সবুজ ক্যাম্পাসে রঙিন প্রজাপতি মেলা
শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন: ”প্রজাপতিটা যখন তখন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে রাঙা মেঘের মত’’। প্রজাপতি নামটি শুনলেই মন ভালো হয়ে যায়। কেমন একটা পূত পবিত্র ভাব ফুটে উঠে। রঙ আর বৈচিত্রে প্রজাপতির তুলনা শুধুই ই প্রজাপতি । রাতের ঐশর্য্য যেমন জোনাকি তেমনি দিনের সৌর্ন্দয্য প্রজাপতি । কৈশোরের সোনালী দিনগুলোতে সবাই কম-বেশী প্রজাপতির পিছনে ছুটেছে। প্রজাপতির রঙিন ডানার সৌন্দর্য্যের জাদু সবার মনকে আন্দোলিত করে,করে গতিশীল ।
প্রজাপতির বর্ণিলতা আর রূপবৈচিত্র মুগ্ধতা ছড়ায় প্রকৃতি প্রেমীদের মনে । কিন্তু ইট পাথরের এই শহরে যেখানে সবুজের দেখা পাওয়া দুষ্কর ,সেখানে প্রজাপতি তো ডুমুরের ফুল।
আচ্ছা ভাবুন তো এমন এক রাজ্য যেখানে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি খেলা করছে। এই ফুল হতে ঐ ফুলে উড়ে মধু আহরন করছে। হ্যাঁ ,গত শুক্রবার (৪ নভেম্বর)এমন এক কল্পনার রাজ্যে সেজেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় । প্রজাপতি ও প্রকৃতি সংরক্ষণে গণসচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগ সপ্তম বারের মতো আয়োজন করে প্রজাপতি মেলার। সকাল ১১ টায় প্রজাপতি অবমুক্ত করে ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম । সকাল সন্ধ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে উড়ে বেড়িয়েছে হিমেল কুচি,তুষার কন্যা,অমরাবতি,কেশবতি সহ ৯০ প্রজাতির হাজারো প্রজাপতি ।
ছুটির দিন হওয়ায় ঢাকার অদূরে প্রকৃতি আর প্রজাপতির দেশ জাহাঙ্গীরনগরে ভিড় করে প্রকৃতি প্রেমীরা। পত্রিকায় খবর পড়ে রাজধানী তেজগাঁও থেকে ঘুরতে আসেন ফটোগ্রাফার সুপ্রিয়া দেবী । সুপ্রিয়ার মতো অনেকে এসেছে ক্যামেরা হাতে। ছিলো প্রজাপতি গবেষক,মিড়িয়া কর্মী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী সহ নানা বয়সের মানুষের ভিড়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি চত্বর ও জহির রায়হান অডিটেরিয়ামে প্রজাপতির চিত্র প্রদর্শিত হয়। দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ব্লাটার ফ্লাই ব্রিডিং সেন্টার এন্ড পার্ক। জাল দিয়ে বানানো বিশেষ ধরনের হাটে খুব কাছ থেকেই লতায়-পাতায়,ফুলে-গাছে প্রজাপতির উড়ে বেড়ানো দেখার সুযোগ হয় আগতদের। এই রঙিন প্রতঙ্গটির সৌর্ন্দয্য মুগ্ধ করে সব বয়সী মানুষের।
শুধু সৌর্ন্দয্য নয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা অপরিসীম। তাই তো শ্লোগান ছিলো ’উড়লে আকাশে প্রজাপতি,প্রকৃতি পায় নতুন গতি”। মেলায় প্রজাপতি ও প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদানে জীবন ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশনকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় । জাবি প্রাণী বিদ্যা ছাত্ও সাব্বির হোসেন খানকে দেওয়া হয় ইয়াং বাটারফ্লাই অ্যানথুজিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড। মেলার আহবায়ক ও জাবি প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার তুহিন বলেন ,প্রজাপতি বাচঁলে প্রকৃতি বাচঁবে আর প্রকৃতি বাচঁলে দেশ বাঁচবে। তিনি প্রজাপতির পাশাপাশি ফড়িং সংরক্ষণে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ।
শিল্পায়ন ও নগরায়নের এই যুগে আমরা যখন প্রকৃতি ধ্বংসের খেলায় মত্ত্ব তখন প্রকৃতি যতেœর এই উদ্যোগ নতুন দিনের ই সূচনা । নয়নাভিরাম লেক আর অতিথী পাখির ক্যাম্পাস হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরকে চিনলেও তার পাশে যুক্ত হলো নতুন বিশেষণ ,প্রজাপতির আর ঘাস ফড়িংয়ের ক্যাম্পাস। আর বইয়ের উপর বা সকাল বেলার চায়ের কাপের প্রজাপতি দেখতে দেখতে বড় হওয়া জাবিয়ানরা গড়বে সবুজ আগামী এমন প্রত্যাশা সবার ।
মন্তব্য চালু নেই