সাত খুনের ছয় মাস: এখনও অধরা হোতারা

আজ সোমবার দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ছয় মাস পূর্ণ হলো। এখনো মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের নাগাল পায়নি পুলিশ।

র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর রহস্য অনেকটা খোলাসা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়নি। প্রধান আসামি নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তার হলেও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, সহযোগী তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে দু’টি মামলা দায়ের করেন।

এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার না হলেও সাত খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে র‍্যাব-১১ এর সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে থাকলেও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে কাটেনি ধোঁয়াশা।

এ পর্যন্ত দুটি মামলায় র‍্যাবের ১১ জন সদস্যসহ মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে এজাহারনামীয় আসামিসহ কিলিং মিশনে থাকা অনেকেই অধরা। আসামিদের স্বজনরা নানা হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও বর্তমানে কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামিদের বাড়িতে একদিনও অভিযান চালায়নি। আসামি ইয়াসিনের পরিবার ঈদুল আজহার সময়ে বাড়িতে কোরবানি দিয়ে উৎসব করেছে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদেরকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। বলছে, আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দিবে। আমাদের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করবে। অন্য আসামিদের পরিবারের সদস্যরাও এলাকায় ফিরে এসেছে। তারাও নানা মাধ্যমে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রধান আসামি নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরাও ফিরেছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মামুনুর রশিদ মণ্ডল জানান, র‍্যাবের ১১ জন সদস্যসহ মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিন র‍্যাব কর্মকর্তাসহ ১২ জন আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ১৪ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নূর হোসেন ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার হলেও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো চেষ্টাই সরকার করছে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অনেক ধরনের বক্তব্য শুনলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। সরকার ইচ্ছে করলে খান সুমনের মতোও তাকে জামিন করিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারতো। এজাহারনামীয় অপর ৫ আসামি বর্তমানে দেশেই অবস্থান করলেও তাদেরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই