সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনেককেই জিম্মী করে চাঁদা আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

এই চক্রটি বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের রুমে গিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছে। সম্মানহানীর ভয়ে অনেকেই নিয়মিত চাঁদা দিচ্ছেন বলে সূত্রে জানা যায়। আর যারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদেরকেই লাঞ্চিত করেছে এই চক্রটি। এমন পরিস্থিতিতে অফিসে এসে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বলে জানান এক কর্মকর্তা। সবশেষ গত ১৬ আগস্ট চাঁদা না দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীকে লাঞ্ছিত করে এই চাঁদাবাজ চক্রটি।

জানা যায়, এই চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তরের সেকশন অফিসার (গ্রেড-২)রাফিউল হাসান রাসেল। বিভিন্ন সময় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্চিত করাকালীন তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) শাহীন সর্দার, নিরাপত্তা বিভাগের কর্মচারী নুরুজ্জামান রুবেল (ভলকা রুবেল), শাহীন বেগ সহ আরও কিছু স্থানীয় চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের দেখা গেছে।

এই অপ্রতিরোধ্য চক্রটি এর আগেও কয়েকবার ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা যায়। গত বছরের ১৫ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার’স এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনকে বানচাল করতে নির্বাচন কমিশনার ও সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সহকারী পরিচালক আব্দুস সামাদ প্রধানকে লাঞ্চিত ও তার অফিস ভাংচুর করে । এরপর সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলে। তাদের সেই স্বসস্ত্র হামলায় প্রায় ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছিলেন। পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হলেও এই সন্ত্রাসী চক্রটির শাস্তি প্রদানে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনশন চলাকালীন তাদের উপর হামলা করে রাফিউল হাসান রাসেল ও ভলগা রুবেল বাহিনী। সেই রাতে আকস্মিকভাবে আক্রমন করে ৫ জন শিক্ষকসহ প্রায় ৩০ জনকে আহত করে অপ্রতিরোধ্য চক্রটি। এ হামলার ঘটনায় রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম বাদি হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে রংপুর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা কার্যকর না হওয়ায় গত ১ জুলাই রেজিস্টার দপ্তরে ঢুকে রেজিস্টারকে গালিগালাজ ও দপ্তরে তালা লাগায় এই চক্রটি।

গত ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শাহীনুর রহমানকে লাঞ্চিত করে এই চক্র। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন মতিউর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এতসব অপকর্মের পরও এই চক্রের সদস্যরা কীভাবে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করছে এমন প্রশ্ন এখন গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালযের এক সিনিয়র শিক্ষক জানান, ‘এই চক্রটির এমন বেপরোয়া হওয়ার মূল কারণ হল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দূর্বলতা।

তিনি বলেন, বর্তমান উপাচার্য নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে ও শিক্ষকদের আন্দোলন বন্ধে এই চক্রটিকে অর্থদানের মাধ্যমে শিক্ষকদের উপর হামলা করতে প্ররোচিত করেছেন।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশেই গত ডিসেম্বর মাসে এই চক্রটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে হামলা করেছিল বলেও মন্তব্য করেছেন ওই শিক্ষক।

তিনি আরও বলেন, ‘এসব তথ্য যাতে ফাঁস না হয় একারণে এই চক্রটি বারবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

ওই শিক্ষকের করা অভিযোগটি সত্য কিনা জানতে চাইলে বেরোবি রেজিস্টার মোরশেদ উল আলম রনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সন্ত্রাসী চক্রকে লালন করে না।’

বারবার ক্যম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনার পরও প্রশাসন কেন তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘যেহেতু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান, তিনি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।’



মন্তব্য চালু নেই