‘সমঝোতায় আসতেই হবে’

সাধারণ মানুষের মৃত্যু টলাতে পারছে না দুই নেত্রীর অবস্থানকে, ফলে লাশের সংখ্যা বাড়ছে৷ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ বার্ণ ইউনিটের পরিবেশ দগ্ধদের আর্তচিৎকার দিন দিন ভারী হচ্ছে৷ দেশের মানুষের সামনে শুধুই অন্ধকার৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯৬ সালে ৮২ জনের মৃত্যুর পর সমঝোতা হয়েছিল৷ ২০০১ সালে জীবন দিতে হয়েছিল ৯৬ জনকে৷ এরপর ২০০৬ সালে মারা যান ৩২ জন আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জীবন দিয়েছেন ৫৯ জন৷ অথচ এবার, মানে গত এক মাসে এই মৃত্যু মিছিলে যোগ হয়েছে আরো ৬১ জন সাধারণ মানুষের নাম৷

প্রশ্ন হলো, আর কত মৃত্যু হলে বাংলাদেশের দুই নেত্রী সমঝোতায় আসবেন? সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘খুব সহসাই আমাদের প্রধান দুই নেত্রীকে সমঝোতায় আসতেই হবে৷ কারণ এভাবে চলতে পারে না৷”

এক মাস অবরোধ চলার পর বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘বিএনপি জোটের নাশকতার কারণে দেশে কোনো ধরনের অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসার কিংবা জরুরি অবস্থা জারির আশঙ্কা নেই৷ জরুরি অবস্থা দেয়ার মতো অবস্থা কেউ এখনও সৃষ্টি করতে পারেনি৷ এটা কখনও হবে না৷ অসাংবিধানিক পন্থায় দেশ ছেড়ে দেবো না৷ কেউ এই চেষ্টা করলে জনগণই তা রুখে দেবে৷ অলৌকিক স্বপ্ন দেখে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া, শরীরের রক্ত থাকতে তা হতে দেবো না৷”

বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আবারো আলোচনায় এসেছে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, তাহলে সরকারই কি সেই ধরনের কিছু ভাবছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যাই বলুন না কেন? জনগণের কথা ভেবে তাদের (দুই নেত্রীকে) এক ধরনের সমঝোতায় আসতেই হবে৷ এভাবে তো আর দিনের পর দিন চলতে পারে না৷ তাছাড়া সংসদে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটা তার ‘পলিটিক্যাল স্টান্ট’৷ সরকার যে শক্ত অবস্থানে আছে সেটা তাকে দেখাতে হবে৷ কারণ এটা না হলে তাদের কর্মচারী-সমর্থকরা হতাশ হয়ে যাবেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রীও যে এ সব নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেটা বোঝা যাচ্ছে৷ আর দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে কারো জন্য তা ভালো হবে না৷ কারণ আমাদের অর্থনীতি একটা ভালো অবস্থা থেকে দিন দিন নেমে যাচ্ছে৷ এভাবে চললে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে৷ আবার কূটনীতিকরাও তৎপরতা শুরু করবেন৷ ফলে যেভাবেই হোক সমাধান একটা করতে হবে৷”

জরুরি অবস্থা নিয়ে সংসদে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘জরুরি অবস্থা দিতে হলে রাষ্ট্রপতিকে লিখিত দিতে হবে আমার৷ সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদে কেউ অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে সেটা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এই অপরাধে ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’-এর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সংবিধানে৷”

তিনি বলেন, ‘‘২০০৭ সালে দেশে যখন জরুরি অবস্থা আসে, তখন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজে একসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান ছিলেন৷ যার কারণে একক সিদ্ধান্তে জরুরি অবস্থা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু এখন আমি প্রধানমন্ত্রী আছি, এখন রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা দিতে হলে আমার (প্রধানমন্ত্রীর) লিখিত নিতে হবে৷ অনেকে এখন বলাবলি করছেন অথবা একজন আরেকজনকে ফোন করে বলছেন, ‘এই বুঝি জরুরি অবস্থা এসে গেল’৷ কিন্তু জরুরি অবস্থা লাগবে কেন? জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে৷ জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করবো৷”

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘দেশে এখন যেভাবে প্রাণহানি বাড়ছে তাতে সবাই উদ্বিগ্ন৷ এভাবে তো আর একটা দেশ চলতে পারে না৷ প্রধানমন্ত্রী যতই বলুন না কেন কিছুই হয়নি৷ আসলে কি তাই? গত এক মাসে ৬০/৬২ জন মানুষ মারা গেলেন আর কিছুই হবে না, তাই কি হয়? দুই দলই এ সব হত্যার দায় অস্বীকার করছে৷ কিভাবে কী ঘটছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছেন না৷ আসলে একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি৷ আমাদের প্রধান দুই নেত্রী দেশের সঠিক অবস্থা অবশ্যই বুঝতে পারবেন এবং সঠিক পদক্ষেপ নেবেন৷”

তার কথায়, ‘‘আমি এখনো আশাবাদী যে, দুই নেত্রীই একটা সমঝোতায় আসবেন এবং তারা আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন৷”- ডিডব্লিউ



মন্তব্য চালু নেই