গত ১৬ দিনে জেলা শহরের ১৮ বাড়িতে ডাকাতদের হানা ! ডাকাত সন্দেহে ঘুমন্ত অবস্থায় যুবককে ডেকে নিয়ে পায়ে গুলি
সাতক্ষীরা শহরে ডাকাতি আতংক
আব্দুর রহমান,সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরা শহরে রাম দা পার্টির আতংক বিরাজ করছে। প্রতিরাতেই খোদ জেলা শহরের কোন না কোন বাড়িতে হানা দিচ্ছে রাম দাসহ দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত ডাকাত দল। গত ১৬ দিনে কমপক্ষে জেলা শহরের ১১ বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ডাকাতি প্রতিরোধে নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। বাদ যায়নি ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহরও। জেলা শহরের কাটিয়া সরকারপাড়ায় ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহরেই ৫ বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ৪টি বাড়িতে ঢুকতে ব্যর্থ হলেও একটি বাড়ি থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে তারা।
এ ঘটনাসহ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস জুড়ে সাতক্ষীরা শহরে কমপক্ষে ১৫টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় জনমনে রীতিমত ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কাটিয়া সরকারপাড়ার শিক্ষক দীপক রায় জানান, দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত ১০/১৫ জনের ডাকাত দল বুধবার মধ্যরাতে তার বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় বাড়ির সবাইকে অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে লুটপাট শুরু করে তারা। তবে বাড়িতে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস না থাকায় নগদ দশ হাজার টাকাসহ ব্যবহারিক কিছু জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
এদিকে, স্থানীয়রা জানান, প্রায় একই রাতে একই এলাকার অধ্যাপক মোদাচ্ছেরুল হক হুদা, সঞ্জয় সরকার, আশরাফুল হক ও শিক্ষক অমল কুমার রাহার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। তারা তালা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে প্রবেশও করে। তবে পরিবারের লোকজন জেগে থাকায় তাদের চিৎকার চেচামেচিতে সুবিধা করতে না পারায় ডাকাতরা ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
স্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অদূরেই একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত বিশ দিনে কমপক্ষে ১৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরপরও পুলিশের রহস্যজনক নীরবতায় এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছে।
জেলা শহরের কাটিয়ার এলাকার অধিবাসী প্রভাষক জ্যোতি জানান, রাম দা বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিধায় এলাকার মানুষ রাত জেগে মোড়ে মোড়ে পাহারা বসিয়েছে কাটিয়া সরকার পাড়া এলাকায়। এর পরও ডাকাতি বন্ধ হচ্ছে না।
গত ২৫ ডিসেম্বর ভোর রাত পৌনে ৩টায় সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়ি থেকে নগদ ৩ লক্ষ টাকা ও প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণাংলকার লুট করে নিয়ে যায় অস্ত্রধারী ডাকাতরা।
গত ১১ ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের কাটিয়া রেজিস্ট্রি অফিস পাড়ার ডা. অরুন ব্যানার্জীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে নগদ ৭০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণের অলংকার, একটি ক্যামেরা ও একটি মোবাইল সেটসহ প্রায় ০৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এর মাত্র একদিন আগে ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের কাটিয়া সরকার পাড়া এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলমের বাড়ি থেকেও ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এছাড়াও সম্প্রতি একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
২ জানুয়ারী শহরে এক ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ডাকাতরা গৃহকর্তার স্ত্রী ও ছেলেকে কুপিয়ে ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণের গহনা ও নগদ ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
বাড়ির মালিক সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাকিম জানান, ভোর রাতে ৮/১০ জনের এক দল সশস্ত্র ডাকাত তার ঘরের বারান্দার গ্রীল কেটে ভিতরে ঢুকে দরজা খুলে দিতে বলে। এসময় ঘরের দরজা খুলতে রাজী না হওয়ায় ডাকাতরা পাশের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা তার ছেলে সুমনকে হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায় স্ত্রী ফিরোজার অনুরোধে তিনি বাধ্য হয়ে ঘরের দরজা খুলে দেন। দরজা খুলতে দেরী হওয়ায় ঘরের মধ্যে ঢুকেই ডাকাতারা তাকে লোহার সাবল ও দায়ের উল্টো পিট দিয়ে মারপিট শুরু করে দেয়। এসময় তার স্ত্রী ফিরোজা ও ছেলে সুমন তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসলে ডাকাতরা তাদেরকে কুপিয়ে জখম করে ঘরের মেঝেতে ফেলে দেয়। পরে তারা ঘরের স্টীলের আলমীরার তালা ভেঙ্গে নগদ ৪০ হাজার টাকা ও প্রায় ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণের গহনাসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে চলে যায়।
শহরের বাসিন্দারা বলছেন, সাতক্ষীরা শহর এখন ডাকাতদের দখলে। তবে এসব ডাকাতির ঘটনায় কোন ডাকাতি মামলা রেকর্ড করা হয়নি। ডাকাতির ঘটনা অস্বীকার করে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রহমান বলেন, শহরের দু একটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে, সাতক্ষীরা শহরে পুলিশের গুলিতে মিন্টু সরদার (৩০) নামের এক সন্দেহভাজন ডাকাত গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। শনিবার ভোররাত ৪টার দিকে শহরের পলাশপোল এলাকার কপোতাক্ষ ক্লিনিকের পিছনে এ ঘটনাটি ঘটে। সে পলাশপোল এলাকার মৃত আব্দুল গফফারের ছেলে ।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রহমানের দাবি করে বলেন, রাতে ডাকাতির সংবাদ পেয়ে কপোতাক্ষ ক্লিনিকের পিছনে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এক দল ডাকাত। পুলিশ এ সময় গুলি করলে মিন্টু মিস্ত্রী ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে আটক করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তবে, গুলিবিদ্ধ মিন্টু সরদারের দাবী, রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আমাকে ডেকে সেখান থেকে ধরে এনে ভোর রাতে পায়ে গুলি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসসহ নতুন বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি সাতক্ষীরা শহরে কমপক্ষে ১৮টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় শহরে বিরাজ করছে ডাকাত আতংক।
মন্তব্য চালু নেই