সাত খুনের বর্ষপূর্তিতে মানববন্ধন

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবিতে মানববন্ধন পালিত হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।

ওই হত্যাকাণ্ডে বর্ষপূর্তিতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী এই কর্মসূচি পালন করেন। গত বছরের ২৭ এপ্রিল দুপুরে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে অপরজনের লাশ পাওয়া যায়। নিহত অপর পাঁচজন হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

এ ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ফতুল্লা মডেল থানায় নূর হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, হাসমত আলী, আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল একই ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একই থানায় আরেকটি মামলা করেন।

মানববন্ধনে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ভাই আব্দুস সালাম ও নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বক্তব্য দেন। তবে এ সময় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি, শ্বশুর শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না নিহত অন্য পাঁচজনের পরিবারের সদস্যরাও।

মানববন্ধনে নিহত নজরুলের ভাই আব্দুস সালাম বলেন, ৭ খুনের ঘটনায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া পাঁচজন আসামির সবাই জড়িত। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাঁদের গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ না করে কীভাবে অব্যাহতি দিলেন-প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এজাহারভুক্ত আসামিরা আমাদের হুমকি দিয়ে বলেছিল, তারা পাঁচ কোটি, ১০ কোটি, যত টাকা লাগে-এর বিনিময়ে মামলা থেকে অব্যাহতি নেবে। তাহলে কত টাকার বিনিময়ে তাঁদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো? আমরা এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে না রাজি পিটিশন দেব। আমরা অভিযোগপত্র মানি না। কাকে বাঁচানোর উদ্দেশশে নূর হোসেনকে দেশে ফেরত না এনে এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হলো? ’

অবিলম্বে ভারত থেকে নূর হোসেনকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান আব্দুস সালাম। নূর হোসেনের সহযোগীরা এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে অভিযোগ করে তাঁদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ৭ খুনের মামলাটি সারা দেশসহ বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মামলা। মামলা থেকে এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে বাদ থেকে দেওয়া হলো। ‘আমরা এ ঘটনায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক, আর না থাকলে অব্যাহতি দেওয়া হোক।’

আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন খুন হওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দুপুরে সভার আয়োজন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি।

ঘটনার পর সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা ও নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীরা ঘটনার জন্য নূর হোসেন ও র‍্যাব-১১-এর ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাকে দায়ী করে আন্দোলনে নামেন। এলাকাবাসী কয়েক দফা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। আইনজীবীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করেন এবং আদালত বর্জন করেন। নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, র‍্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁর এই অভিযোগ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি হাইকোর্টে গড়ালে উচ্চআদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয় র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে। পরে তাঁদের নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয় ও চাকরিচ্যুত করা হয়। ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। সেখানে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে সেখানে মামলাও হয়েছে।

সাত খুনের ঘটনার প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মামুনুর রশিদ মণ্ডল নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম চাঁদনী রূপমের আদালতে র‌্যাবের ২৫ জন সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ৩৫ জন আসামির মধ্যে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ সদস্য এবং নূর হোসেনের পাঁচ সহযোগীসহ মোট ২২ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অন্যরা পলাতক। র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ১৬২টি আলামত দুটি বস্তায় ভরে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও এজাহারে উল্লেখ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই