সমঝোতা হলে আশাবাদী বিএনপি নেতারা
রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সবই সম্ভব বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তবে তার আগে সমঝোতা-সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি ড. এমাজউদ্দিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তারা কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ একটি দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সংলাপে বসলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও নির্বাচনে যেতে রাজি হতে পারে, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাবও দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকবে দুটো। প্রথমত নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, দ্বিতীয়ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নির্দলীয় হতে হবে তা আমি বলছি না, কিছুদিন আগে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যেমন নির্বাচন হয়েছে। অর্থপূর্ণ সংলাপ করতে হলে উভয় পক্ষকেই খানিকটা ছাড় দিতে হবে।
বিএনপিপন্থী এই শিক্ষকের এমন ফর্মুলা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর আলোচনা।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেছেন, তবে অধিকাংশ সিনিয়র নেতার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, সমঝোতা বা সংলাপের জন্য আগে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন-আটক-জেল-জুলুম বন্ধ করতে হবে। আটক নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। বিএনপি সমঝোতা সব সময় চায়। বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনের জন্য ৭টি প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছেন। সরকার চাইলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারে।
নেতারা আরো মন্তব্য করেন, পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সংকট নিরসন সম্ভব। সমঝোতা হলে সবই সম্ভব। এজন্য দুপেক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এমাজউদ্দিনের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এমাজউদ্দিন কী বলেছেন তা আমি জানি না। উনি আমার সঙ্গে কোনো আলাপ করনেনি। আমাদের বক্তব্য আমরা প্রকাশ্যেই বলেছি। আমরা একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।’
এমাজউদ্দিনের প্রস্তাব অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন সম্ভব কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। সব কিছুই সম্ভব। এটা সমঝোতার বিষয়। সমঝোতা হলে সবই সম্ভব। শেখ হাসিনাকে রেখেও নির্বাচন সম্ভব, যদি তিনি কোনো ক্ষমতা ব্যবহার না করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না। উনি তো এসব কিছু পরিষ্কার করেন নাই। এমন একটা সরকার হতে হবে যাতে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে। এর জন্য সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে।’
শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা, জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, ‘এটা তো শেষ প্রশ্ন। এতো আগে এটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। এগুলো তো অনেক পরের বিষয়। আগে তো প্রধানমন্ত্রীকে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। দল নিরপেক্ষ লোকদের দিয়ে প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে হবে।’
যদি সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপির কিছু দাবি সরকার মেনে নেয়, তাহলে কি বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু নয়, নির্বাচন স্বচ্ছ করার জন্য পুরো আয়োজন সম্পন্ন হতে হবে। নেত্রী অবরুদ্ধ, পার্টি অবরুদ্ধ। এসব থেকে সরকার যখন সরে আসবে। আমরা যখন বুঝতে পারবো আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ হবে, মাঠ লেভেল প্লেইং হবে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আমরা পুরোটাই ফেরৎ পাবো, তখন নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
চেয়ারপারসনরে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে। তারপরও আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে কার অধীনে হবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি হয়তো দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদের সাথে আলোচনা করে পরমর্শ নিতে পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন ম্যাডাম।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এসব ফর্মুলা দিয়ে কোনো কাজ হবে না। যে কোনো ভাবেই হোক তারা সরকার গঠন করেছে। সরকার গঠনের আগে তারা বলেছে, এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। এখন বলছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন নয়। তারা নির্বাচনের বিষয়ে বিন্দু মাত্র নমনীয় নয়। কারণ আওয়ামী লীগ একটা ফ্যাসিস্ট দল। তারা দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘তারা সমঝোতা চাইলে খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে পারতো। তা না করে নাকচ করে দিয়েছে। এখন বিএনপি যদি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়, সেটাকে নিয়েও তারা রাজনীতি করবে। বলবে, আগেও তো আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দিয়েছিলো তা কেন বিএনপি মানেনি। এখন কেন প্রস্তাব দিচ্ছে। ঠিক আছে প্রস্তাব গ্রহণ করা হলো। মেয়াদ শেষ হলে শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বোচনে অংশ নিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অবস্থা বিচারে বিএনপির আর কোনো প্রস্তাব দেয়া উচিৎ নয়। আওয়ামী লীগ কোন প্রস্তাব দিলে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এই মুহূর্তে বিএনপির জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের দাবি আদায় হবে। সেজন্য যা যা করা দরকার বিএনপি করবে।’
মন্তব্য চালু নেই