সাকিব-মুশফিকে বাংলাদেশের লড়াকু পুঁজি
ভিন্ন কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে, তা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। স্লো ও লো বাউন্সি উইকেট থেকে পেস ও বাউন্সি উইকেটে হঠাৎ খেলা কঠিন কাজ বটে!
সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কতটুকু সফল তা স্কোরবোর্ড দেখলে বোঝা যাবে না! কারণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ২৯.১ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১১৯। সেখান থেকে ৫০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২৬৭। অস্বাভাবিক এক পুঁজি!
নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে শুরুর দিকে ধাক্কাটা বেশ ভালোভাবেই সামলে নেয় টাইগাররা। আর অস্বাভাবিক কাজটাই করেছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।
পঞ্চম উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যান ১১৪ রান যোগ করেন মাত্র ৯৫ বলে। এই জুটিতে সাকিবের অবদান ৫০ ও মুশফিকের ৬২ রান।
দলের স্কোরকে ১১৯ থেকে টেনে নেন ২৩৩ পর্যন্ত। এরপর সাকিব সাজঘরে ফেরেন। হামিদ হাসানের বল ব্যাট ও পায়ে লেগে সাকিবের স্ট্যাম্প খুঁজে পায়। ৫১ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬৩ রানে শেষ হয় সাকিবের ইনিংস। এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে সাকিব আল হাসান প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে চার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আসে ৭১ রান। ৫৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭১ রান করেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। আফগান দলপতির বলে মিড উইকেটর উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সামিউল্লাহ শেনওয়ারির হাতে ক্যাচ দেন মুশফিক।
সাকিব ও মুশফিকের নৈপূণ্যে বাংলাদেশ লড়াকু স্কোর পেলেও ইনিংসের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। ৫২ রান তুলতেই দুই ওপেনার সাজঘরে ফিরেন। দুজনকে সাজঘরের পথ দেখান মিরওয়াইস আশরাফ। তামিম ইকবাল (১৯) উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন আর এনামুল (২৯) এলবিডব্লিউর শিকার হন।
তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে রক্ষণাত্মক ক্রিকেটকে বেছে নেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু আফগান পেসার শাপুর জারদানের জোড়া আঘাতে দুজনকে সাজঘরে ফিরতে হয়।
২৬তম ওভারের পঞ্চম বলে ও ২৯তম ওভারের প্রথম বলে শাপুর জারদান একে একে ফিরিয়ে দেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। দলীয় ১০৩ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সৌম্য সরকার। সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়ে ২৮ রান করেন তিনি। এরপর ১১৯ রানে উইকেট রক্ষক আফসার জাজাইর হাতে ক্যাচ তুলে দেন রিয়াদ। বিদায়ের আগে ৪৬ বলে মাত্র ২৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
রিয়াদের বিদায়ের পর শুরু হয় সাকিব ও মুশফিকের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। আফগান বোলারদের ওপর চেপে বসে দ্রুত রান তুলে নেন বাংলাদেশের এই দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। সাকিব ও মুশফিকের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে (৩৬-৪০ ওভার) ৪৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর মাশরাফির ১৪ রান শেষ দিকে বাংলাদেশের পুঁজিকে সমৃদ্ধ করে।
আফগানিস্তানের হয়ে হামিদ হাসান, শাপুর জারদান, মিরওয়াইস আশরাফ ও আশরাফ আলম ২টি করে উইকেট নেন। ১টি উইকেট নেন মোহাম্মদ নবী।
উল্লেখ্য, এর আগে এশিয়ান কাপে একটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে মুশফিক বাহিনীকে ৩২ রানে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল আফগানরা। এর মধ্য দিয়ে বড় কোনো প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো জয়ের স্বাদ নিয়েছিলেন নবীরা।
বাংলাদেশের একাদশ : মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহঅধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন।
আফগানিস্তানের একাদশ : মোহাম্মদ নবী, নওরোজ মঙ্গল, আসগার স্টানিকজাই, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, আফসার জাজাই (উইকেট রক্ষক), নজিবুল্লাহ জাদরান, মিরওয়াইস আশরাফ, হামিদ হাসান, শাপুর জাদরান, আফতাব আলম ও জাভেদ আহমাদি।
মন্তব্য চালু নেই