সাকিব-মোস্তাফিজদের তোপে শ্রীলঙ্কা ধ্বংসস্তূপ!

বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে জয় উপহার দিতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ দল। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সেই স্বপ্ন অনেকটাই উজ্জ্বল। রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজের তোপেড় মুখে শ্রীলঙ্কা যে ৫৫ রানেই হারিয়ে ফেলেছে ৫ উইকেট। লঙ্কানরা ৫ উইকেট হারায় আসলে ৪০ রানেই। সেখান থেকে ৫৫ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন কাপুগেদারা ও থিসারা পেরেরা।
শ্রীলঙ্কা শিবিরে প্রথম দুটি আঘাতই হানেন সাকিব আল হাসান। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারকেই ফিরিয়ে দেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ বিদায় করেন লঙ্কান অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গাকে। এরপর নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই মোস্তাফিজের জোড়া আঘাত। প্রথম দুই বলেইে আসেলা গুনারত্নে ও মিলিন্দা সিরিওয়ার্দানেকে ফিরিয়ে দিয়ে মোস্তাফিজ জাগিয়ে ছিলেন হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গার মতো তার সেই আশা পূরণ হয়নি। হতে দেননি থিসারা পেরেরা।
তেবে হ্যাটট্রিক না হলেও লঙ্কান ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পেরেছেন মোস্তাফিজ। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখাই যায়। কারণ জিততে হলে লঙ্কানদের করতে হবে আরও ১২২ রান। হাতে রয়েছে ১২টি ওভার ও ৫টি উইকেট।
এর আগে টস জিতে নিজের বিদায়ী এবং সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেই সুবাদে বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৭৬ রান। সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস উদ্বোধনী জুটিতেই তুলে ফেলেন ৭১ রান। সেটাও মাত্র ৬.২ ওভারে। সৌম্য-ইমরুলের এনে দেওয়া এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এক পর্যায়ে প্রথম ১০ ওভারেই বাংলাদেশ তুলে ফেলে ১০১ রান। ১২ ওভারে ১১৮। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তখন বাংলাদেশের স্কোর প্রথম বারের মতো ২০০ পেরোনোরই আভাস। কারণ তখনো ৮ ওভার বাকি, হাতে ৮টি উইকেট। কিন্তু ২০০ ছোঁয়া তো হলোই না, হলো না লঙ্কানদের বিপক্ষে করা এর আগে করা সর্বোচ্চ ১৮১ পেরিয়ে যাওয়াও। বাংলাদেশের ইনিংস বরং আটকে গেল ১৭৬ রানেই। লাসিথ মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক জাদুর কারণে শেষ ৮ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে মাত্র ৫৮ রান। হারায় ৭টি উইকেট।
কোমরের চোটের কারণে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচে নেই তামিম ইকবাল। তার পরিবর্তে একাদশে ঢুকেছেন ইমরুল কায়েস। সৌম্যর সঙ্গে ইনিংস ওপেন করেন তিনিই। তো সৌম্য-ইমরুল দারুণ একটা সূচনাই এনে দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু দারুণ সেই পথ চলায় হঠাৎই ছন্দপতন। যুগপত প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সৌম্য-ইমরুল দুজনেই। সৌম্যকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটিটা ভাঙেন আসেলা গুনারত্নে। একটু পর ইমরুল রান আউট। আউট হওয়ার আগে সৌম্য ১৭ বলে ৩৪ ও ইমরুল ২৫ বলে করেছেন ৩৬ রান। দুই ওপেনারকে এক সঙ্গে হারানোর পরও রানের চাকা ঠিক রেখেছিলেন সাব্বির রহমান ও সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে দুজনে ৪৬ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন। কিন্তু দলকে ১২৪ রানে রেখে সাব্বিরের বিদায়ের পরই মোড়কটা লাগে বাংলাদেশ ইনিংসে। ১৮ বলে ১৯ রান করা সাব্বিরকে বিদায় করেন ভিকুম সঞ্জয়া। একটু পর ৩১ বলে ৩৮ রান করা সাকিবও আউট। তাকে বোল্ড করে দেন নুয়ান কুলাসেকারা। তার খানিক পর মোসাদ্দেককে ফেরান থিসারা পেরেরা।
এরপরই মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক ম্যাজিক। যার শুরুটা মুশফিকুর রহীমকে দিয়ে। এক ছক্কা এক চারে ৬ বলে ১৫ রান করে মুশফিক বোল্ড। পরের বেলে মাশরাফিও বোল্ড। নিজের বিদায়ী ম্যাচে আজন্ম লড়াকু মাশরাফি গোল্ডেন ডাক! শূন্য রানেআউট হয়ে মাশরাফি স্মরণ করিয়ে দেন ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। মাশরাফিকে বিদায় করে দিয়ে মালিঙ্গা দাঁড়িয়ে যান হ্যাট্রিকের দরজায়। অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ লঙ্কান পেসারের সেই আশা পূরণ করে দিয়েছেন। অভিষেকেই গোল্ডেন ডাক মেরে!
মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচটা বাংলাদেশের বাঁচা-মরার। হারলে সিরিজে ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ হতে হবে। টেস্ট-ওয়ানডের পর টি-টুয়েন্টি সিরিজটাও ১-১ ড্র করতে হলে শেষ ম্যাচে জিততে হবে। সেটা হলে মাশরাফির বিদায়টাও হবে স্মরণীয়।



মন্তব্য চালু নেই