সরকারি স্কুলে ভর্তিতে লটারি: অভিভাবক-শিক্ষাবিদদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
রাজধানীর ১৬টি সরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিতে লটারি গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে এক হাজার ৬৮০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এবারো লটারির মাধ্যমে ভর্তি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি শিশুর শিক্ষাজীবনের শুরুতে লটারি বা পরীক্ষা কোনটিই গ্রহণযোগ্য নয়। তার জন্য তৈরি করতে হবে সমান সুযোগ। এ জন্য প্রতিটি এলাকায় মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি তাদের।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ৩৫ সরকারি স্কুল ও ৩টির ফিডার শাখাসহ ৩৮টির মধ্যে ১৬টিতে এবার প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। স্কুলগুলো হচ্ছে গভর্মেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ধানমণ্ডি সরকারি বয়েজ হাইস্কুল ফিডার শাখা, ধানমন্ডি গভর্মেন্ট বয়েজ হাইস্কুল শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ফিডার শাখা।
প্রথম শ্রেণীতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে। তবে শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধে এবং শিশুদের ভর্তি চাপ থেকে মুক্ত রাখতে লটারি পদ্ধতি চালু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল কয়েকজন অভিভাবক প্রশ্ন করেন লটারিতে শিশুদের স্কুলে ভর্তি পদ্ধতি কতটা শিক্ষাবান্ধব? তারা বলেন, একটি শিশুর শিক্ষাজীবনের শুরুতে লটারি বা পরীক্ষা কোনোটিই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সব শিশুর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। এটি তার জš§গত অধিকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, লটারি পদ্ধতিতে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিতে শিশুর ওপর ভর্তি প্রস্তুতির চাপ কমেছে। অনেকেক্ষেত্রে দেখা যেত প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য যে প্রশ্ন করা হতো তা পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপযোগী। তিনি বলেন, প্রথম শ্রেণীতে লটারি বা পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হওয়ার যে নিয়ম কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিটি এলাকায় মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
অন্যদিকে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি ক্ষেত্রে এবার ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা নির্ধারণ করে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে অবস্থিত থানার ভিত্তিতে ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ওই এলাকার বাসিন্দা নির্ধারণে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ওই এলাকার ভোটার, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকানা, সরকারি বাসার বরাদ্দপ্রাপ্ত এবং ভাড়াটিয়া। ভর্তির আবেদনের সময় এই চারটির যে কোনো একটির প্রমাণাদি সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার আলোকে ঢাকায় যানজট নিরসন এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমানোর উদ্দেশ্যে ২০১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুল ভর্তিতে এলাকা কোটা নির্ধারণ এবং তা বাধ্যতামূলক করা হয়।
উল্লেখ্য, দেশের ১৭৫টি সরকারি স্কুলের ৪৬ হাজার ৮৫১টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ২০৮টি। এসব স্কুলে প্রতি আসনে পাঁচজন শিক্ষার্থী লড়াই করে। এছাড়া অন্য ৬২ জেলা শহরের স্কুলগুলোতে ৩৬ হাজার ৬১৪টি শূন্য আসনের বিপরীতে এক লাখ ৬৬ হাজার ৫০২ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
মন্তব্য চালু নেই