সাকিবময় টেস্টে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
৬৮ ওভারে জিম্বাবুয়ের লক্ষ্যটা ছিল ৩১৪ রানের। জয়ের পাল্লা বাংলাদেশেরই বেশি ভারী। কারণ চতুর্থ ইনিংসে জিম্বাবুয়ের জয়ের কোনো রেকর্ড নেই। আর স্বাগতিক বাংলাদেশের স্পিনারদের সামলানো তো কঠিন এক কাজ।
শুক্রবার সেটা আবার প্রমাণ করলেন টাইগাররা। বাঘের শহরে বাঘের গর্জনে কুপোকাত জিম্বাবুয়ানরা। ৩১৪ রান তাড়া করতে নেমে ১৫১ রানেই শেষ জিম্বাবুয়ের ইনিংস। জয় বাংলাদেশের। ১৬২ রানে জয় টাইগারদের। জয়ের নায়ক আর কেউ নন, বাংলার জান সাকিব আল হাসান। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেট নেন। ক্যারিয়ারের ১৪তম বারের মতো পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পেলেন সাকিব। এই সঙ্গে অনন্য এক রেকর্ড গড়লেন তিনি।
ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক টেস্টে শতকের পাশাপাশি ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন সাকিব। এর আগে ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম এবং ১৯৮৩ সালে পাকিস্তানের ইমরান খান এ রেকর্ড গড়েছিলেন।
পাহাড়সমান রান তাড়া করতে নেমে ১৫ রানে ৩ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। সফরকারী শিবিরে প্রথম আঘাতটি করেন তাইজুল ইসলাম। ব্রায়ান চারি ফিরতি ক্যাচে সাজঘরে ফেরত যান। এরপর শুরু হয় সাকিব-ম্যাজিক। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ও পরে সিকান্দার রাজা (৯) ও বেন্ডন টেলর (০) আউট হন। দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া জিম্বাবুয়েকে টেনে তোলেন মাসাকাদজা ও চাকাবা। প্রথম ইনিংসে শতকের দেখা পাওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান ৭০ রান যোগ করেন।
বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন জুবায়ের হোসেন। চাকাবাকে প্রথম স্লিপে মাহমুদুল্লাহর হাতে তালুবন্দি করান তিনি। ২৭ রান করা চাকাবার পর ক্রেইগ আরভিনকেও সাজঘরে ফেরান জুবায়ের। ২২ বলে ২১ রান করা আরভিনকে স্ট্যাম্পিং করেন মুশফিকুর রহিম।
১১৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর চা-বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। বিরতির পর স্বাগতিক শিবিরে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। চা-বিরতির পর ১৪ রান যোগ করতেই কুপোকাত জিম্বাবুয়ে। অবশিষ্ট ৫ উইকেটের ৩টি নেন সাকিব ও ২টি তাইজুল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের স্পিনারদের জয়জয়কার।
এর আগে ২০১ রান নিয়ে শুক্রবার দিন শুরু করে বাংলাদেশ। ৬৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ২৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। ৩১৩ রানের লিড নেন টাইগাররা।
পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে একাই দাপট দেখান জিম্বাবুয়ের স্পিনার নাতসাই এমশ্যাংউই। এদিন ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৪ উইকেটই নেন ডানহাতি এই স্পিনার।
প্রথমে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৬৩ রানে দিন শুরু করা মাহমুদুল্লাহ পঞ্চম দিন ৮ রান যোগ করে ৭১ রানে আউট হন। নাতসাই এমশ্যাংউইয়ের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। ১৫৮ বলে ৭টি বাউন্ডারিতে ৭১ রানের ইনিংসটি সাজান মাহমুদুল্লাহ।
এক ওভার পর আবার মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তাইজুল ইসলাম (১)। লাফিয়ে ক্যাচটি লুফে নেন পেসার পানিয়াঙ্গারা। ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি পেসার শাহাদাত হোসেন (৩)। এমশ্যাংউইয়ের তৃতীয় শিকার তিনি। মিড অনে মাসাকাদজার তালুবন্দি হন লেট অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
শাহাদাতের বিদায়ের পর ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক তুলে নেন শুভাগত হোম। এরপর ইনিংসটি বড় করতে পারেনি ময়মনসিংহের এই তারকা। এমশ্যাংউইয়ের বলে লং অনে মাসাকাদজার অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ১০৩ বলে ৫০ রান করা শুভাগত।
এরপরই অবশ্য ইনিংস ঘোষণা করেন মুশফিকুর রহিম। রুবেল হোসেন ৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৩৩ রান করে। শতক হাঁকান সাকিব আল হাসান (১৩৭) ও তামিম ইকবাল (১০৯)। জবাবে জিম্বাবুয়ে ৩৬৮ রানের বেশি করতে পারেনি। হ্যামিলটন মাসাকাদজা ১৫৮ ও চাকাব ১০১ রান করেন। ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে ৫ উইকেট নেন সাকিব।
৬৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ চতুর্থ দিন শেষে ২০১ রান সংগ্রহ করে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তামিম ২০, শামসুর রহমান ২৩, মুমিনুল হক ৫৪, সাকিব আল হাসান ৬ ও মুশফিকুর রাহিম শূন্য রান করেন।
মন্তব্য চালু নেই