সরকার সংলাপে রাজি হলে এক দিনেই সংকটের অবসান : খোকা

বিরোধী জোটের সঙ্গে সংলাপে সরকার রাজি হলে দেশে চলমান সংকট এক দিনেই অবসান হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা।

রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন খোকা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া যে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, এর ভিত্তিতে আলোচনা সম্ভব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি।”

সাদেক হোসেন খোকা বলেন, “বিরোধী জোটের সঙ্গে সরকার সংলাপে রাজি হলে চলতি সংকট এক দিনেই অবসান হতে পারে।” সংলাপের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার আগে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। বিরোধী জোটের প্রতিনিধি ছাড়াও ওই আলোচনায় সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আলোচনা সরাসরি ও উন্মুক্ত পরিবেশে হতে পারে।” তা জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।

সাদেক হোসেন খোকা বলেন, “আমরা যেকোনো আলোচনায় প্রস্তুত আছি। আমরা এ কথা বলি না-কালই হাসিনাকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হবে এবং আমরা অবিলম্বে ক্ষমতা দখল করব। আমরা চাই সুস্থ গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসুক। সেই প্রক্রিয়ায় যদি শেখ হাসিনা অথবা অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসে, আমরা তা মেনে নেব্”

সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা। তার অভিযোগ, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর উগ্র-দলবাজ সদস্যদের শান্তিপ্রিয় জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাম উল্লেখ করে তাদের নিবৃত্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তার হুঁশিয়ারি, “রাষ্টীয় বাহিনীর পোশাক পরিহিত এসব ব্যক্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য জনগণ সংগ্রহ করে রাখছে এবং সময়মতো সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাদেক হোসেন খোকা শিক্ষার্থীদের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, “এসব ছাত্রছাত্রীর পরিবারের বড় একটা অংশ বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল।”

খোকার ভাষ্য, সরকার এসএসসি পরীক্ষাকে একটি ‘ইনস্ট্রুমেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করছে, যাতে বিরোধী দল বেকায়দায় পড়ে এবং আন্দোলনে ক্ষান্ত দেয়।

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান দাবি করেন, বিশ্ব ইজতেমার সময়ও আন্দোলন অব্যাহত ছিল। সব অসুবিধা সত্ত্বেও ইজতেমার নেতারা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য খোকা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তিনি জানান, নিউইয়র্কের বিখ্যাত ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র স্লোন ক্যাটারিং হাসপাতালে তার ‘ওরালকেমোথেরাপি’ শুরু হয়েছে। কত দিন এই চিকিৎসা চলবে-তা জানাতে পারেননি তিনি।

খোকা বলেছেন, “সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দিয়ে, শেখ হাসিনা দেশকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি আর সঙ্কটের দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।”

অভিযোগ করে খোকা বলেন, “দেশের বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতেই ভয়াবহ গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে হাসিনা সরকার।”

তিনি বলেন, “কোনো জনসমর্থন না থাকলেও শুধুমাত্র পোশাকধারী বাহিনীর কারণেই এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় আছেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই গুলি চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের। সময়মতো ব্যবস্থা নেবে জনগণ।”

সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের মধ্যে আব্দুল লতিফ সম্রাট, জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, গিয়াস উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান চৌধুরী, ড. নূরুল আমীন পলাশ, এবাদ চৌধুরী, আব্দুস সবুর, মোশাররফ হোসেন সবুজ, উত্তম বণিক, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ আহমদ, পেনসিলভেনিয়া বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুর খান হারুন, যুবদল নেতা মামুন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের দুই অংশের সভাপতি এম এ বাছিত ও আতাউর রহমান আতা, ছাত্রদল নেতা সোয়েব আহমেদ চৌধুরী, তারেকুল মারুফ, দেওয়ান রকি চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার অবৈধ ক্ষমতার দাপটে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় গত দেড়মাস যাবত তালাবদ্ধ করে রেখেছে। একইভাবে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরূদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে এমনকি সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ওই দফতরের টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”

খোকা বলেন, “অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা বাস্তবায়ন করার জন্য বর্তমান অস্ত্রবাজ সরকার এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করছে না। চলমান আন্দোলন-লড়াইয়ের মুখে তারা গণদাবি মেনে ক্ষমতা ছাড়ার পরিবর্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করার এক ভয়াবহ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে উদ্যত হয়েছে। এ জন্য তারা প্রয়োজনে দেশকে সিরিয়া বা ইরাক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার হুমকিও প্রকাশ্যেই দিয়ে চলেছে। বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার একদিকে দলীয় ক্যাডার ও দলবাজ গোয়েন্দা এজেন্টদের দিয়ে পেট্টলবোমা মেরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের নিরীহ নেতা-কর্মীদেরকে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে সরাসরি গুলি চালিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করছে।”



মন্তব্য চালু নেই