হোক কেউ এভাবে টাকা চাইলে তা না দিয়ে অবশ্যই ফোনে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।’
পাসওয়ার্ড চুরি ঠেকানোর উপায়:
বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুকর্ণ বড়ুয়া এ ধরনের পাসওয়ার্ড চুরি ঠেকানোর কয়েকটি পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন।
সুকর্ণ বড়ুয়ার মতে, বিশেষ করে সাইবার ক্যাফেগুলোতে ‘কী লগার’ নামের এক ধরনের সফটওয়্যার থাকে। এ সফটওয়্যারগুলো পাসওয়ার্ড মনে রাখে। ফলে কেউ যদি সাইবার ক্যাফেতে ফেসবুক বা ইমেইল চালু করে তবে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। তাই সাইবার ক্যাফেগুলোতে ফেসবুক বা ইমেইল ব্যবহার না করাই ভালো।
নিজের মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং আইপ্যাড ছাড়া অন্যের এ সব ইলেকট্রনিকস ডিভাইস থেকে ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। ফেসবুক চালু করার সময় ‘রিমেম্বার পাসওয়ার্ড’ নামে যে অপশন আছে সেটি উঠিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ‘মোজিলা’ ব্রাউজার দিয়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘প্রাইভেটলি ব্রাউজ’ অপশন দিয়ে যদি ব্যবহার করা হয় তাহলেও ব্রাউজারটি পাসওয়ার্ড মনে রাখবে না।
সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ফেসবুক ও ইমেইলে ‘ডাবল ভেরিফিকেশন’ অপশনটি চালু করে দেওয়া। এটি করা হলে কম্পিউটারে ফেসবুক চালু করার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলেও একটি কোড আসবে। সেই কোড দিয়ে ফেসবুক বা ইমেইল চালু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কারও পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে গেলেও নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে আসা কোডটি না থাকায় ফেসবুক বা ইমেইল চালু করা সম্ভব হবে না।
মন্তব্য চালু নেই