স্বাস্থ্য ঝুকিতে ২২’শ শিশু শিক্ষার্থী
সাতক্ষীরা সরকারি হাইস্কুলে হাটু পানি, যোগ হয়েছে পঁচা দুর্গন্ধ
সাতক্ষীরায় মাধ্যমিক স্তরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সাতক্ষীরা সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে সব চেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী এবং সচেতন অভিভাবকদের পদচারণা। জেলার সর্বোচ্চ এই বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিপর্যয় চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয় চত্বরে জমছে হাটু পানি। স্কুল ক্যাম্পাসের ঠিক গা ঘেষে রয়েছে পানি নিস্কাশনের জন্য একটি ড্রেন। মাত্র দু’কোদাল (এক হাত পরিমান জায়গা) মাটি কেটে দিলেই বিদ্যালয় চত্বরে জমে থাকা সিংহভাগ পানিই নিস্কাশন হয় অতি সহজে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, এতোটুকু উদ্যোগ নেয়ার কেউ নেই ওই স্কুলে।
বর্তমানে বিদ্যালয় চত্বরে জমে থাকা পানিতে আবর্জনা পঁচে এতোটাই দুষিত হয়েছে যে, কোন মানুষ পঁচা ওই পানিতে পা দিলেই তার পায়ে ঘা হতে পারে। সচেতন অবিভাবকরা এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ দায়িত্বশীলের বার বার বলেও কোন ফল হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। তারা বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে সমাধানের জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের আশুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, স্কুলটি ১৯৬২ সালে স্থাপিত হওয়ার পর ১৯৬৮ সালে জাতীয়করন হয়। জেলার ঐতিহ্যবাহী সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে দুই শিফটে প্রায় ২২’শ ছাত্র লেখাপড়া করছে। স্কুলের মূল ক্যাম্পাসের পিছুনে বিশাল খেলার মাঠ থাকলেও সে-টি ক্যাম্পাসের বাইরে হওয়ায় ছাত্রদের তেমন কাজে লাগেনা। ক্যাম্পাসের ভিতরে যে ছোট চত্বরটি রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ছোট এই চত্বরেই ছাত্রদের শরীরচর্চা (পি টি) করানো হয়। একটু বৃষ্টি হলেই স্কুল চত্বরে জমছে হাটু পানি। ফলে এবছর বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে ছাত্রদের পি টি প্রায় বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে স্কুলে রমজানের ছুটি হলেও স্কুল কচিং নিয়মিত চলছে। যে কারনে প্রতিদিন শত শত ছাত্র স্কুল কচিং-এ আসছে। তাদের অনেকেই স্কুল চত্বরের দুষিত পানি-কাদা মেখে বাড়ি ফিরে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে।
সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখাগেছে, পুরো স্কুল চত্বরে পানি ও কাদা জমে রয়েছে। কোথাও হাটু পানি। চত্বরের ঠিক দক্ষিণ পাশে পানি নিস্কাশনের জন্য পৌরসভার ছোট একটি ড্রেন থাকলেও মাত্র দু’কোদাল মাটি কাটার উদ্যোগের অভাবে ওই ড্রেন দিয়ে পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। অথচ স্কুল চত্বরে জমে থাকা পানি পঁচে দুষিত হয়েগেছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। কোমলমতি ছাত্ররা চারম স্বাস্থ্য ঝুকীর মধ্যে পড়েছে।
একাধিক অভিভাবক জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধানকে একাধিক বার বলা হলেও তারা কর্ণপাত করছে না। অভিবাবকরা আরো জানান, শুধু স্কুল চত্বর নয়, স্কুলের পাথরুম গুলো যে এতো নুংড়া বা অস্বাস্থ্যকর তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারনে বাচ্চারা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে চরম উদাসীন।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিসেস মনোয়ারা খাতুন জানান, আমি গত ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ যোগদানের পর থেকে স্কুল চত্বরটি এ রকমই দেখছি। চত্বরে মাটি ভরাট করা আশু প্রয়োজন। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদে মাটি ভরাটের জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনও কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এছাড়া মৌখিক ভাবে স্কুল পরিচালনা কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে বিষয়টি জানিয়েছি। স্কুলের দক্ষিণ পাশে মেইন ফটকের ধারে পানি নিস্কাশনের জন্য যে ড্রেনটি রয়েছে সেখানে সংযোগ দেয়ার সামন্য উদ্যোগটুকু কি কারনে নেননি জানতে চাইলে, তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে আগামী কাল (মঙ্গলবার) স্কুল পরিচালনা কমিটির সবায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু জানান, বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়নি। কিন্তু আমি দেখেছি পানি জমার কারণে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, স্কুল চত্বরে পানি জমে দুষিত হওয়ার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তিনি এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই