সাপ যখন আকাশে উড়ে
সাপ নিয়ে কিছু কথা (ভিডিও)
সাপ যখন আকাশে উড়ে
আকাশে উড়তে পারে? পারে বৈকি। তবে সব গুলো নয়। মোটামুটি ৫ প্রজাতির সাপ উড়তে পারে। তবে এই উড়াকে পাখির আকাশে উড়ার সাথে তুলনা করা যাবে না। সাপের উড়ার পদ্ধতি অনেকটা গ্লাইডিং এর মত। মোটামুটি ৮০ ফিট দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম এরা। লাফ দেয়ার সময় এরা সরাসরি নিচের দিকে না পড়ে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অনেকটা গ্লাইডার এর মত এরা একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছে উড়ে যায়।
বিজ্ঞানিরা সাপের উড়ার ছবি এবং ভিডিও ধারন করেছেন। তারা গবেষনা করেছেন সাপ কিভাবে এই কাজটি করে থাকে। ‘আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি’ লং বিচে হওয়া এক মিটিং এ বিশ্লেষন করার চেস্টা করেছেন সাপের উড়ার পদ্ধতিটি। তাদের মতে, উড়ার সময় সাপ তাদের ওজন কমিয়ে ফেলছে না বা অসম্ভব কিছুও করছে না। এধরনের সাপগুলো শরীরের আকৃতি অনেকটা ভোঁতা যা উর্ধমূখী বাতাসের দ্বারা কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর সাপের আকৃতি অনেকটা এরো ডায়নামিক অর্থাৎ দ্রুতগতিতে সামনের দিকে যাওয়ার সময় বাতাসের দ্বারা খুব একটা বাধাপ্রাপ্ত হয় না। চিতা কিভাবে দ্রুত দৌড়াতে পারে এই সম্পর্কিত একটি পোস্টে এরো ডায়নামিক শেপ নিয়ে লেখা হয়েছে। এধরনের সাপগুলো একটু বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। উড়ার পূর্বে এরা শরীরকে বিশেষ একটি আকৃতিতে নিয়ে আসে এবং তীব্র বেগে সামনের দিকে ছুঁড়ে দেয়। এরপর শরীরকে আগ-পিছ করে বাতাসের সাথে একটি সামঞ্জস্যতা তৈরি করে নেয় যা এটিকে অনেকটা সামনের দিকে নিয়ে যায়।
একদল বায়োলজিস্ট উড়ন্ত সাপকে ৪৯ ফিট উঁচু টাওয়ার থেকে ছেড়ে দেয়া এবং এর উড়ার দৃশ্যটি ভাল মানের ক্যামেরায় ধারন করা হয়। এরপর সেই ভিডিও বিশ্লেষন করে তারা বিভিন্ন তথ্য বের করেন। সাপের উড়ার এই পদ্ধতির উপর নির্ভর করে বিশেষ ধরনের আকাশযান তৈরির কথাও তারা ভাবছেন যেটি কম জ্বালানি খরচ করবে।
বীণের তালে কি সাপ নাচে?
সাপের শ্রবণ ও ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত দুর্বল। অথচ সাপের এই দুটো ইন্দ্রিয় শক্তি নিয়েই আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে নানা গালগল্প। আজও বেদেরা বীণ বাজিয়ে গ্রামে গ্রামে সাপ ধরে বেড়ায়; সাপুড়েরা হাটে-বাজারে সাপের খেলা দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে তাবিজ-কবচ বিক্রির পায়তারা করে।
আবার এও শোনা যায়–হাসনাহেনা বা সুগন্ধি ফুলের গন্ধে বিমোহিত হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে সাপ ছুটে আসে।মজার ব্যাপার হচ্ছে–সাপের কান নেই, চেরা জিব দিয়ে তারা শব্দ শোনে। একারণেই সাপকে ঘন ঘন জিব বের করতে হয়। সাপের জিবের সেই শ্রবণ শক্তিও এত দুর্বল যে, বীণের শব্দে পাগল হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তেমনি হাসনাহেনা কিংবা কোনো সুগন্ধি ফুলের গন্ধে মোহিত হওয়ার মতো ঘ্রাণ শক্তিও সাপের নেই। বীণ বাজিয়ে সাপখেলা দেখানোর সময় সাপুড়েরা একধরনের কৌশলের আশ্রয় নেয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সাপুড়ে হাত ঘুরিয়ে যখন বীণ বাজায় তখন বীণের তালে তালে সাপুড়ে তার নিজের শরীরটাকেও নাচায়।
সাপ প্রায় নির্বোধ ধরনের প্রাণী, তাদের দৃষ্টি শক্তি তেমন প্রখর নয়। তাই বীণের তালে তালে ঘুরতে থাকা সাপুড়ের হাতও দুলতে থাকা শরীর সাপের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। সাপ বুঝে উঠতে পারে না তখন তার কী করা উচিত। তাই একটু ভালো করে বোঝার জন্য, একটু ভালো করে দেখার জন্য সাপও সাপুড়ের সাথে সাথে দুলতে শুরু করে। আমরা সেই দুলনিকেই সাপের নাচ বা খেলা বলে ভুল করি।
https://www.youtube.com/watch?x-yt-ts=1422579428&v=u-GBt2TjePc&feature=player_detailpage&x-yt-cl=85114404
বীণ বাজিয়ে গর্ত থেকেসাপুড়ে কোনো সাপকে বাইরে বের করে এনেছে তা কেবল গল্পেই শোনা যায়। গর্তে পানি না ঢেলে কিংবা খোন্তা-কোদাল দিয়ে গর্ত না ভেঙ্গে সাপকে গর্ত থেকে বের করে আনা অসম্ভব।
এখন প্রশ্ন হতে পারে এত কম শ্রমবণ শক্তি নিয়ে সাপ চলাফেরা ও খাদ্য সংগ্রহ করে কীভাবে?
https://www.youtube.com/watch?x-yt-ts=1422579428&v=IVvJLXFxp7c&feature=player_detailpage&x-yt-cl=85114404
আগেই বলেছি, সাপ শব্দ শোনার জন্য জিব ব্যবহার করে। শুধু এই জিব দিয়ে সাপের শ্রবণ চাহিদা ষোলোআনা মেটে না। সাপের পেটের তলার আঁইশে এক ধরনের স্নায়ুতন্ত্র আছে। এই আঁইশের সাহায্যে মাটি থেকে উচ্চ মাত্রার কম্পনযুক্ত শব্দ তরঙ্গ (ভাইব্রেশন) সংগ্রহ করে সাপের মস্তিষ্কে চালান করে দেয়। মূলত সাপ এভাবেই শত্রু ও খাদ্য দ্রব্যের অবস্থান কত দূরে তা বুঝতে পারে।
তাবিচ-কবচের জোরে নাকি সাপকে বশ করা যায়!
https://www.youtube.com/watch?v=aP8pZS3WxNo&x-yt-ts=1422579428&feature=player_detailpage&x-yt-cl=85114404
তাবিজ-কবচের ব্যাপারটা পুরোপুরি ধাপ্পা। আসলে সাপুড়েরা দীর্ঘ দিনের অনুশীলনের দ্বারা সাপকে বশ মানানোর কৌশল আয়ত্ব করে ফেলে। তেমনি কবিরাজেরা মন্ত্র পড়ে সাপের বিষ নামায়–এ ব্যাপারটাও সম্পূর্ণ বুজরুকি। কিছু নির্বিষ সাপেকাটা রোগিকে বিষধর সাপে কাটা বলে মন্ত্র-টন্ত্র পাঠ করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষধর সাপেকাটা কোনো রোগিকে সাপুড়ের কাছে নিলেই কোথায় হারিয়ে যায় তাদের সেই মন্ত্রের বাহাদুরি!
https://www.youtube.com/watch?feature=player_detailpage&x-yt-ts=1422579428&v=jrz8lMd219Q&x-yt-cl=85114404
এমন গল্পও হয়তো শুনেছেন, কেউ কেউ হয়তো নিজ চোখেও দেখেছেন যে, সুগন্ধি ফুলের গাছের তলায় সাপ শুয়ে থাকে–এটা সত্য কথা। তাই বলে ভাবা ঠিক হবে না, ফুলের গন্ধে আকৃষ্ট হয়েই সাপ সেখানে শুয়ে আছে। আসলে এসব সুগন্ধি ফুলের ভেতরে অত্যন্ত সুস্বাদু এক ধরনের মধু থাকে। মধুর লোভে নানারকম কীট-পতঙ্গ ছুটে আসে এসব গাছে। খাবারের লোভে এসব ফুল গাছে বা গাছের তলায় কিছু পতঙ্গভুক্ত প্রাণী–যেমন, টিকটিকি, মাকড়সা, কুনোব্যাঙ ছুটে আসে পাগলের মতো। আমরা তো ভালো করেই জানি, এসব পতঙ্গভুক্ত প্রাণীগুলো সাপেদের কী পছন্দ! চলতি পথে এমন লোভনীয় খাদ্যের দেখা পেলে সাপ কি না থেমে পারে?
https://www.youtube.com/watch?feature=player_detailpage&x-yt-ts=1422579428&v=874cB6KaPx0&x-yt-cl=85114404
সাধারণত সাপ খাওয়া-দাওয়ার পরে বেশি নড়াচড়া করতে পারে না, তাই ফুল গাছের নিচেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নেয়। ঠিক এই অবস্থায় চোখে পড়লে আমরা ভাবি, ফুলের গন্ধে মোহিত হয়েই বুঝি সাপ গাছ তলায় এসেছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ১০ সাপ
সাপ কাকে বলে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। নিঃসন্দেহে সাপ পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ও বিষাক্ত প্রাণীগুলোর একটি। বিষাক্ত হিসেবে বিখ্যাত হলেও বেশিরভাগ প্রজাতির সাপ কিন্তু বিষহীন এবং প্রায় সব প্রজাতির সাপই শিকার করার সময় শিকারকে ঘায়েল করতেই মূলত তাদের বিষ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আমাদের বাস্তুতন্ত্রে সাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আসুন দেখে নেই পৃথিবীর সেরা ১০ বিষাক্ত সাপ ও তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। তার আগে চলুন দেখে নিই ভেনম কি?
সংক্ষিপ্ত কথায় ভেনম হচ্ছে এক ধরনের বিষাক্ত ফ্লুইড যা সাপসহ অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীরা শিকারের কাজে ব্যবহার করে থাকে।
১) Inland Taipan:
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ যা লম্বায় প্রায় ৬ ফুট বা তারও বেশি হতে পারে। এর প্রতি কামড়ে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান প্রায় ৭৭ মিলিগ্রাম যা কিনা ৭৭,০০০ টি ইঁদুর অথবা ৪৪ জন মানুষকে একসাথে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশে এই সাপগুলো বেশি দেখা যায়।
২) Common Krait:
এই সাপটিকে অনেকে ইন্ডিয়ান ক্রেইট বা ব্লু ক্রেইটও বলে থাকেন। এরা লম্বায় সাধারণত ৯০ সেন্টিমিটার থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি কামড়ে এই সাপ থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ৩০ মিলিগ্রাম যা একসাথে ১৮,৭৫০ টি ইঁদুর অথবা ১১ জন মানুষ মেরে ফেলতে সক্ষম। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে এই সাপ বেশি পাওয়া যায়।
৩) Tiger Snake:
সাধারন অবস্থায় এই সাপটি মানুষের প্রতি মোটেও আগ্রাসি নয় এবং মানুষের আগমন টের পেলে এরা পালিয়ে যায়। এরা লম্বায় প্রায় ৬ ফিট বা তারও বেশি হতে পারে। এদের প্রতি কামড়ে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ১২২ মিলিগ্রাম যা ১৩,৩৩৩ টি ইঁদুর অথবা ৮ জন মানুষকে একসাথে মেরে ফেলতে পারে। গ্রিসে এই সাপটি বেশি দেখা যায়।
৪) Common Death Adder:
এই সাপটি অন্য সাপকে অ্যামবুশের মাধ্যমে মেরে ফেলতে পছন্দ করে। প্রায় ৩ মিটার দীর্ঘের এ সাপটি থেকে প্রতি কামড়ে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ১৫২ মিলিগ্রাম যা প্রায় ৭৬০০ টি ইঁদুর বা ৪ জন মানুষকে একসাথে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। এদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
৫) Eastern Brown Snake:
অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত এই সাপটি লম্বায় প্রায় ৬ ফিট বা তারও বেশি হয়ে থাকে। প্রতি কামড়ে এদের থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ১০ মিলিগ্রাম যা প্রায় ৬৯৫০ টি ইঁদুর অথবা ৪ জন মানুষকে একসাথে মেরে ফেলতে সক্ষম।
৬) Black Mamba:
মুখে কাল রং ধারণকারী এই সাপটিকে বিশ্বের দ্রুততম সাপ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ভীষণ আগ্রাসী স্বভাবের এই সাপটি লম্বায় প্রায় ১৩ ফুট বা তারও বেশি হয়ে থাকে। প্রতি কামড়ে এদের থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ৮৫ মিলিগ্রাম। এটি একসাথে প্রায় ৬৬৪০ টি ইঁদুর অথবা ৪ জন মানুষকে এক কামড়েই মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। আফ্রিকা এদের আইডিয়াল বাসস্থান।
৭) Russel’s Viper:
লম্বায় ৫.৫ ফুট দীর্ঘের এই সাপটি সাধারণত খোলা ঘাসযুক্ত পরিবেশে থাকতে বেশি পছন্দ করে। প্রতি কামড়ে এদের থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ১৯৭ মিলিগ্রাম যা ৬৩০০ টি ইঁদুর বা ৩ জন মানুষকে একসাথে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। সুইডেন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন, ফিলিপাইন ও মালেশিয়ায় এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
৮) Carpet Viper:
এটি লম্বায় খুব বেশি হতে পারেনা। প্রতি কামড়ে এদের থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ২০ মিলিগ্রাম যা ৩৩০০ টি ইঁদুর বা ২ জন মানুষকে একসাথে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এদের ভেনম অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটায় যা অনেক ক্ষেত্রে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আফ্রিকায় এদের বেশি পাওয়া যায়।
৯) Beaked Sea Snake:
এই সাপটি Hook Nosed Sea Snake বা Common Sea Snake নামেও পরিচিত। এদের কামড়ে শ্বাসতন্ত্রের প্যারালাইসিস ও কার্ডিয়াক এরেস্ট দেখা দেয় যা প্রায় ১২ ঘণ্টারও বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে। এরা প্রতি কামড়ে গড়ে ৮.৫ মিলিগ্রাম ভেনম নির্গত করে যা একসাথে ১৯৩০ টি ইঁদুর বা ১ জন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে।
১০) Bushmaster:
এই সাপটি ব্রাজিলিয়ানদের কাছে “সুরুকুচু” নামে পরিচিত যার অর্থ হচ্ছে ঘুমন্ত মহিলা ও গরুর দুধ পানকারী সাপ। এরা লম্বায় প্রায় ৯ ফুট ও কখনো কখনো ১২ ফুটও হতে পারে। প্রতি কামড়ে এই সাপ থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ৪০০ মিলিগ্রাম যা একসাথে ১৬৫০ টি ইঁদুর বা ১ জন মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। দক্ষিণ আমেরিকান বিষুবীয় বনগুলোতে এই সাপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
সূত্র : বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত
মন্তব্য চালু নেই