সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশে বাবা-মায়ের করণীয়
প্যারেন্টিং শব্দটি বিচক্ষণতার সাথে জড়িত। শিশুদের জন্য কোন একটি নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একেক শিশুর জন্য একেক ধরণের মনোযোগ, ভালবাসার প্রকাশ এবং কাঠিন্য প্রয়োজন হয়। তারপরও সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু বিষয় আছে যেগুলো সম্পর্কে বাবা-মায়ের সচেতনতা জরুরি। আসুন আজ জেনে নিই ভালো বাবা-মা হওয়ার কিছু টিপস।
১। বিশেষ সুযোগকে উপলব্ধি করুন
আপনার ঘরে যে শিশু সন্তানটি এসেছে সে আপনার আনন্দের উৎস। কিন্তু শিশু আপনার সম্পত্তি নয়। সে কিভাবে জীবন উপভোগ করতে পারে, তাকে কীভাবে শিক্ষাদান করা যায় এবং কিভাবে সমর্থন দেয়া যায় এটা দেখাই আপনার কর্তব্য। তাকে আপনার ভবিষ্যতের বিনিয়োগ ভাববেন না।
২। সে যা হতে চায় তেমন হতে দিন
আপনার সন্তান জীবনে যা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ তাকে তা হতে দিন। আপনার জীবনের ধারণা অনুযায়ী তাকে ছাঁচে ফেলবেন না। আপনি যা করেছেন তা আপনার সন্তানকেও করতে হবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। আপনি জীবনে যা করার চিন্তাও করতে পারেননি আপনার সন্তানের উচিৎ তাই করা। তাহলেই পৃথিবী এগিয়ে যাবে।
৩। তাকে সত্যিকার ভালোবাসা দিন
সন্তানকে ভালবাসলেই তাকে সব কিছু দিতে হবে বলে ভুল বোঝেন অনেক পিতা-মাতাই। সে যা চাইবে তাই দেয়াটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। আপনি তাকে ভালবাসলে তার যা প্রয়োজন তাই তাকে দিবেন। সত্যিকারের ভালোবাসার ক্ষেত্রে আপনি অপ্রিয়ও হতে পারেন কারণ তার জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো হবে আপনি তাই করবেন।
৪। বড় হওয়ার জন্য চাপ দেবেন না
শিশু শিশুর মত থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাকে বড় হওয়ার জন্য তাড়া দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আপনি পরবর্তীতে চাইলেও আর তাকে তার শৈশব ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। তাই শিশু যখন শিশুর মত আচরণ করে সেটাই তাকে চমৎকার মানায়।
৫। তাকে জানতে বলুন শিখতে নয়
যখন একটি শিশু আসে তখন আপনি অনেক কিছু জানতে পারেন। আপনি আপনার শিশু সন্তানের সাথে আপনার অজান্তেই হাসেন, গান করেন, খেলেন, হামাগুড়িও দেন এবং এমন অনেক কিছুই করেন যা আপনি হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন। তাই এটি জীবন সম্পর্কে জানার সময়। আপনার সন্তানকেও জানতে বলুন শিখতে নয়। আপনার সন্তানের সাথে আপনার তুলনা করে দেখুন তো কে বেশি আনন্দ করতে সক্ষম? আপনি নাকি আপনার সন্তান? যদি আপনার সন্তান আপনার চেয়ে বেশি আনন্দ করতে সক্ষম হয় তাহলে জীবন সম্পর্কে কে বেশি পরামর্শ দিতে সক্ষম আপনি নাকি আপনার সন্তান সেটা চিন্তা করে দেখুন।
৬। সহযোগিতা করুন
আপনি যদি শিশুর সামনে ভয় ও উদ্বেগের উদাহরণ রাখেন তাহলে আপনি কীভাবে আসা করেন যে সে আনন্দে থাকবে? সেও একই জিনিস শিখবে। তাই আপনার উচিৎ আনন্দঘন ও ভালোবাসার পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৭। বন্ধুত গড়ে তুলুন
শিশুর উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। শিশুর কী করা উচিৎ তা না বলে নিজেকে সন্তানের স্তরে নিয়ে যান এবং তাহলেই সে আপনার সঙ্গে কথা বলতে সহজ হবে।
৮। সম্মান চাইবেন না
অনেক পিতা-মাতাই বলে থাকেন, “তোমার আমাকে সম্মান করা উচিৎ”। কারণ আপনি তার চেয়ে আগে এসেছেন, তার চেয়ে বড় এবং টিকে থাকার কিছু কৌশল আপনি জানেন। কিন্তু সন্তানের কাছে আপনার একমাত্র চাওয়া হচ্ছে ভালোবাসা তাই নয় কি?
৯। নিজেকে সত্যিকার অর্থে আকর্ষণীয় করে তুলুন
একটি শিশু অনেক কিছু দ্বারাই প্রভাবিত হয় যেমন- টিভি দেখে, প্রতিবেশীদের থেকে, শিক্ষকদের দেখে, স্কুল থেকে এবং আরো অনেক কিছু দ্বারা। তার কাছে যা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হবে সে সেটাই করতে চাইবে। অভিভাবক হিসেবে আপনার উচিৎ নিজেকে আকর্ষণীয় করার। আপনি যদি নিজেই আনন্দদায়ক হন, বুদ্ধিমান হন এবং চমৎকার ব্যক্তি হন তাহলে সে অন্য কারো সাহচর্য চাইবেনা। যেকোন কিছুর জন্যই সে আপনার কাছে আসবে এবং আপনার কাছে পরামর্শ চাইবে।
আপনি যদি আপনার সন্তানকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে চান তাহলে প্রথমে নিজেকে একজন শান্তিপূর্ণ ও প্রেমময় মানুষ হিসেবে রুপান্তরিত করুন।
মন্তব্য চালু নেই