সন্ধ্যার পর জুয়ায় মাতেন পুরান ঢাকাবাসী

বিপিএল উন্মাদনায় সারা দেশ। দুপুরের খেলাগুলোর সময় অনেকেই কাজে ব্যাস্ত থাকেন। তবে সন্ধ্যার খেলাগুলো খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই উপভোগ করেন দর্শকরা। উৎসব উদযাপনের দিক থেকে পুরান ঢাকাবাসীর অন্যরকম সুনাম রয়েছে। বিপিএলেও কম যান না তারা। সন্ধ্যার পর থেকেই জমে ওঠে পুরান ঢাকার রাজনৈতিক ক্লাব, চায়ের দোকান, হোটেল আর টেলিভিশনের দোকানগুলো। প্রায় মিছিলের মতো ভিড় করে খেলা দেখেন পুরান ঢাকাবাসী। আর তখনই জুয়ায় মাতেন তারা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জুয়ার জমজমাট আসর দেখতে সরেজমিনে পুরান ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায় যাই । ভিড় দেখা গেল রওশন মহল কমিউনিটি সেন্টারের পাশে। সেখানেই শোনা গেল তাদের গুঞ্জন। বাজি খেলার শব্দগুলো সবার জানা থাকলেও কোড ভাষায় কথা বলছিলেন তারা। দলের নামের প্রথম দুই ইনিশিয়াল আর খেলোয়াড়ের নামের প্রথম অংশ আর সংখ্যায় চলছিল তাদের দরদাম।

আব্দুস সামাদ মামুনের কাছে জানতে চাইলাম, ‘কমিউনিটি সেন্টারে তো কোনো বিয়ে হচ্ছে না, তাহলে এতো ভিড় কেন?’ উত্তরে বললেন, এখানে বাজি খেলা হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর থেকেই ফোনে সবাই বাজি ধরে। আর সন্ধ্যায় সবাই একত্র হয় এখানে। প্রতিদিন রাতেই জমজমাট থাকে এই জায়গাটি। সবাই একসঙ্গে হই হুল্লোড় করে খেলা দেখতে। খেলা শেষে আবার অনেকে খাওয়ায়।

এবার অনুসন্ধানের পালা। আশপাশের ৪-৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ক্রিকেট নিয়ে জুয়া খেলার পুরান ঢাকার যতগুলো স্পট রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই মাহুতটুলি। এছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ক্লাব, পঞ্চায়েত ক্লাব অর্থাৎ যেখানে টিভি রয়েছে সেখানেই চলে জুয়ার আসর। আর এই জায়গাগুলো জমজমাট হয় সন্ধ্যার পর থেকে।

মাহুতটুলির মতো পুরান ঢাকার সাতরওজা, বেগমবাজার, চকবাজার, মোঘলটুলি, সদরঘাট, বাহাদুর শাহ পার্ক, গুলিস্তান, ইসলামপুর ও নবাববাড়িতে আসরের তথ্য উঠে এসেছে জাগো নিউজের অনুসন্ধানে। কথা হয় ইসলামপুরের এক কাপড়ের দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, দুপুর থেকে আমরা ফোনেই বাজি ধরি। সন্ধ্যার সময় এলাকায় গিয়ে খেলা দেখার সময়ও বাজি ধরি। পুরান ঢাকার মালিটোলা এলাকায় অনেকগুলো গলি আছে, যেখানে খেলা চলাকালীন রাস্তা বন্ধ করে খেলা দেখি।

কসাইটুলির পঞ্চায়েত কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় আরেক বাজিকরের সঙ্গে। আক্তার হোসেন নামে এই বাজিকর জানান, এখানে আসর বসলেও মূল জুয়ার আসর লোকচক্ষুর অন্তরালে হয়। আমি ফোনে বাজি ধরি, যাদের সঙ্গে কথা বলি তাদের অফিস কেরানীগঞ্জের কালিন্দীতে। আমি একদিন গিয়ে দেখা করে এসেছি। এরপর থেকে ফোনেই বাজি ধরি। মাঝে মাঝে গিয়ে টাকা নিয়ে আসি। অনেক সময় তারা বিকাশেও টাকা পাঠিয়ে দেয়। কালিন্দীর মতো জিঞ্জিরায়ও জুয়ার আসর বসে।

এদিকে যুগের পর যুগ জুয়ার আসরের কারণে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী। জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ নামে দেবিদাসঘাট এলাকার এক প্রবীণ সদস্য বলেন, এমনিতেই জুয়ার কারণে এলাকায় ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা বেশি। উইকেট পড়লেই তাদের শীষ আর তালিতে ঘরে থাকা দায়। তাদের উল্লাস উদযাপনের জন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করাও দায়। অনেক সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি ও মারামারি পর্যায়ে চলে যায়। এতে প্রায়ই আমরা আতঙ্কিত থাকি। পুলিশের উচিত দ্রুততম সময়ে এসব আসর বন্ধ করা।

এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘বিপিএলকে কেন্দ্র করে জুয়াড়িরা জুয়ায় যাতে না বসে সেজন্য নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। নিয়মিত টহলও চলছে।’

তবে পুলিশের এই টহলকে লোক দেখানো বলছেন এলাকার আরেক প্রবীণ কামরুল ইসলাম কিসমত। তিনি বলেন, তাদের উৎপাতে রাস্তায় চলা দায় হয়ে পড়েছে। তারা রিকশা আটকে রাস্তা বন্ধ করে রাখে। পুলিশ এদের ধরে নিয়ে গেলে কিছুটা বন্ধ হতো।জাগো নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই