“সাতাশ বছরের একটা ছেলে কতটুকুই বা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে…”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে। আমি যাকে ভালোবাসতাম তাকে সম্পর্কের ১ বছরের মাথায় বিয়ে করে ফেলি। তাকে আমি কখনো কোনদিনো অবিশ্বাস করিনি। আমরা ক্লাসমেট ছিলাম। ফার্স্ট ইয়ারে ২ মাস ক্লাস করার পর ও ডেন্টালে চান্স পায় আর আমি আমার ভার্সিটিতে থেকে যাই। আমাকে আমার ক্লাসের কয়েকজন তখন বলেছিলো তুমি এত দূরে থেকে কীভাবে জানবে তোমার প্রেমিক ওখানে কার সাথে কি করে বেড়াচ্ছে? আমি তখন উত্তর দিয়েছিলাম, আমার সমস্যা আমি বুঝবো। আমি আসলে কোনদিনই ওকে অবিশ্বাস করিনি।

বিয়ের কয়েকমাস পরে আমি একবার এমনি দুষ্টুমি করে এক ফ্রেন্ডকে দিয়ে ওকে ফোন করি। জাস্ট দেখার জন্য, মজা করার জন্য। আমি ভেবেছিলাম ও আমাকে এই ব্যাপারটা নিজে থেকে বলবে। কিন্তু সে পুরো ব্যাপারটা আমার কাছ থেকে গোপন করেছে। এমনকি আমার সাথে ফোনে কথা বলা অবস্থায় ঐ ফ্রেন্ডটা ওকে ফোন করে, ও তখন আমাকে এটা বলে ফোন রাখে যে ওর আম্মা ওকে কল দিচ্ছে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। একটা অচেনা মেয়ের জন্য ও আমাকে এভাবে মিথ্যা বলল, অথচ ও জানেই না যে মেয়েটা কে? ও বেশ কয়েকবার আমার ওই ফ্রেন্ডকে মিসকল দেয়। আমি আমার ফ্রেন্ডকে বলি কথোপকথন চালিয়ে যেতে। আমি দেখতে চাই আমার স্বামী কতদুর যায়। কিন্তু আমার ফ্রেন্ড এই ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চায়না। তারপর আমার আচার ব্যবহারে ও নিজেই বুঝে ফেলে যে এই কাজটা আমি করিয়েছি। সে তখন পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে যাতে আমি ওকে ছেড়ে না দেই। আমি ওর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করি। কিন্তু ও কিছুতেই আমাকে ছাড়তে রাজী হয়না।

এরপর থেকে বাকী ৬ বছরে আমি অনেকবার এভাবে অন্য কাউকে দিয়ে ফোন করে দেখার চেষ্টা করি কিন্তু ও সবসময় আগে থেকে সব বুঝে ফেলতো। তাই আমার পক্ষে কিছু জানা সম্ভব হয়নি। কিছুদিন আগে এই গত অক্টেবরের ৩১ তারিখ আমি একসাথে অনেকগুলো ব্যাপারে জানতে পারি যেগুলো আমার স্বামী গত ২ বছর ধরে লুকিয়ে আসছে।

১। আমাকে ও বলেছিলো যে ও ইন্টার্নি করছে কিন্তু ও আসলে এখনো ফাইনাল প্রফ পাশ করতে পারেনি।

২। ও আমাকে বলেছিলো যে ওর ফেসবুক আইডি নেই, আমি বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু সেদিন জানতে পারি সে আরো ৪ বছর আগে থেকেই ফেসবুকের নিয়মিত ইউজার।

৩। আমাকে ও বলতো যে ওর এন্ড্রয়েড ফোনে আগের সিমটা ব্যবহার করে কিন্তু সেদিন আমি জানতে পারি ও গত ২ বছর ধরে নতুন আরেকটা নাম্বার ব্যবহার করছে ওন্য আরেকটা সেটে যেটা আমাকে জানায়নি।

৪। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেটা, সেটা হল ও অন্য একটা মেয়ের সাথে ঐ নতুন সিমটা দিয়ে কথা বলতো ভাইবারে। মেয়েটা প্রাইভেট ডেন্টালে পরে। যথেষ্ট স্মার্ট। আরেকটা কথা বলে নেই। আমার স্বামীর সব সময় উগ্র সাজগোজওয়ালা, ওভারস্মার্ট মেয়েদের পছন্দ। মেয়েটাকে সে প্রপোজ করে। তাদের মধ্যে দেখা হওয়ার কথা হয় কিন্তু তার আগেই মেয়েটা আমার ব্যাপারে জানতে পেরে যায়। তাই ওকে না করে দেয়। আমি আমি ওর ফেসবুক আইইতে ঢুকে দেখছি যে সে এখনো ঐ মেয়েটাকে পটানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আমার বিবাহিত জীবন এই ফেব্রুয়ারীতে ৬ বছর পুরো হবে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের একসাথে থাকা হয়েছে খুব কম। আমি মাঝে মাঝে ওর কাছে যেতাম। কিন্তু আমাদের একসাথে থাকার ব্যাপারে আমিই সবসময় বলতাম। ও নিজে থেকে হাতে গোনা এক থেকে ২ বার হয়ত বলেছে আমাকে ওর কাছে যেতে। গত ২ বছর ধরে আমি নিজে থেকে ওকে একসাথে থাকার জন্য বলিনি আর সেও এক বারের জন্য বলেনি। আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি ওকে অনেকবার বলেছি আমাকে ঘরে তুলে নিয়ে যাও। কিন্তু ও আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যও বলেনি যে তুমি আসো, একসাথে থাকি।

অন্য একটা মেয়ে যখন আমাদের মাঝখানে চলে এসেছে, আমি তখন থেকেই ওর প্রতি আমার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। আমি সাহস করে আমার পরিবারকে সব জানাই এবং এটাও বলি যে আমাকে যেন ও ডিভোর্স দিয়ে দেয়। ও আবারো আগের মত কান্নাকাটি করে। শেষ পর্যন্ত ওর বড় ভাই আমার সাথে সরাসরি কথা বলে। আমাকে বোঝায় যে এটা জাস্ট একটা ভুল ছিলো, ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু। আমি যখন তাতে মানিনা, তখন আমার বড় বোনের সাথে উনি কথা বলেন, ওদের একটাই কথা। চরিত্র নিয়ে কোন কথা বলা যাবেনা। বলতে গেলে প্রমান লাগবে। একটা মেয়ের সাথে কিছুদিন ফোনে কথা বলা মানে এই না যে তার ভাই খারাপ। আমি যদি এটা প্রমান করতে পারি যে আমার স্বামী প্রতিনিয়ত অন্য অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করে গেছে তাহলে তারা মানবে।

কিন্তু আমি থাকি ঢাকায় আর সে পড়ে রাজশাহীতে। আমি এতদুরে বসে কিভাবে আর প্রমান জোগাড় করবো? তাছাড়া ওর বন্ধুমহলে ও ছেলে হিসেবে খুব বিখ্যাত। ও যদি হোতেলে পতিতা নিয়ে যায় তাও কেউ জানবেনা। আমার পরিবার ওকে প্রফ পাশ করার জন্য ৬ মাস সময় দিয়েছে। ও যদি পাশ করতে পারে তাহলে আমাদের অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিবে আবার। ও কোনভাবেই আমাকে ছাড়তে রাজীনা। ওকে এখন যা করতে বলবো, ও আমাকে ঘরে নেয়ার জন্য তাই করবে। ও আমাকে কিছুতেই ছাড়বেনা। আমার পরিবারও এখন বলছে, যেহেতু বিয়ে করে ফেলেছো এখন ডিভোর্স দিলে তোমাকে কে বিয়ে করবে? আবার তারা বলছে যে এটা বয়সের দোষ। ২৭ বছরের একটা ছেলে কতটুকু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে।

আমার স্বামী ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, দাড়ি আছে। তাবলীগে যায়। আমি আসলে ওর বাইরের চেহারার সাথে ভেতরের রূপটা মেলাতে পারিনা। আমার সারাক্ষণ মনে হয় ওর আরো অনেক কিছুই আছে যা আমি জানিনা। কিংবা ভবিষ্যতে সংসার শুরু করার পর আমাদের যখন একটা সন্তান হয়ে যাবে তখন তো ওর থেকে সরে আসার কোন উপায় থাকবেনা। আমি আসলে বুঝতে পারছিনা ওকে কি ছেড়ে দিবো? অন্য কাউকে বিয়ে করলে সে যে ভালো হবে তারই বা গ্যারান্টি কী? আবার ভাবি এভাবে সন্দেহ করে কীভাবে একসাথে থাকবো? আমি কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

পরামর্শ:

আমি জানি আপু, আমার পরামর্শ পড়ে আপনার হয়তো অনেক রাগ লাগবে। কিন্তু সত্য এটাই যে আপনার জীবনের যা সমস্যা সেটা সিংহ ভাগ আপনার নিজেরই তৈরি করা। আপনি আবেগের বশে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা আপনাকে আজ এই অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখনো সময় আছে, আপনি চাইলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।

দেখুন আপু, মুখে দাঁড়ি থাকলেই বা তাবলীগে লেগেই মানুষ ভালো হয়ে যায় না। নামাজ তো কেবল পড়লেই হবে না, আল্লাহর বিধান সঠিক ভাবে মানতেও তো হবে। মানুষ ভালো হয় তাঁর নিজের অন্তরের আলো দিয়ে। আপনার স্বামী একজন ভণ্ড ও চরিত্রহীন। তাঁর সবই লোক দেখানো। সে কিন্তু আপনাকে একবার ঠকায় নি, বারবার ঠকিয়েছে। বছরের পর বছর যাবত ঠকিয়ে যাচ্ছে। যে মানুষ এত বছর আপনাকে অন্ধকারে রাখতে পেরেছে, তাঁর মিষ্টি কথায় বা কান্নাকাটিতে আপনি কীভাবে ভুলে যাচ্ছেন? বুঝতে কি পারছেন না যে সবই অভিনয়? আপনাকে ধরে রাখার পেছনে নিশ্চয়ই তাঁর ও তাঁর পরিবারের কোন একটা স্বার্থ আছে। আছে বলেই তাঁরা ডিভোর্স ঠেকানোর এত চেষ্টা করছে বা আপনারা পালিয়ে বিয়ে করার পরও মেনে নিয়েছে। সম্ভবত আপনাদের পরিবার তাঁর পরিবারের চাইতে উঁচু, এই কারণেই বিশেষ কিছুর লোভে তাঁদের এই আচরণ।

দেখুন আপু,আপনি সবচাইতে বড় ভুলটি করেছেন বিয়েটা করে। আমি জানিনা কেন এই বিয়ে করেছিলেন আপনি, তবে বিয়ের কথাটা মা বাবাকে না বললেই পারতেন। মেয়েরা চাইলেই খোলা তালাকের মাধ্যমে এক তরফা ডিভোর্স দিতে পারে যদি উপযুক্ত কারণ থাকে। ডিভোর্সের জন্য স্বামীকে রাজি করানোর কোন দরকারই নেই। আপনি সেভাবে সম্পরক্তা ভাঙলেই বেশি ভালো হতো। যাই হোক, এখনো অনুষ্ঠান হয়নি। পরে অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হবেন কিনা, সেই ভাবনার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে এই লোককে বিয়ে করে সুখী হবেন কি না। এবং উত্তর হচ্ছে- হবেন না। কিছুতেই না। সে এখন আপনাকে বিয়ে করার জন্য এত প্যনাপ্যান করছে। সে জানে আপনাকে ধোঁকা দেয়া সহজ। একবার বিয়ে করে ঘরে নিলে আর আপনাকে কোন মূল্যই সে দেবে না। এমন অসংখ্য পুরুষ আছেন যারা স্ত্রীকে দেখান যে খুব ভালোবাসেন, কিন্তু বাইরের নারীর লোভও ছাড়তে পারেন না। দুর্ভাগ্যক্রমে আপনার স্বামী তেমনই একজন।

আপনি যে তাঁর সাথে ভালো থাকবেন না, এটা আপনি নিজেও জানেন আপু। আর হ্যাঁ, এই সম্পর্কটি থেকে বের না হলে তো পরবর্তী সম্পর্কের পথ খোলা হয় না। তাই একটা সম্পর্ক আগে শেষ করুন, তাঁর পরই অন্য কিছু নিয়ে ভাবুন। আমার উত্তর একটাই, এই ছেলেটি ভণ্ড ও প্রতারক। সে আপনার ভালোবাসার যোগ্য না।প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই