সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তাতে উগ্রবাদী ও চরমপন্থী শক্তির উত্থান ও বিস্তার আরো বাড়বে- খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন- ‘সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তাতে উগ্রবাদী ও চরমপন্থী শক্তির উত্থান ও বিস্তার আরো বাড়বে।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রকৌশলীদের এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি-সমর্থক অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এই সমাবেশের আয়োজন করে।
এসময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকার-কাঠামো নিয়ে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘মানুষ সংলাপের জন্য অনির্দিষ্টকাল বসে থাকবে না।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ওয়াদা নিশ্চয়ই আপনারা ভুলে যাননি। গত ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন বলেছিলেন।’
তিনি আরও জানান, এরপরও আলোচনা চলবে এবং একটি সমাঝোতা হলে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন করা যাবে। এখন সেই অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে তিনি আলোচনা ও সংলাপে বসতে অস্বীকার করছেন। আমরা এখনো এবং আমি আজ আবারো তাদেরকে আলোচনা ও সংলাপের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কাঠামোর ব্যাপারে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে,বাংলাদেশের মানুষ এমন একটি সংলাপের জন্য অনির্দিষ্টকাল বসে থাকবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।’
বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া জানান, ‘আমরা এখন আমাদের সংগঠনগুলোকে প্রস্তুত ও বিন্যস্ত করছি। অন্যান্য সমাজশক্তিগুলোকে সমন্বিত করছি। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছি। তাদের মতামত শুনছি।’
এ সময় তিনি আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এই পর্বের পর সংলাপের উদ্যোগ না নিলে জনগণের দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগের জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই আমাদেরকে রাজপথের আন্দোলনে নামতে হবে।’
এই সরকার বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া প্রকৌশলীসহ সর্বস্তরের পেশাজীবীদের অংশ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সরকারের প্রতি দেশের জনগণের কোনো আস্থা ও সম্মতি নেই। সরকারেরও জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। এই সংসদে ১৫৩ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছেন। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। ফলে এই সরকারের কোনো বৈধতা নেই, তারা অবৈধ।’
সরকারের সমালোচনায় তিনি বলেন, ‘এই সরকার মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা লুটপাট করছে। দেশের সম্পদ বাইরে পাচার করছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশ যতটুকু অগ্রসর হয়েছে, সেগুলো জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থার কারণেই হয়েছে। কিন্তু এখন আর সেই ব্যবস্থা নেই। তাই একটি বাসযোগ্য ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে আনতে আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা দেশে অশান্তি, সংঘাত, অস্থিরতা ও রাজপথের উত্তাল আন্দোলনে সহসা যেতে চাই না। আমরা এখনো এবং আমি আজ আবারো সরকারকে আলোচনা ও সংলাপের পথে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দলীয় সরকার কাঠামোর ব্যাপারে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
স্বল্প সময়ের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন,জনগণ এমন একটি সংলাপের জন্য অনির্দিষ্টকাল বসে থাকবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। সংলাপের উদ্যোগ না নিলে জনগণের দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগের জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই আমাদের রাজপথে আন্দোলনে নামতে হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কর্মসূচি শুরুর আগে ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে প্রয়াত স্বামী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, ছেলে তারেক রহমান ও নিজের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, দেশে এক অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এটা চলতে পারে না। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। সংবিধান, রাষ্ট্র, জাতীয় ইতিহাস, জনগণের জীবন-জীবিকা ও অধিকার আজ তছনছ করা হচ্ছে। এরকম অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে শুধু বাংলাদেশ নয়,এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাই হুমকির মুখে পড়বে।
যেভাবে স্বেচ্ছাচারী শাসন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেভাবে গণতান্ত্রিক উদার রাজনৈতিক ধারাকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে, তাতে কেবল উগ্রবাদী ও চরমপন্থী শক্তির উত্থান ও বিস্তারের আশঙ্কাই বাড়তে পারে। এতে দেশের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে ছেয়ে যাবে।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী লীগই দেশে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করে উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের অভিংশনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের কাছে দিয়েছিল। সেই ক্ষমতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিচারপতিদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল গঠনের মধ্য দিয়ে।
আজ সেই ক্ষমতা আবার অনির্বাচিত সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হচ্ছে। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হবে। ন্যায় বিচারের সুযোগ আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। অতীতের ভুল-ত্রুটি শুধরে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বলে জানান খালেদা জিয়া।
আমি অনেকবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি। এসব দায়িত্ব পালনে আমার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি ও ক্রুটিগুলোও আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তার আলোকে দেশের বিরাজমান সমস্যা-সংকট নিরসন ও একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা হাতে নিয়েছি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা। ওই পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশের সব মেধা, যোগ্যতা, সামর্থ্য ও কর্মশক্তিকে আমরা এক মোহনায় মেলাবো, বলেন তিনি। সমাবেশ থেকে অ্যাবের সভাপতি আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে প্রকৌশলীদের পাশাপাশি বিএনপির নেতাদের মধ্যে সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, আবদুল হালিম, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নুর মোহাম্মদ খান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, পিপলস লীগের চেয়ারম্যান গরীবে নেওয়াজ, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের প্রধান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই