সংসার ভাঙার ভয়ে স্তন ক্যান্সার লুকান নারীরা!

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ও মৃতের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। আর প্রতিবছর নতুন করে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের এক-চতুর্থাংশ চিকিৎসাসেবা নেন না। এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ধর্মীয় গোড়ামি ও কুসংস্কার। আছে শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবও। আবার সংসার ভাঙার ভয়েও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক নারী স্বামী কিংবা পরিবারের কাছে বিষয়টি লুকিয়ে থাকেন।

বিশ্বজুড়ে অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস আর ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ উপলক্ষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে ১৫ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মারা যায় প্রায় আট হাজার। ক্যান্সার হাসপাতালের ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা হাজার দেড়েকের মতো। বাকি হাসপাতালগুলোতে সব মিলিয়ে যায় চার হাজারের মতো। বাকি রোগীরা কোথায় যায়- এমন প্রশ্ন তুলে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘আক্রান্ত নারীদের সবাই এ অসুখের কথা বলছেন না। চিকিৎসার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন তারা। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে।’

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ হাজার ৮২২ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মৃত্যু হয় সাত হাজার ১৩৫ জনের। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১৬ শতাংশই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এর মধ্যে পুরুষ এক শতাংশ। ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের গড় বয়স ৪৩ বছরের বেশি হলেও অবিবাহিতরা এ ঝুঁকির বাইরে নন।

ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, শহর এলাকায় চিকিৎসাব্যবস্থা থাকলেও গ্রামে সচতেনতা ও চিকিৎসাব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। চিকিৎসা নিয়ে সমাজের ভুল ধারণা দূর করাটা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘অপরাজিতা সোসাইটি অ্যাগেইনেষ্ট ক্যান্সার’এর কোষাধ্যক্ষ তাহমিনা গফুর বলেন, সংসার ভাঙার ভয়ে অনেক নারী মরনব্যাধী এই অসুখের কথা বলার সাহস পায় না। নারীদেরকে এই ভয় জয় করতে হবে। শরীরের অন্য আর দশটা অসুখের মতো এটাও একটা অসুখ। চিকিৎসা করালে ক্যান্সার ভালো হয়-এই বোধ সবার জন্য জরুরি।’

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘দেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত সব রোগী চিকিৎসাসেবায় আসেন না। কারণ, নারীরা এ বিষয়ে কথা বলেন না। যেসব নারী এ বিষয়ে সচেতন নন, তারাই মূলত চিকিৎসার বাইরে থাকেন। তারা সময়মতো আমাদের কাছে এলে অবশ্যই চিকিসা দেওয়া সম্ভব। কারণ, বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই