সাক্ষাৎ দিতে না পারায় ক্ষমাপ্রার্থী খালেদা

দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বুধবার রাত সোয়া ৮টার দিকে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক মৃত্যুতে প্রবাসী, দেশবাসী ও বন্ধুপ্রতীম দেশের প্রতিনিধিরা সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানানোয় সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞা জানিয়েছেন তিনি।

একই সঙ্গে ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে অত্যন্ত ভেঙে পড়ায় অনেকের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাই বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে তিনি আশা করেছেন।

সবশেষে ছোট ছেলে কোকোর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া।

উল্লেখ্য, গত শনিবার মালয়েশিয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান আরাফাত রহমান কোকো। সেদিন সন্ধ্যায়ই খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পৌঁছানোর আধাঘণ্টার কম সময় আগে জানানো হয়, শোকে কাতর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসকের পরামর্শে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না। তিনি ঘুম থেকে জেগে দেখা করার পরিস্থিতি হলে প্রধানমন্ত্রী আসতে রাজি হলে সময় দেয়া হবে।

কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেখানে পৌঁছান। তবে মূল ফটক বন্ধ থাকায় সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে যান তিনি। এটি শিষ্টাচার বহির্ভুত এবং অত্যন্ত অপমানজনক কাজ হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়। কারণ ওই সময় তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি কোনো নেতাও এগিয়ে আসেননি।

কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রী আকস্মিকভাবে এসেছেন। জানতে পেরে শোক বই নিয়ে দৌড়ে আসা হয়েছিল কিন্তু ততক্ষণে তিনি চলে গেছেন।

এরপরও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোক জানানো হলেও কোকোর জানাজায় দলের নেতারা যাননি।

গণমাধ্যমে বুধবার রাতে একটি লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া।

বুধবার রাত আটটা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গণমাধ্যমে এসে পৌঁছায়। বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের পুত্র হিসাবে আমাদের এই সন্তানটি একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্বেত্ত কখনো রাজনীতির সঙ্TUKU-3গে সংশ্লিষ্ট হয়নি। কেবল মাত্র সে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে মুক্ত রেখেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুধুমাত্র শহীদ জিয়া পরিবারের একজন সদস্য হবার কারণেই তাকে নানামুখী জুলুম-নির্যাতন, হেনস্তা-অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে।

“অসুস্থ হয়ে প্রবাসে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেও সে চরম প্রতিহিংসামূলক বৈরিতা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। ভাগ্যের এমনই নিষ্ঠুর পরিহাস যে, মা হিসাবে আমি প্রায় আট বছর ধরে এই অসুস্থ সন্তানটির মুখ দেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত ছিলাম। অবশেষে আমাকে সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে হলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমি এর বিচারের ভার অর্পণ করলাম।

“এই গভীর বেদনা ও শোকের মুহূর্তে সকলের কাছ থেকে যে বিপুল সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেয়েছি তা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে।

“কুয়ালালামপুরে কোকোর প্রথম নামাজে জানাজায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছে আমি তার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

“অন্যান্য দেশেও প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহনে গায়েবানা জানাজার আয়োজনের জন্য আমি তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

“দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপি, আমাদের অঙ্গ ও সহযোগী-সংগঠন, ২০দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সমাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কোকোর বিদেহী রুহের মাগফিরাতের জন্য গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন যারা করেছেন আমি তাদেরকেও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

“জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার নামাজে দলমত, শ্রেণীপেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ শরিক হয়ে যে অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাতে আমি গভীরভাবে অভিভূত। ধন্যবাদ প্রিয় দেশবাসীকে। জিয়া পরিবারের প্রতি গণমানুষের এই অপরিমেয় ভালবাসার বহি:প্রকাশ আমাকে আরো একবার নতুন করে কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ করলো। বিপুল সংখ্যক মানুষের এই উপস্থিতিতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি সঞ্চয়ে সর্বস্তরের দেশবাসীর এই অংশগ্রহণ আমাকে অনেক সাহায্য করবে।

“বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার এই দুঃখের সময়ে তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁরা শোকবার্তা পাঠিয়ে এবং সশরীরে আমার কার্যালয়ে এসে সহানুভূতি জানিয়েছেন।

“বিএনপি ও ২০ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-জোটের নেতা-কর্মী, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃকিত অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্ববর্গসহ নরনারী, শ্রেণী-পেশা ও বয়স নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমার কার্যালয়ে এসে শোক প্রকাশ ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন।

“তাঁরা এ সময়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে না পারায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি আশা করি পরিস্থিতির বিবেচনায় সকলেই বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

“আমি কোকোর জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। দেশবাসীকে বলবো, আমি আপনাদের মাঝে আছি এবং যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।”



মন্তব্য চালু নেই