সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে ক্যান্সার আর মৃত্যুকে মেনে নিলেন মা

২০০৮ সালের ঘটনা, একে অপরের জন্যেই তারা সৃষ্টি হয়েছেন বলে উপলব্ধি করলেন ম্যাক্স এবং লিজ। গল্পে গল্পে বেরিয়ে এলো, শৈশব থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত জীবনের সবকিছুতেই দারুণ মিল। সংসার পাতলেন এক সময়। কিন্তু এক দিন বিরল এক ক্যান্সার খুঁজে পাওয়া গেলো লিজ জয়েসের দেহে। চিকিৎসায় তা সেরেও গেলো। সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখলেন দুজনই। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুরতম পরিহাস, আবারো ওই ক্যান্সার ধরা পড়লো। তখন তার গর্ভে ১৩ সপ্তাহের সন্তান পরিপূর্ণতা পাচ্ছে। আরো ছয় সপ্তাহ পর একটি কন্যা শিশুর জন্ম দিয়ে মারা গেলেন লিজ।

ম্যাক্স এবং লিজ এর আগেই একটি ডকুমেন্টরির কাজ হাতে নিয়েছিলেন। ১৩টি পরিবারের ১৩ জন গর্ভবতী নারীকে নিয়ে ডকুমেন্টরির প্রস্তুতের পরিকল্পনা হয়। লিজের মৃত্যুর এই ভিডিও ফুটেজটি গোটা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

২০১০ সালের একদিন লিজের অনিরাময়যোগ্য সারকোমা ক্যান্সার ধরা পড়ে। আর সেদিনই ম্যাক্সের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেলেন। তবে ম্যাক্স জানার পরও সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেননি। খুব দ্রুত বিয়ে করে ফেললেন যেন অবস্থা খারাপ হওয়ার আগেই ভালো কিছু সময় কাটাতে পারেন দুজনই। কেমোথেরাপি নিতে শুরু করলেন লিজ।

চিকিৎসাকালীন সময় তার পাশে ছিলেন ম্যাক্স। জানালেন, লিজের ব্যথা এবং কষ্ট সহ্যের ক্ষমতার কোনো সীমা ছিল না। চিকিৎসা নিতে থাকলো লিজ। ২০১১ সালে বসন্তে চিকিৎসকরা জানালেন, ক্যান্সার দূর হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার কারণে তার দ্রুত মেনোপজ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, লিজ আর সন্তান নিতে পারবেন না।

দুই বছর পর বিস্ময় এবং আনন্দ ধরে রাখতে পারলেন না লিজ। স্বামীকে হতবাক করে দিয়ে জানালেন, তিনি গর্ভবতী। জীবনের সবকিছু যেন পরিপূর্ণতা পেল, বললেন ম্যাক্স। এই সন্তানটিকে গর্ভে ধরে প্রতিমুহূর্তে কি আনন্দেই না থাকতো লিজ।

গর্ভবতী থাকাকালীন সকালে নিয়মিত অসুস্থতা বোধ করতে থাকলেন লিজ। এটা কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলেই ভাবলেন দুজনই। একদিন পিঠে একটি অংশ একটু উঁচু ঠেকলো লিজের কাছে। ওই স্থানটিতেই আগেরবার ক্যান্সার হয়েছিল। আর দ্বিতীয়বারের মতো ক্যান্সার হওয়ার মাধ্যমে ভাগ্য তার নিষ্ঠুরতম আচরণ দেখালো।

সবকিছু নিয়ে লিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করতো। ক্যান্সারের কারণে স্বামী এবং স্বজনদের দারুণ কষ্ট দিয়েছেন বলে অপরাধবোধে ভুগতেন। কিন্তু সুস্থতার খবর এবং গর্ভধারণের মাধ্যমে সব যন্ত্রণার অবসান হয়েছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন।

গর্ভবতী হওয়ার পরই দুজন মিলে ডকুমেন্টরির কাজ হাতে নেন। এর মাধ্যমে নানাবিধ সমস্যায় আক্রান্ত গর্ভবতী নারীরা তাদের দশ মাসের এই সময়টাকে ধারণ করে রাখবেন। চল্লিশ সপ্তাহের একটি ডকুমেন্টরি।

কিন্তু সাড়ে ৩৩ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় এক এক্স-রে পরীক্ষায় ধরা পড়লো, সেই সারকোমা ক্যান্সার ফিরে এসেছে তার দেহে। আবারো চিকিৎসা শুরু করতে পারতেন লিজ। কিন্তু তাতে তার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে না। এমনটা হতে দিলেন না লিজ। সন্তানের জন্যে ক্যান্সার এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন মা। জানুয়ারির ২৩ তারিখে জন্ম নেয় কন্যা শিশু লিলি।

খুব দ্রুত ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ অবশেষে ক্যান্সারের কাছে হার মানতে হলো লিজকে। একই বছরের ডিসেম্বরে বের হয় সেই ডকুমেন্টরি ‘ফোরটি উইকস’। লিজ, ম্যাক্স এবং ছোট্ট লিলিকে ঘিরে যে ভালোবাসার গল্প রচিত হয়েছে, তার সঙ্গে এ পৃথিবীর অনেকেরই পরিচয় ঘটেনি।

আমেরিকার সারকোমা ফাউন্ডেশন মা দিবসে একটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে। সেখানে এই দূরারোগ্য ব্যধীর চিকিৎসায় তহবিল গঠন করা হবে। এই আয়োজনে সবাই নিউ ইয়র্কের রাস্তায় হাঁটবেন লিজের সম্মানে। লিজসহ বিশ্বের সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন সবাই। সূত্র : ফক্স নিউজ



মন্তব্য চালু নেই