সরকারি চাপে আ.লীগে যোগদান খালেদার ভাতিজাদের
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে-মেয়েরা সরকারের চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা।
নেতারা বলছেন, তারা স্বেচ্ছায় আওয়ামী লীগে যোগ দেননি। কোনো না কোনো চাপে ফেলানো হয়েছে। আত্মরক্ষার জন্যই তারা এ ধরনের কাজ করেছেন। তবে এ ঘটনা রাজনীতিতে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করবে না বলেই তারা মনে করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেনীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের শ্রীপুর ইস্কান্দারিয়া আলীম মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিম ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর হাতে ফুলের নৌকা তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন খালেদা জিয়ার ভাতিজারা।
যোগদানকারীরা হলেন- খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই আজহারুল হক মজুমদারের ছেলে একেএম মহিউদ্দিন সামু, আবদুল মোমিন মেম্বর, কামরুল ইসলাম, হাসনা বানু মুক্ত, হাছিনা আক্তার, আনোয়ার হোসেন, জীবন, রনিসহ দলটির শতাধিক নেতাকর্মী।
সামু এক সময় উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। বিএনপির সমর্থনে তিনি তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজনীতি কি এতো ঠুনকো নাকি? নেতাকর্মীরা কথায় কথায় হতাশ হয়ে যাবেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন খালাতো ভাই শেখ শহীদুল ইসলাম জাতীয় পার্টি (আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) বর্তমান মহাসচিব) করছেন, জাতীয় পার্টির মন্ত্রীও ছিলেন। তাতে কি আওয়ামী লীগ ভেঙে গেছে? এটি যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। রাজনীতিতে এক ঘরে একাধিক পার্টি করার ঘটনাও রয়েছে। রাশেদ খান মেনন এক পার্টি করেন, তার বোন বেগম সেলিমা রহমান করেন অন্য পার্টি। রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, অন্যদিকে বেগম সেলিমা রহমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।’
গয়েশ্বর আরও বলেন, ‘যতভাবে নোংরামি করা যায় সরকার তার সবই করছে। এ সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হলে তখন তারা সবল থাকতো। কিন্তু এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এজন্য এরা দুর্বল। সে কারণে অরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তারা বেশি মাথা ঘামাচ্ছে।’
ফেনীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান প্রসঙ্গে দলের এ নীতিনির্ধারক বলেন, ‘এটি সরকারের নোংরামি। আওয়ামী লীগে যারা যোগদান করেছেন তারা তো স্বেচ্ছায় করেনি। নিশ্চয় তাদের কোনো না কোনো চাপে ফেলানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে আত্মরক্ষার জন্য তারা এ ধরনের কাজ করতেই পারে। তাই এ ঘটনাকে ভিন্নভাবে দেখা ঠিক হবে না। ওয়ান-ইলেভেনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমও তো চাঁদাবাজির মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ক্ষমতা হাতে থাকলে অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু ক্ষমতা যখন থাকবে না, তখন দেখা যাবে- কী করতে পারে।’
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘যারা (আওয়ামী লীগে) যোগদান করেছেন তাদের নাম আমরা আগে পার্টি পর্যায়ে শুনিনি। তারা যদি সংগঠনে থাকতেন, আন্দোলন করতেন, দলের সাথে তাদের সেভাবে সম্পর্ক থাকতো; সেক্ষেত্রে একটি ব্যাপার হতে থাকতো। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাইয়েরা ওইভাবে রাজনীতিতে আসেননি। তবে তার ছোট ভাই কামাল (আহমেদ কামাল) ভাইয়ের বিএনপির রাজনীতির সাথে একটি সম্পর্ক ছিল। বেগম খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার সাহেবও রাজনীতিতে এসেছিলেন। তবে ম্যাডামের চাচাতো ভাই বা অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজনদের রাজনীতিতে সম্পৃক্তির ব্যাপারটি আমরা ঠিক সেভাবে দেখিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে এখন ভয়ঙ্কর অস্থিরতা চলছে। জাতীয় পার্টিতে স্বামী-স্ত্রীর বিভক্তি। স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি, অন্যদিকে স্ত্রী রওশন এরশাদ সাবেক ফাস্ট লেডি। বাংলাদেশে এই মাপের মানুষদের মধ্যে এ ধরনের বিভক্তি আমরা আগে দেখিনি। স্বামী স্ত্রীর বিরুদ্ধে, স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে। সেজন্য এখনকার কোনো ঘটনাকেই খুব বড় একটি বিষয় হিসেবে ধরা যাচ্ছে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে এখন রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্কট, বিরোধী দলের জন্য ন্যূনতম কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস নেই। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তবে মহামান্য প্রধান বিচারপতির (এস কে সিনহা) একটি মন্তব্যে সবকিছু হঠাৎ করে রাতারাতি পাল্টে যাচ্ছে। তারমধ্যে এ ধরনের একটি সংবাদ (আওয়ামী লীগে যোগদান) রাজনীতিতে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করবে বলে মনে হয় না।’
দুদু বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য ভালো না। বিএনপিকে তছনছ ও বিভক্ত করার জন্য তারা আগাগোড়াই নানাভাবে চেষ্টা করছে। তবে সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন, তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সাহেব যতদিন বেঁচে আছেন, বিএনপির ওপর যত আঘাতই আসুক না কেন, বিএনপিকে বিভক্ত করা যাবে না।’
শামসুজ্জামান দুদু দাবি করেন, এ ঘটনার পেছনে নানা ধরনের ব্যাপার থাকতে পারে। তিনি বলেন, তবে ঠিক কী কারণে তারা যোগদান (আওয়ামী লীগে) করলো তা আমরা জানি না। তারপরেও বলব, এ ঘটনায় সরকারের হাত থাকতে পারে।
মন্তব্য চালু নেই