সরকারকে আরেকটা ধাক্কা দিতে হবে : ফখরুল
সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দাবি করে তাদের উৎখাতে আরেকটি ধাক্কা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই একটি ইস্যুতেই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই সরকারের আমলে দেশে শান্তি, স্বস্তি নেই। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে তাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এখন আরেকটি ধাক্কা দিলেই হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যান পার্টির সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা দ্রুত শেষ করতে সরকার উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, সেজন্য মামলার আদালতও অন্যায়ভাবে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যান্য হাজার হাজার মামলা পড়ে থাকলেও সেগুলো নিয়ে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। অথচ গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করা নেত্রীর নামে মিথ্যা মামলা দ্রুত শেষ করার পাঁয়তারা চলছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অন্যায়ভাবে তার (খালেদা জিয়া) নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্য এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েও হতাশ হয়েছি।’
সরকার বিচার বিভাগকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করে মামলার রায় দিতে বিচারকদের বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের এতোটুকু স্বাধীনতা আছে বলে মনে হয় না। এখন বিচারকরা রায় দেয় উপর মহলের নির্দেশে।
‘বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির এমন প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের সমালোচনা করেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, দুর্নীতি বেড়েছে আর দুদক দায়মুক্তি দিয়েছে। এটি এখন সরকারের বি টিম হিসেবে কাজ করছে। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন নয়, দায়মুক্তি কমিশনে পরিণত হয়েছে।
সরকার আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে দাবি করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি কোনো দেশের সঙ্গে সরকারের ভালো সম্পর্ক নেই। দেশ বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। বিদেশে মানুষ কাজে যেতে পারনো। দেশে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের কোনো বোধোদয় নেই।
সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, এক্ষেত্রে তাদের অপছন্দের লোক হলেই তাকে ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দলীয়করণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোক না হলে তাকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সরকার সংবিধানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি বলেন, এই সরকার শুধু সংবিধান ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা একের পর এক গণবিরোধী আইন পাস করে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ক্ষমতাসীনরা দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র হুমকির মুখে ফেলেছে মন্তব্য করে বিএনপি এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এখন ৪৩ বছর পরও চিৎকার করে বলতে হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা নেই। যারা যুদ্ধ করেছেন তারা এই দেশের কথা চিন্তা করেননি।
কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া, ডেমোক্রেটিক লীগ-ডিএলের মহাসচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, কল্যান পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই