সফল বিয়ের জন্যে যে ১৩টি প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন
বিষয়টি যখন বিয়ে সংক্রান্ত, তখন কেউ বলতে পারে না কোন বিষয়টি সব এলোমেলো করে দিতে পারে। লজ্জা, ভয় বা রোমান্টিসিজমের রহস্যময়তার কারণে হবু দম্পতিরা একে অপরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। অথচ ভবিষ্যতের জন্যে এগুলো অতি প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রিলেশনশিপ এনহেন্সমেন্ট-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রবার্ট স্কুকা বলেন, এসব বিষয় বিয়ের আগেই দুজনের আলোচনায় আসা উচিত। বিষয়ের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী শুধু পালন করে যেতে হবে। গোপন কিছু থাকলে যা বছরের পর বছর মনে পুষে রাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এখানে বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যার উত্তর বিয়ের আগেই জুটিদের জেনে রাখা জরুরি।
১. তোমার পরিবারে কোনো বিতর্কের অবসান গ্লাস ভাঙার মাধ্যমে, নাকি শীতলভাবে অপরের কণ্ঠরোধের মাধ্যমে ঘটে? কাপলস ইন্সটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পিটার পিয়ারসন জানান, সম্পর্কে সফলতা আসে দুজনের পার্থক্য কিভাবে মেটানো যায় তার ওপর। দুজন কিভাবে দুজনের পার্থক্য মিটিয়ে নেবেন সে সম্পর্ক দুজনেরই ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।
২. আমরা কি সন্তান নিবো, যদি নিই তুমি কি সবকিছু করতে প্রস্তুত? সংসার সামলানো এবং সন্তান পালনের ক্ষেত্রে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ডিভোর্স ও সম্পর্ক বিষয়ক কোচ ডেবি মার্টিনেজ জানান, সন্তানকে পালনের ক্ষেত্রে সঙ্গী বা সঙ্গিনী কতটা সৎ তার হিসাব পরিষ্কার হওয়ার দরকার। বিয়ের আগেই এ প্রশ্নের উত্তর জানলে ভালো। আবার কয়টা সন্তান নেওয়ার ইচ্ছে দুজনের, সে বিষয়েও জেনে রাখা ভালো।
৩. সাবেকদের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা কি ভালো করবে, নাকি সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটাবে? স্পর্শকাতর একটি প্রশ্ন। কিন্তু খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার বলে মনে করেন ন্যাশনাল ম্যারেজ প্রজেক্টের পরিচালক ব্রাডফোর্ড উইলকক্স। দুজনের একজন বা দুজনই যদি সাবেক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা নিয়ে থাকেন, তবে তা শেয়ার করা বুদ্ধিমানের কাজ। সেই অভিজ্ঞতা নতুন সংসারে ভালো কিছু এনে দিতে পারে। আবার বর্তমানের সঙ্গে সাবেকের তুলনায় ভালো বা খারাপ কিছু বেরিয়ে আসতে পারে।
৪. ধর্ম কতটা জরুরি? ধর্মীয় ছুটি কিভাবে উদযাপন করবে? এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ যখন দুজন দুই ধর্মের অনুসারী হবেন। ধর্ম আলাদা হলে এ বিষয় আলোচনার বিষয় হতে পারে। এ নিয়ে আগাম ধারণা থাকাও ভালো। এতে পরবর্তিতে ঝামেলার সৃষ্টি হবে না। আবার সন্তান হলে তাদের ধর্মীয় পথ কোনটা হলে ভালো ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় আসবে।
৫. গাড়ি, বাড়ি নাকি পোশাক, কোনটাতে খরচ করতে বেশি মন চায়? শখের বিষয়ে যার যার আলাদা মত থাকতে পারে। এটা বিতর্কের বিষয় নয়। তবে জেনে রাখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খায় এমন শখ পালনের পরিকল্পনা তৈরি হতে পারে।
৬. আমাকে ছাড়াও কি তুমি অন্যান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাও, যেমন বন্ধু-বান্ধব বা শখ? বহু মানুষ বিয়ের পর নিজের বা অপরের জীবনটাকে কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ দেখতে চান। যেমন- স্বামী চান না তার স্ত্রী বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আগের মতোই যোগাযোগ করুক। এ নিয়ে দুজনই নিজের চিন্তা-ভাবনা পরিষ্কার করতে পারেন। একজনের বন্ধুমহল নিয়ে অপরের অভিযোগ থাকলে তা স্পষ্ট হওয়ার এখনি সময়। আবার এ ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু নিয়েই আলাপচারিতা হতে পারে।
৭. আমার ঋণ কি তোমারও ঋণ, আমি বিপদে পড়লে তুমি কি উদ্ধার করতে ইচ্ছুক থাকবে? অর্থনৈতিক বিষয়ে সঙ্গী-সঙ্গিনী কি নিজেদের আলাদা ভাবেন কিনা তা জানা প্রয়োজন। ডিভোর্স বিষয়ক আইনজীবী ফ্রেডরিক হার্টজ জানান, বিপদে দুজন কিভাবে দুজনের পাশে দাঁড়াবেন তা এর জবাব থেতে উঠে আসতে পারে। আবার শুধুমাত্র হবু স্বামী উপার্জন করলে সংসার চালাতে সুন্দর একটা বাজেট তৈরি করতে হবে দুজনের মিলেই।
৮. আমরা কি একে অপরের বাবা-মাকে পছন্দ করি? ঘরে ঘরে এ সমস্যা অশান্তির বীজ রোপন করে দেয়। শ্বশুর-শাশুড়িকে কেউ সহ্য করতে পারেন না। যদি অভিযোগ থেকেই যায়, তবে তা দুজনের মধ্যেই আলোচনা হতে পারে। আবার যার যার বাবা-মায়ের দুর্বলতা বা ভালো দিকগুলোও তুলে ধরতে পারেন। এতে দুজনের মধ্যকার দূরত্ব দূর হবে।
৯. সেক্স কতটা জরুরি? দম্পতিরা চান একের কাছে অপরজন যৌন আবেদনময়ী হবেন। কিন্তু যৌনজীবন সম্পর্কে কে কি ধারণা রাখেন তা জানতে হবে। দুজনের অভিজ্ঞতা বা ধারণাও শেয়ার করা যেতে পারে। উপভোগ করা বা আনন্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে জরুরি আর কি রয়েছে বলে মনে করেন, তাও আলোচনায় আনুন।
১০. পর্ন ছবি দেখা কি স্বাভাবিক বিষয়? এক সঙ্গে পর্ন ছবি দেখাকে দুজন কিভাবে দেখেন তা জেনে নেওয়া উচিত। আবার অন্যদের সঙ্গে মেলা-মেশা কতদূর পর্যন্ত মেনে নেওয়া যায় বলে মনে করেন, তাও জেনে নেওয়া উচিত। পর্ন ছবি বা অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক কতদূর গড়ালে দুজনের কাছে দৃষ্টিকটু হবে না তা আলোচনার বিষয়।
১১. ভালোবাসা প্রকাশের সব উপায় কি তুমি জানো? ভালোবাসা প্রকাশে বিভিন্ন উপায় বিয়েটাকে সফল করে বলে ‘দ্য ফাইভ লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ’ বইয়ে লিখেছেন গ্যারি চ্যাপম্যান। ইতিবাচক থাকা, প্রেমপূর্ণ সময়, উপহার দেওয়া বা পাওয়া ইত্যাদি সময় সবই ভালোবাসা প্রকাশের উপায়। ভালোবাসা প্রকাশের কতগুলো ভাষা আছে তা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।
১২. আমার কোন বিষয়টি ভালো লাগে, আবার কোন বিষয়টি অবমাননাকর? এর জবাব চ্যালেঞ্জিং হবে। দুজনের কোন বিষয়টি ভালো লাগে এবং ভালো লাগে না ইত্যাদির জানান দেওয়া ভালো। ফলে অপরের চোখে আপনার বাজে স্বভাব ভেসে উঠলে তা শুধরে নিতে পারবেন।
১৩. আগামী ১০ বছর পরের সময়টাকে কিভাবে দেখছো?
মন্তব্য চালু নেই