সন্তানের সঙ্গে কি দূরত্ব বাড়ছে?
ডা. আবু সাঈদ শিমুল : আমাদের সন্তানরা মাঝেমধ্যে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যায়। কিন্তু খুব ছোটবেলা থেকেই যদি আমরা তাদের মানসিক বিকাশে খেয়াল রাখি, তবে এ দুশ্চিন্তা অনেক কমবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হলো ভাবের আদান-প্রদান।
শিশুর সঙ্গে পরিবারের ও প্রতিবেশীর ভাবের আদান-প্রদান করতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে যে আমাদের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলছি না। কোথাও গেলে সবার হাতে মোবাইল থাকে। কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ হচ্ছে না। আরেকটি হলো টেলিভিশন। ওটার আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান ফেলে, বাচ্চার কি এমন দায় পড়েছে যে সে আরেকজনের সঙ্গে কথা বলবে? এ ছাড়া কম্পিউটার, ভিডিও গেমস, আইপ্যাড তো রয়েছেই। এতে বাচ্চারা ভুলে যাচ্ছে আরেকজনের সঙ্গে ভাব করতে। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই আদান-প্রদানকে নিশ্চিত করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আশা করতে পারি না যে বাচ্চার আশাপ্রদভাবে মানসিক বিকাশ হচ্ছে।
আমরা মা-বাবারাও অনেক সময় টেলিভিশন বা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কে সিরিয়াল দেখে আর কে টক শো বা খেলা দেখে, এ বিতর্কে না গিয়ে এটা তো মানতেই হবে যে আমাদের শিশুদের আমরা সময় কম দিচ্ছি। এতে শিশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। করো সঙ্গে মিশতে পারে না। বাসায় কোনো অতিথি এলে এড়িয়ে চলে। নিকটাত্মীয়দের তো চেনেই না। একসময় পরিবার থেকেও হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। নেশা, অপরাধ এসবে জড়ানোও বিচিত্র নয়। তাই সবারই উচিত শিশুকে সময় দেওয়া।
এ ছাড়া বাচ্চাকে কোনো কিছু নিয়ে বকবেন না, তা হলে সে সত্য লুকাবে। পরে একসময় বিষয়টি যে ভুল, সেটা বুঝিয়ে বলুন। অন্যের সামনে বাচ্চার সমালোচনা করাও ঠিক নয়। বাচ্চার যত ক্ষুদ্র সাফল্যই হোক, তার প্রশংসা করুন। স্কুলে ভালো ফল করলে, ভালো ছবি আঁকলে বা গান গাইলেই যে প্রশংসা করতে হবে, তা নয়। খুব ছোট শিশু যদি নিজ হাতে ভাত খায়, গাছে পানি দেয়, গ্লাসে করে আপনার জন্য পানি নিয়ে আসে, তা-ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এসবকেও প্রশংসা করুন। ছুটির দিনে অনেক বেলা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে শিশুর সঙ্গে পার্কে যান বা সময় কাটান। সারা সপ্তাহে স্কুলে কী কী হলো জিজ্ঞেস করুন। ওর বন্ধুদের সম্পর্কে জানুন। বিকেল হলে বাইরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান। এভাবেই হয়ে উঠুন সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আর বন্ধু হয়ে শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলে আপনিও হবেন নিশ্চিন্ত।
লেখক : রেজিস্ট্রার, শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
মন্তব্য চালু নেই