সহকারি প্রক্টর লাঞ্ছিতসহ বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে বেরোবিতে মানববন্ধন
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়(বেরোবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে গভীর শঙ্কা। পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(অতিরিক্ত দায়িত্ব), সহকারী প্রক্ট্রর, শিক্ষক-শিক্ষার্থী লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলছে।
এ ঘটনায় বুধবার সকাল ১১ টায় ক্যাম্পাসে বারাবার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্চিত করা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর না থাকায় এবং বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনিক ভবনের একাধিক কর্মকর্তা অফিসেই আসেন না। তাদের অভিযোগ যেখানে সহকারি প্রক্টর অনিরাপদ সেখানে আমাদের নিরাপত্তা দিবে কে ?
সর্বশেষ মঙ্গলবার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী উত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদি হাসান শিশির এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাহমুদ গ্রুপ। এ সময় সহকারী প্রক্টর শাহীনুর রহমানকে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম লাঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এদিকে গত ৩ জুলাই সহকারী প্রক্টর শাহীনুর রহমানকে হত্যার হুমকি ও উপাচার্যকে প্রকাশ্যে গালাগালের অভিযোগে নিরাপত্তা প্রহরী নুরুজ্জামান রুবেল বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। যার তদন্ত এখনো চলমান আছে বলে জানান ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মতিউর রহমান।
অপরদিকে, গত ১৪ আগস্ট চাঁদার দাবিতে তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীকে মারধর এবং দপ্তরে ভাংচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানা যায়।গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনশন চলাকালীন তাদের উপর হামলা করে ৫ জন শিক্ষকসহ প্রায় ৩০ জনকে আহত করা হয়।
এ ঘটনায় রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম এবং ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যেখানে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হককে প্রদান করে একটি তদন্ত কমিটি হয়। যার প্রতিবেদন এখনো জমা দেওয়াই হয়নি। হামলায় আহত শিক্ষকদের সাথে কথা বললে জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রশ্রয়েই সেসময়ের হামলাকারীরাই ক্যাম্পাসে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।’ তারা হামলাকারীদের গ্রেফতারেরও দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উম্মে হাবিবা আশাকে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রলীগ কর্মী শাওন শুভ উত্যক্ত করায় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীটি। কিন্তু সহকারী সহকারী প্রক্ট্রর শাহীনুর রহমান জানান, ‘যেখানে নিজের নিজের নিরাপত্তা নেই সেখানে কিভাবে শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দিব।’পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা কার্যকর না হওয়ায় গত ১ জুলাই রেজিস্ট্রার দপ্তরে ঢুকে রেজিস্ট্রারকে গালিগালাজ ও দপ্তরে তালা লাগায় একটি চক্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার(অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোর্শেদ উল আলম রনি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যিনি প্রক্ট্ররের দায়িত্বে আছেন তার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, যেহেতু নতুন প্রক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়নি তাই তিনি এখনো দায়িত্বে আছেন।’এ ব্যাপারে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হক বলেন, ‘আমি বর্তমানে প্রক্টরের দায়িত্বে নেই। উপাচার্য মহোদয়কে পদত্যাগের ব্যাপারে জানিয়েছি কিন্তু তিনি পদত্যাগ পত্র জমা নিবেন না বলে জানান।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নিরাপত্তা নেই, এখানে শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিরাপদ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে গঠিত নামমাত্র তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো আন্দোলন-সংগ্রামের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশংকা করেছেন অনেকেই।
মন্তব্য চালু নেই