শ্রীমঙ্গলের মনিপুরী তাঁতবস্ত্র পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষন
সৌরভ আদিত্য, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা এখন পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল এখন দেশ-বিদেশ সব জায়গাতেই প্রসিদ্ধ। শ্রী আর মঙ্গলের মিলনের অপরূপ সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। এই এলাকার আবহাওয়া, মাটি-পানি-বাতাস, হাওর-নদী, বাগান-বাড়ি আর পাহাড়-টিলায় বেষ্টিত পর্যটন স্থান গুলো ক্রমেই যেন পর্যটকদের আরো মুগ্ধ করে তুলছে। শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী লেবু, আনারস এবং চায়ের পাশাপাশি এখানে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক ও কৃত্তিম সম্পদের সমাহার। এদের মধ্যে অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে মনিপুরী তাঁতবস্ত্র শিল্প। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের রামনগর মনিপুরী বস্তিটি এখন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় মূখরিত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মনিপুরী পোষাক পরিধান করা পর্যটকদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ফ্যাশন ও হয়ে উঠেছে। আর তাই প্রতিদিন কয়েকশত পর্যটক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে পছন্দসই পোষাক কিনতে এখানে আসেন।
মনিপুরী তাঁতবস্ত্র দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে একটি প্রধান আকর্ষন। মনিপুরী নারীদের নিপুণ হাতে গড়া পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রকমারী পোষাকগুলো যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিঃসন্দহে। কাপড়ের আঁচলে গাঁথা আর পরতে পরতে আঁকা রঙ-বেরঙের নকশাগুলো যেন সহসাই মনে করিয়ে দেয় মনিপুরী সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কথা।
তাই শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসে এই মনিপুরী তাঁতবস্ত্রের দিকে ঝুকতে হয় যে কাউকেই। আর সেজন্য যেতে হবে মনিপুরী পাড়ায়। এখানে রয়েছে দীপা, শর্মিলা, প্রীতি, বর্ণা, থিংগুজাম, মাঙান সহ নামে বেনামে ছোট-বড় প্রায় ১০/১২টি হ্যান্ডিক্রাফটস্ এর দোকান।
এ বস্তির প্রতিটি ঘরের নারীরা তাদের ঘরের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁত বুনে তৈরী করে থাকেন রকমারী পোষাক। এ পোষাক পাশ্ববর্ত্তী দোকানে কিংবা বাড়ির পুরুষরা শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন দোকানে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে থাকেন। অনেকে আবার কাপড় বুনে বাড়িতে রেখেই বিক্রি করে থাকেন। পাইকাররা এসব বাড়িতে এসে কাপড় সংগ্রহ করেন। মনিপুরী তাঁতবস্ত্র সমূহের মধ্যে রয়েছে থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, ফতুয়া, পাঞ্জাবী, চাঁদর, গামছা, শাল, ব্যাগ ইত্যাদি।
এর মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইন অনুযায়ী থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। শাড়ি ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, পাঞ্জাবী ও ফতোয়া ৩০০ থেকে ৮৫০ টাকা, চাঁদর ৩৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, গামছা ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, বিছানার চাঁদর ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, নকশীকাথা ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাদুর ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মনিপুরী বস্তির বাইরেও শ্রীমঙ্গল শহরের ষ্টেশন রোডের খাতুন সুপার মার্কেটে রযেছে বিশাল মনিপুরী হ্যান্ডিক্রাপ্ট এর দোকান।
বিশেষ করে শীতকালে মনিপুরী তাঁতবস্ত্রের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কারণ শীতে পুরুষ ও মহিলাদের অন্যতম ফ্যাশন্যবোল পোষাক হিসেবে মনিপুরী চাঁদর ও শাল দেশ ছেড়ে বিদেশেও সুখ্যাতি অর্জন করেছে। অন্যদিকে ভ্রমন পিপাষুরা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেশী ঘুরে বেড়ায় এই শীতকালেই।
আর স্থানীয় বাসিন্দাদের চেয়ে অধিক পরিমানে মনিপুরী পোষাক কিনে থাকেন পর্যটকরাই। তাই বৃহত্তর সিলেটের মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এখন নারী-পুরুষ সকলেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মনিপুরী পরিবার গুলোর মধ্যে এসময় দিন-রাত বিরামহীন প্রতিযোগীতায় চলে তাঁতের কাপড় বুননের কাজ। ঐতিহ্যের ধারায় মনের সপ্ন ফোঁটিয়ে তুলতে যেমন ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন মনিপুরী নারীরা তেমনি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তাঁতগুলোও। তাঁতের প্রতিটি সুতার ফাঁকে যেন লোকিয়ে আছে মনিপুরী জীবনের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
মন্তব্য চালু নেই